বারবার ‘দ্বন্দ্ব’, অভিযোগ গলসি ১ ব্লকে

সম্প্রতি ঢোলা গ্রামে বোমাবাজির ঘটনাতেও কোন্দলের ঘটনা সামনে আসে। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকাবাসী জানান, এলাকায় বিবদমান গোষ্ঠীর নেতা বলে পরিচিত স্থানীয় লোয়া-রামগোপাল পঞ্চায়েতের উপপ্রধান হাকিম মোল্লা ও গ্রামেরই তৃণমূল নেতা হাফিজুর রহমানের মধ্যে কোন্দলের জেরে ওই ঘটনা।

Advertisement

কাজল মির্জা

গলসি শেষ আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০০:১০
Share:

গলসিতে সম্প্রতি বোমাবাজিতে উড়ে গিয়েছে ঘরের চাল। —ফাইল চিত্র

২০১৪-র তুলনায় ২০১৯-এর লোকসভা ভোটে এই বিধানসভা এলাকায় বিজেপির ভোটপ্রাপ্তি অনেকটাই বেড়েছে। সেই ভোটবৃদ্ধির অনেকটাই গলসি ১ ব্লক থেকে। রাজ্যের শাসক দলের নিচুতলার কর্মীদের একাংশের ধারণা, এর অন্যতম কারণ এই ব্লকে তৃণমূলের অন্তর্দ্বন্দ্ব। সম্প্রতি ঢোলা গ্রামে বোমাবাজির ঘটনা সেই দ্বন্দ্বেরই ফল, দাবি তৃণমূলের স্থানীয় কর্মীদের একাংশের। তবে তৃণমূল নেতৃত্ব ‘দ্বন্দ্ব’-এর কথা সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছেন।

Advertisement

গলসি বিধানসভা এলাকায় রয়েছে কাঁকসার চারটি, গলসি ১-এর ন’টি ও গলসি ২-এর দু’টি পঞ্চায়েত। গত বিধানসভা ভোটে গলসিতে নিকটতম বাম প্রার্থীকে প্রায় ১০ হাজার ৭৭১ ভোটে হারান তৃণমূলের অলোক মাজি। কিন্তু ২০১৯-এর লোকসভায় বিজেপির তুলনায় তৃণমূল ৯,৬২১ ভোটে পিছিয়ে পড়ে। ২০১৬-র বিধানসভায় এই ব্লক থেকে তৃণমূল লিড পেয়েছিল প্রায় সাড়ে ১৭ হাজার ভোটের। এ বারের লোকসভায় তা দাঁড়িয়েছে, মোটে ৮০০-য়।

ভোটবাক্সে এই রক্তক্ষরণের কারণ হিসেবে দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলকেই দায়ী করছেন গলসি ১-এর তৃণমূল কর্মীদের একাংশ। তাঁদের দাবি, এলাকায় দলের ব্লক সভাপতি শেখ জাকির হোসেন ও যুব সভাপতি পার্থ মণ্ডল, দু’টি গোষ্ঠীতে বিভক্ত। এলাকার ‘প্রভাবশালী’ তৃণমূল নেতাদের বেশির ভাগই এই দুই শিবিরে বিভক্ত বলে দাবি তাঁদের।

Advertisement

আর এই ‘বিভেদের’ কারণেই একের পর এক কোন্দলের ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে বলে অভিযোগ। তৃণমূলের স্থানীয় কয়েকজন কর্মীই জানান, দুই শিবিরের অশান্তির জেরেই গত বছর ডিসেম্বরে ঘাগড়া গ্রামে ব্যাপক বোমাবাজির ঘটনা ঘটে। চলতি বছর মার্চে ফের অশান্তি হয় শিড়রাই গ্রামে। এই গ্রামেই স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধানও হামলার মুখে পড়েন বলে অভিযোগ ওঠে। এ ছাড়া জানুয়ারিতে উচ্চগ্রামে, ফেব্রুয়ারিতে রামপুর গ্রামেও অশান্তি বাধে। অশান্তির অভিযোগ ওঠে পারাজ, বোলপুরেও।

সম্প্রতি ঢোলা গ্রামে বোমাবাজির ঘটনাতেও কোন্দলের ঘটনা সামনে আসে। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকাবাসী জানান, এলাকায় বিবদমান গোষ্ঠীর নেতা বলে পরিচিত স্থানীয় লোয়া-রামগোপাল পঞ্চায়েতের উপপ্রধান হাকিম মোল্লা ও গ্রামেরই তৃণমূল নেতা হাফিজুর রহমানের মধ্যে কোন্দলের জেরে ওই ঘটনা। এলাকায় হাফিজুর তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি (গলসি ১) মহম্মদ মোল্লা এবং হাকিম ব্লকে দলের সংখ্যালঘু সেলের সভাপতি জাহির আব্বাস মণ্ডলের (সিপাই) ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। তৃণমূলের স্থানীয় কর্মীদের একাংশের দাবি, মহম্মদ এবং জাহির আবার যথাক্রমে যুব সভাপতি ও ব্লক সভাপতির অনুগামী হিসেবে এলাকায় পরিচিত।

কিন্তু কেন এই কোন্দল? তৃণমূলের স্থানীয় কর্মীদের একাংশের ধারণা, এর নেপথ্যে গ্রাম দখলের রাজনীতি যেমন রয়েছে, তেমনই, কোনও এক বিশেষ কারবার দখলের চেষ্টাও রয়েছে পুরো মাত্রায়। তবে এই ‘ধারণা’র কথা অস্বীকার করেছেন তৃণমূল নেতৃত্ব।

ব্লক সভাপতি শেখ জাকির হোসেনের দাবি, ‘‘লোকসভা ভোটের আগে গোষ্ঠী থাকলেও এখন আর কোনও গোষ্ঠী নেই।’’ যুব সভাপতি পার্থবাবুও বলেন, ‘‘এলাকায় কোনও গোষ্ঠী নেই। যদি কেউ কোন্দল করে দল নিশ্চয় ব্যবস্থা নেবে।” বিধায়ক অলোক মাজিও জানিয়েছেন, দল সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিজেদের মধ্যে মারামারি করলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে দল থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন