বদল: দাঁইহাট পুরসভা। নিজস্ব চিত্র
ছয়ে ছয়। পঞ্চায়েত ভোটের আগে জেলার সবকটি পুরসভা দখল করল তৃণমূল। পূর্ব বর্ধমানের বিরোধী পরিচালিত একমাত্র পুরসভা দাঁইহাটের চার জন সিপিএম কাউন্সিলর যোগ দিলেন তৃণমূলে। এই দলবদলের ফলে দাঁইহাট পুরসভার দখল করল শাসক দল। সিপিএমের যদিও অভিযোগ, লাগাতার হুমকি, ভীতি প্রদর্শন ও পুলিশ-প্রশাসনের একাংশকে কাজে লাগিয়েই এই দলবদল করানো হয়েছে।
২০১৫ সালে পুরসভা ভোটে দাঁইহাটের ১৪টি ওয়ার্ডের মধ্যে ন’টি সিপিএম, চারটি তৃণমূল এবং একটি বিজেপি জিতেছিল। তৃণমূল সূত্রের খবর, শুক্রবার মন্ত্রী তথা শাসক দলের জেলা পর্যবেক্ষক অরূপ বিশ্বাসের হাত ধরে শুক্রবার ৬, ৭, ১১ ও ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিএম কাউন্সিলর যথাক্রমে গীতা বন্দ্যোপাধ্যায়, সুজাতা বিশ্বাস, মামনি মাজি ও ধনঞ্জয় মণ্ডল শাসক দলে যোগ দিয়েছেন। ফলে এই পরিস্থিতিতে তৃণমূলের হাতে এল আটটি ওয়ার্ড। সিপিএম ও বিজেপি-র দখলে থাকছে যথাক্রমে পাঁচটি ও একটি ওয়ার্ড। তৃণমূলের জেলা নেতৃত্ব জানান, পুরআইন অনুযায়ী বর্তমান সিপিএমের পুরপ্রধানের বিরুদ্ধে আগামী মঙ্গলবার অনাস্থা আনা হবে। এলাকারই এক পুরনো তৃণমূল নেতা নতুন পুরপ্রধান হওয়ার দৌড়ে সবার আগে রয়েছেন বলে খবর।
কিন্তু কেন এই দলবদল? সিপিএমের অভিযোগ, হুমকি ও পুলিশকে দিয়ে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার চক্রান্ত করেই দাঁইহাটে ক্ষমতা দখল করেছে তৃণমূল। সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য অঞ্জন চট্টোপাধ্যায়ের অভিযোগ, ‘‘বৃহস্পতিবার রাতে কাউন্সিলর সুজাতার দেওরকে কাটোয়া থানা বিনা অভিযোগে ধরে নিয়ে গিয়ে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার ভয় দেখায়। গীতা ও মৃত্যুঞ্জয়কে ভয় ও অর্থের প্রলোভন দেখানো হয়েছে। আমাদের এক কাউন্সিলরের সুদপুরের বাড়ির বাইরে দু’দিন ধরে মোটরবাইক বাহিনী দাপিয়ে বেড়াচ্ছে।’’ একই অভিযোগ করেছেন পুরপ্রধান বিদ্যুৎবরণ ভক্তও। সিপিএমের জেলা সম্পাদক অচিন্ত্য মল্লিকের অভিযোগ, ‘‘এমন ‘জোর জবরদস্তি’র রাজনীতি নতুন নয়। গোটা রাজ্যের মতো এখানেও সেই ধারাতেই পুরসভা, পঞ্চায়েত দখল করল শাসক দল।’’ কাটোয়ার বিধায়ক তথা পুরপ্রধান রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের অবশ্য পাল্টা অভিযোগ, ‘‘অঞ্জন চট্টোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে এক কাউন্সিলরের বাড়ির সামনে তাণ্ডব চালানো হয়েছে।’’
যদিও দলবদল করা ওই কাউন্সিলরদের দাবি, রাজ্য জুড়ে উন্নয়নের কর্মকাণ্ডে সামিল হতেই স্বেচ্ছায় তাঁরা দল ছেড়েছেন। এর আগে রাস্তা সংস্কার, পানীয় জল সরবারহ-সহ নানা উন্নয়নমূলক কাজে পুরপ্রধান বিদ্যুৎবরণবাবু ‘সক্রিয়’ নন বলে বিক্ষোভ দেখিয়েছিল তৃণমূল। সেই প্রসঙ্গও এ দিন উঠে এসেছে। তৃণমূলের জেলা সভাপতি স্বপন দেবনাথও এ দিন বলেন, ‘‘উন্নয়নের জোয়ারে গা ভাসাতেই চার জন কাউন্সিলরের এই সিদ্ধান্ত। তাঁদের দলে স্বাগত জানাই।’’ নতুন পুরবোর্ড তৈরির পরে এলাকায় কলেজ, বাসস্ট্যান্ড তৈরি-সহ নানা বিষয়ে আশ্বাস দিয়েছেন তৃণমূল নেতৃত্ব।
অন্য একটি সূত্রের মতে, দাঁইহাটে সিপিএমের সংগঠন পরিচালনা নিয়ে কয়েক জন কাউন্সিলরের অন্দরে মতান্তর হয়। তাই এই দলবদল। তবে সিপিএম এই দাবি অস্বীকার করেছে।
তৃণমূলের একটি সূত্রের দাবি, এই দলবদল ঘটেছে মন্ত্রী অরূপবাবুর হাত ধরে। অরূপবাবু এই দলবদল নিয়ে বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নের কাজ দেখেই ওই চার জন আমাদের দলে আসার জন্য আবেদন জানিয়েছিলেন।’’