হেরিটেজ হোটেলের বাড়ি খুঁজছে প্রশাসন

প্রশাসন সূত্রের খবর, সংশ্লিষ্ট বাড়ির মালিকদের অনুমতি নিয়ে পর্যটন দফতর হেরিটেজ হোটেল গড়বে। এতে পর্যটনের সঙ্গে এলাকার অর্থনীতিরও বিকাশ ঘটবে।

Advertisement

সৌমেন দত্ত

বর্ধমান শেষ আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০১৯ ০০:৫৭
Share:

প্রতীকী ছবি।

ইতিহাসের গন্ধমাখা বাড়ি খুঁজতে নেমেছে জেলা প্রশাসন। কিন্তু গত চার মাসে গোটা জেলায় এমন বাড়ি মিলেছে মাত্র দু’টি।

Advertisement

প্রশাসনের দাবি, রাজ্য সরকারের পর্যটন দফতরের পরিকল্পনা অনুযায়ী, পুরনো আমলের ঘর, দালান রয়েছে এমন বাড়ি বেছে নিয়ে পর্যটকদের থাকার উপযুক্ত করে তোলা হবে। ওই ‘হেরিটেজ হোটেলে’ থেকে এলাকা ঘুরতে পারবেন পর্যটকেরা। গত ২৮ মে রাজ্যের পর্যটন সচিব অত্রি ভট্টাচার্য জেলাশাসককে চিঠি দিয়ে পূর্ব বর্ধমানে এমন একটি প্রকল্প নেওয়ার কথা জানিয়েছেন।

প্রশাসন সূত্রের খবর, সংশ্লিষ্ট বাড়ির মালিকদের অনুমতি নিয়ে পর্যটন দফতর হেরিটেজ হোটেল গড়বে। এতে পর্যটনের সঙ্গে এলাকার অর্থনীতিরও বিকাশ ঘটবে। সেই মতো এলাকা চিহ্নিত করে ঐতিহ্যবাহী ভবনের নাম পাঠানোর কথা বলা হয় স্থানীয় প্রশাসনকে। এর মাস দু’য়েক পরে ফের চিঠি দিয়ে পর্যটন সচিব জানান, ইতিহাস জড়িয়ে রয়েছে, এমন বাড়ির খোঁজ করতে হবে। সেই সঙ্গে প্রচুর ঘর ও জায়গা থাকাও বাধ্যতামূলক। শুধু তা-ই নয়, বাড়িটিকে যাতে ‘হেরিটেজ হোটেলে’ পরিণত করা যায়, তেমন পরিকাঠামোও থাকতে হবে। গত ৩০ অগস্ট পর্যটন দফতরের ডেপুটি সচিব জেলাশাসককে চিঠি দিয়ে বিশদ তথ্য পাঠানোর নির্দেশ দেন। ‘গুগল’ মানচিত্রে প্রস্তাবিত পুরনো ভবন বা জমিদার বাড়িকে চিহ্নিত করার কথাও বলা হয়।

Advertisement

পর্যটন দফতরের এক কর্তার দাবি, অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, পুরনো বাড়ির নিজস্ব ইতিহাস, তাকে ঘিরে গড়ে লোকমুখে গড়ে ওঠা নানা গল্প বেশ আকর্ষণীয় হয়। এ ছাড়া, ওই সব বাড়ি বা এলাকায় প্রাচীন কিছু নিদর্শন বা প্রত্মসামগ্রী থাকার সম্ভাবনা থাকে। বাড়ির গঠনশৈলিও হয় মনকাড়া। সব মিলিয়ে যার স্বাদ নিতে ছুটে আসতেই পারেন বহু মানুষ। কিন্তু অনেক সময়েই থাকার জায়গার অভাবে পর্যটকেরা আসতে চান না। ঐতিহ্য বজায় রেখে থাকার জায়গা করা গেলে সে সমস্যা মিটবে।

প্রশাসনের দাবি, বাড়িগুলিকে চিহ্নিত করে ইতিহাসবিদ, স্থাপত্য সংরক্ষণের বিশেষজ্ঞ, হোটেল ব্যবসায়ীদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করে কী ভাবে বাড়িগুলি সংস্কার করা হবে, সে বিষয়ে সুপারিশ করা হবে। জেলাশাসক বিজয় ভারতী প্রতিটি ব্লকে চিঠি দিয়ে ওই রকম বাড়ির খোঁজ দেওয়ার কথাও বলেছেন। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, আউশগ্রামের কালিকাপুরের জমিদার বাড়ি আর জামালপুরের চকদিঘি জমিদারবাড়ি ছাড়া, গত পাঁচ মাসে ব্লক থেকে পুরনো বাড়ি বা জমিদার বাড়ি নিয়ে কোনও তথ্যই জানাতে পারেননি বিডিওরা।

প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, কালিকাপুর জমিদার বাড়ির নিজস্ব ইতিহাস রয়েছে। জঙ্গলের ভিতর থাকা এই বাড়িতে নিয়মিত চলচ্চিত্রের শুটিং হয়। অমিতাভ বচ্চনও ওই এলাকায় ঘুরে গিয়েছেন। জামালপুরের চকদিঘির বাড়িটিতেও অন্তত ১০০টি সুসজ্জিত ঘর রয়েছে। এখানেও সত্যজিৎ রায় ‘ঘরে বাইরে’ সিনেমার শুটিং করে গিয়েছেন।

যদিও বর্ধমানের ইতিহাসবিদদের দাবি, এই দু’টি বাড়ি ছাড়াও ‘হেরিটেজ হোটেল’ করার মতো প্রচুর পুরনো বাড়ি রয়েছে জেলায়। বর্ধমানের ইতিহাস গবেষক সর্বজিৎ যশের দাবি, “বর্ধমান শহরের লক্ষ্মীনারায়ণ জিউ মন্দির, খণ্ডঘোষের কামালপুরের বসুবাড়ির মতো জেলার অন্তত আরও আটটি বাড়িকে ‘হেরিটেজ হোটেল’ করা যেতে পারে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন