কাষ্ঠশালীর প্রতিমা। নিজস্ব চিত্র।
আগের মতো রমরমা এখন আর নেই। কিন্তু পুরনো রেওয়াজ বজায় রেখেই এখনও দুর্গাপুজো আয়োজন করে চলেছে বেশ কিছু পরিবার।
পূর্বস্থলীর প্রাচীন পুজোগুলির অন্যতম মেড়তলার ভট্টাচার্য বাড়ির পুজো। এই পুজোয় দেবীর ভোগে দেওয়া হয় পান্তাভাত, বোয়াল মাছ, কাঁকড়া, গুগলি-সহ নানা পদ। পরিবার সূত্রে জানা যায়, পরিবারের আদিপুরুষ কালিশঙ্কর তর্কচুড়ামণি তন্ত্রসাধনায় খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। তিনিই এই পুজোর প্রবর্তন করেন। পরিবারের সদস্যদের দাবি, ৪০০ বছরের বেশি পুজো চলছে। আগে যে ঘরে পুজো হত, সেটি এখন নষ্ট হয়ে গিয়েছে। তবে সেখানে প্রতিষ্ঠিত বেদিতেই প্রতি বার আয়োজন করা হয় পুজোর। পরিবারের সদস্য দেবাশিস ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘পারিবারিক রেওয়াজ মেনে অর্ধরাতে সন্ধিপুজো বসে। ভাত, খিচুড়ি, চচ্চড়ির সঙ্গে নানা পদের মাছ, কাঁকড়া, গুগলি ভোগে নিবেদন করতে হয়। নবমীতে দেবীর ভোগে দেওয়া হয় পান্তাভাত।’’ প্রাচীন এই পুজোয় দেবীর সিংহের মুখ ঘোড়ার আদলে হয়।
এই পরিবারেরই আর একটি পুজো হয় কাছাকাছি চণ্ডীপুর গ্রামে। পরিবারের সদস্য শিখা ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘বহু বছর আগে পরিবারের বড় ছেলে কোনও কারণে এখানে চলে এসে দুর্গাপুজো শুরু করেন। এলাকায় অনেকে তাই এই পুজোকে বড় বাড়ির পুজো বলেন।’’ তিনি জানান, প্রতিদিন সকালে পুজো শুরু হয় দেবীকে মুড়ি, তেল, মাছভাজা দিয়ে। এ ছাড়া, বিভিন্ন দিনে ভোগে কাঁকড়া, পুঁইশাক, কচুরশাক, নটেশাক দিয়ে আমড়ার টক নিবেদন করা হয়।
বহু বছর ধরে পুজো হচ্ছে পূর্বস্থলী ১ ব্লকের দোগাছিয়ার রায়চৌধুরী পরিবারেও। এক সময়ে এই পরিবারে পাঁচটি দুর্গাপুজো হলেও, এখন তা দাঁড়িয়েছে তিনটিতে। পরিবারের সদস্য প্রদীপ রায়চৌধুরী জানান, দশভুজা মন্দিরে ঘট বসিয়ে প্রথমে পুজো হয়। এর পরে পুরোহিত দুর্গা মণ্ডপে পুজো শুরু করেন। দশমীর দিন পরিবারের সদস্যেরা সিঁদুর খেলেন। পারিবারিক এই পুজো ঘিরে এক সময়ে মেলা ও আদিবাসী নাচের আসর বসত। এখন সে রেওয়াজ ভেঙেছে।
পূর্বস্থলীর চুপি গ্রামের কাষ্ঠশালী নন্দন বাড়ির পুজো এ বার ৫৮ বছরে পা দিচ্ছে। পরিবার সূত্রে জানা যায়, রাধারানি নন্দন পুজোর প্রচলন করেন। পারিবারিক এই পুজোয় অষ্টমীতে কুমারীপুজার প্রচলন রয়েছে। নবমীতে বসে পঙ্ক্তি ভোজের আসর বসে। পরিবারের সদস্য উজ্জ্বল নন্দন বলেন, ‘‘করোনা পরিস্থিতিতে আগের বার পঙ্ক্তি ভোজ হয়নি। এ বার তা করার চেষ্টা হবে।’’