হুঁশ ফেরে না দুর্ঘটনায়, লেন ভাঙছেই ট্রাক

সোমবার দুপুর ১টা। মুচিপাড়া মোড় থেকে একটু এগিয়েই হঠাৎ লেন ভেঙে বাঁ দিক থেকে ডান দিকের রাস্তায় ঢুকে পড়ল একটি ট্রাক। প্রায় এক কিলোমিটার সে ভাবেই চলল সেটি।

Advertisement

সুব্রত সীট

দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ২৮ মার্চ ২০১৭ ০০:৪০
Share:

উল্টো-পথে: ফরিদপুরে ২ নম্বর জাতীয় সড়কে ভুল লেনেই যাতায়াত। ছবি: বিকাশ মশান

সোমবার দুপুর ১টা। মুচিপাড়া মোড় থেকে একটু এগিয়েই হঠাৎ লেন ভেঙে বাঁ দিক থেকে ডান দিকের রাস্তায় ঢুকে পড়ল একটি ট্রাক। প্রায় এক কিলোমিটার সে ভাবেই চলল সেটি।

Advertisement

দুপুর ২টো। পানাগড়-দুবরাজপুর রাজ্য সড়কের দোমড়ায় বাঁকের মুখে দেখা গেল, কে আগে যাবে সে নিয়ে লেন ভাঙার যেন প্রতিযোগিতা চলছে নানা ট্রাকের মধ্যে। ডিভাইডার না থাকা রাস্তায় উল্টো দিক থেকে আসা যানবাহনের কাছে তা বেশ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ছে। কিন্তু ট্রাক চালকদের হেলদোল নেই।

বিকাল ৩টে। দুর্গাপুরের ফরিদপুর এলাকায় জাতীয় সড়কে একটি ডাম্পার চলেছে উল্টো পথে। একটু এগোতেই দেখা গেল, মালবোঝাই ছোট গাড়িও যাচ্ছে সে ভাবেই। তার কান ঘেঁষেই ছুটে চলেছে উল্টো মুখে যাওয়া নানা গাড়ি, বাস।

Advertisement

দুর্ঘটনার বিরাম নেই। অথচ ট্রাফিক আইন মেনে চলার চেষ্টাও নেই লরি, ট্রাক, ডাম্পার, ট্যাঙ্কারের। গত সপ্তাহ দুয়েকে জাতীয় ও রাজ্য সড়কে একের পর এক দুর্ঘটনায় প্রাণ গিয়েছে বেশ কয়েক জনের। ১৪ মার্চ পানাগড়ে লেন ভাঙা লরির সঙ্গে মুখোমুখি বাসের ধাক্কায় মৃত্যু হয় তিন জনের। আহত হন প্রায় ৩০ যাত্রী। সে দিনই পানাগড়-দুবরাজপুর রাজ্য সড়ক থেকে পানাগড় বাইপাসে ওঠার মুখে নিয়ন্ত্রণ হারানো লরির ধাক্কায় মৃত্যু হয় দুই ভাইয়ের। পর দিনই রাজবাঁধের কাছে ট্রাকের ধাক্কায় মারা যান মোটরবাইক আরোহী এক শিক্ষিকা। ২২ মার্চ বর্ধমানের রথতলায় গরম পিচের ট্যাঙ্কার গাড়ির উপরে উল্টে যাওয়ায় মৃত্যু হয়েছে একই পরিবারের সাত জন। রবিবার ভোরে কাঁকসার ধোবারুর কাছে ট্রাকের সঙ্গে গাড়ির মুখোমুখি ধাক্কায় মৃত্যু আট যুবকের। সে দিনই ভেদিয়ার অবন সেতুর কাছে ট্রাকের ধাক্কায় মৃত মঙ্গলকোটের এক মোটরবাইক আরোহী।

কেন এই পরিস্থিতি? দুর্ঘটনার কারণ খতিয়ে দেখে প্রাথমিক ভাবে পুলিশ-প্রশাসন একটি বিষয়ে একমত, লরি, ট্রাক বা ট্যাঙ্কারের গাফিলতিই বেশির ভাগ দুর্ঘটনায় দায়ী। সোমবার ২ নম্বর জাতীয় সড়ক, পানাগড়-দুবরাজপুর রাজ্য সড়কে বেশ কিছু জায়গা ঘুরে দেখা যায়, যেখানে ট্রাফিক পুলিশ বা সিভিক ভলান্টিয়াররা যান নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে আছেন, সেখানে ট্রাক, ট্যাঙ্কারগুলি চলছে নিয়ম মেনেই। কিন্তু যেখানেই পুলিশ নেই, নিয়ম ভাঙা হচ্ছে ইচ্ছে মতো। গতির কোনও সীমা নেই, ট্রাফিক বিধি মানারও বালাই নেই। গত কয়েক দিনের দুর্ঘটনার খতিয়ান দেখে আতঙ্কে ভুগছেন ছোট গাড়ি বা মোটরবাইকের চালকেরাও।

ট্রাক, ট্যাঙ্কারের চালকদের দাবি, প্রধান সড়ক থেকে পাশের রাস্তায় নামার উপযুক্ত ব্যবস্থা না থাকায় অনেক সময়েই অন্য উপায় নিতে হয়। জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ জানান, রাস্তার সম্প্রসারণ চলছে। সম্পূর্ণ হলে সমস্যা মিটে যাবে। রবিবার রাজ্যের ট্রাফিক আইজি মনোজ বর্মা বর্ধমানের রথতলা ও কাঁকসার দুর্ঘটনাস্থল ঘুরে দেখে জানান, আধুনিক ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা গড়ার পরিকল্পনা হয়েছে। ট্রাফিক বিভাগের দুর্গাপুরের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘পরপর দুর্ঘটনার পরে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। আধুনিক ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা গড়া হয়ে গেলে লরি, ট্রাকের উপরে নজরদারি ও নিয়ন্ত্রণ সহজ হবে। দুর্ঘটনার হারও কমবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন