কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় এবং রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস।
ফের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বনাম রাজ্যের মন্ত্রী। এ বার উন্নয়নের প্রশ্নে তরজায় জড়ালেন আসানসোলের সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় এবং রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। মঙ্গলবার বাবুল অভিযোগ করেন, উন্নয়নের কাজে সহযোগিতা করছে না রাজ্য প্রশাসন। উল্টো দিকে, বুধবার আসানসোলে এসে অরূপবাবু সাংসদ তাঁর নিজের এলাকায় কী কাজ করেছেন, তা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন।
মঙ্গলবার আসানসোলে এসে বাবুল অভিযোগ করেন, ‘‘প্রশাসন, রাজ্যের মন্ত্রী, বিধায়ক কেউই আমাকে সাহায্য করছেন না। উল্টে কাজ করতে গেলে বাধা দিচ্ছেন। ফলে আশানরূপ উন্নয়ন করতে পারছি না। আদতে ক্ষতি হচ্ছে আসানসোলেরই।’’ নতুন বছরের গোড়ায় অন্ডাল থেকে রুনাকুড়াঘাট পর্যন্ত ৪২ কিলোমিটার রাস্তা ও অন্ডাল মোড় থেকে দক্ষিণ কেন্দ্রা হয়ে পাণ্ডবেশ্বর মোড় পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার রাস্তাকে জাতীয় সড়কে উন্নীত করা, পাঁচটি ফুট ওভারব্রিজ তৈরি-সহ নানা বিষয়ে নিজের পরিকল্পনার কথা জানান কেন্দ্রীয় মন্ত্রী।
কিন্তু এর পরেই একাধিক প্রকল্পের কাজ ‘থমকে’ কেন রয়েছে, সেই প্রসঙ্গটি তোলেন সাংসদ। আসানসোলের কুমারপুরে জিটি রোডে রেললাইনের উপরে বছর খানেক আগে সেতুর শিলান্যাস হয়। কিন্তু রাজ্য সরকারের বাধায় সে কাজ শুরু করা যায়নি, অভিযোগ বাবুলের। তাঁর দাবি, ‘‘রাজ্যের পূর্ত দফতর আপত্তি জানিয়ে বলে, সাত মিটার সেতুর অনুমতি মিলবে না। সেতু ১১ মিটার চওড়া করা হলে অনুমতি দেওয়া হবে।’’ মন্ত্রীর দাবি, রেল ও সেল যৌথ ভাবে সেতুটি ১১ মিটার করারই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। নতুন বছরের গোড়ায় এই কাজ শুরু হবে বলে দাবি সাংসদের।
বুধবার আসানসোলে এসে বাবুলকে লক্ষ করে পাল্টা অভিযোগ করেন রাজ্যের ক্রীড়া ও যুবকল্যাণ দফতরের মন্ত্রী অরূপবাবুব। তাঁর অভিযোগ, ‘‘নিজের সাংসদ এলাকার উন্নয়নে উনি কী করেছেন, তাইই পরিস্কার করে বলতে পারেন না। গত তিন বছরে সাংসদ তহবিলের ১৫ কেটি টাকায় কী কাজ করেছেন, তার হিসেব দিন। যাঁরা কাজ করতে পারেন না, তাঁরাই এ সব বলেন।’’ বাবুলের অবশ্য দাবি, ‘‘নিজের এলাকায় ১৯ কোটি টাকার কাজ করিয়েছ।’’
বাবুল এবং রাজ্য প্রশাসনের নানা নেতা-মন্ত্রীর একাধিক বার অতীতে তরজায় জড়িয়েছেন। দুর্গাপুর ব্যারাজে বিপত্তি, পানাগড় বাইপাসের উদ্বোধন, সাংসদ মেলার আয়োজন-সহ নানা বিষয়ে বাবুলের সঙ্গে তরজায় জড়াতে দেখা গিয়েছে রাজ্যের শাসক দলের নেতা, মন্ত্রীদের। রাজনৈতিক মহলের মতে, এ বার সেই তালিকায় সংযোজন বাবুল-অরূপ তরজা।
কিন্তু উন্নয়নের প্রশ্ন নিয়ে হঠাৎ তরজা কেন? জেলার রাজনৈতিক মহলের মতে, ২০১৪-র লোকসভা ভোটে বিজেপি-কে হাত উপুড় করে ভোট দিয়েছিলেন ভোটারেরা। কিন্তু তার দু’বছরের মাথায় ২০১৬-র বিধানসভায় সেই ছবি দেখা যায়নি। এখন আর কিছু দিন পরেই পঞ্চায়েত এবং ২০১৯-এ লোকসভা ভোট। তাই ভোট-মরসুম যত ঘনিয়ে আসছে, ততই জেলার ভোটারদের মধ্যে উন্নয়নের ‘কাজ’ সত্যিই কতখানি হয়েছে, তা জানানোটা দরকার দু’দলের পক্ষেই। তাই দুই নেতার এমন তরজা স্বাভাবিক বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।