ব্লক সভাপতি বদলের পরেই অশান্তি, জখম ৫

দলের ব্লক সভাপতি বদলের পর থেকে হাওয়া গরম হতে শুরু করেছিল। বাধছিল গোলমালও। রবিবার তৃণমূলের দু’টি গোষ্ঠীর মধ্যে অশান্তি চরমে উঠল জামুড়িয়ায়। পাথরচূড় গ্রামে সংঘর্ষে মোট পাঁচ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বলে দু’পক্ষের নেতাদের দাবি। যদিও পুলিশ জানায়, কেউ গুলিবিদ্ধ হয়নি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

জামুড়িয়া শেষ আপডেট: ২৯ অগস্ট ২০১৬ ০১:৫৭
Share:

হাসপাতালে জখম। —নিজস্ব চিত্র।

দলের ব্লক সভাপতি বদলের পর থেকে হাওয়া গরম হতে শুরু করেছিল। বাধছিল গোলমালও। রবিবার তৃণমূলের দু’টি গোষ্ঠীর মধ্যে অশান্তি চরমে উঠল জামুড়িয়ায়। পাথরচূড় গ্রামে সংঘর্ষে মোট পাঁচ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বলে দু’পক্ষের নেতাদের দাবি। যদিও পুলিশ জানায়, কেউ গুলিবিদ্ধ হয়নি। স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রের তরফেও জানানো হয়, সংঘর্ষে আহত পাঁচ জনকে ভর্তি করানো হয়েছিল। তবে তাঁদের কারও গুলি লাগেনি।

Advertisement

তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, বিধানসভা ভোটে জামুড়িয়া কেন্দ্র থেকে হেরে যান দলের আসানসোল জেলা সভাপিত ভি শিবদাসন। সেই হারের কারণ হিসেবে দলের অন্দরে উঠে আসে গোষ্ঠীকোন্দলের ব্যাখ্যা। উচ্চ নেতৃত্বের নির্দেশে শিল্পাঞ্চলের নানা কমিটির মতো জামুড়িয়ার দু’টি ব্লক কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়। তার পরে এলাকায় দলের নানা সভাতেও ডাক পাচ্ছিলেন না আগের ব্লক সভাপতি-সহ কিছু নেতা। সপ্তাহখানেক আগে উচ্চ নেতৃত্বের অনুমোদন হয়ে আসার পরে শিল্পাঞ্চলের নতুন ব্লক সভাপতিদের নাম ঘোষণা হয়। জামুড়িয়ার দু’টি ব্লকেই নতুন সভাপতি বাছা হয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, জামুড়িয়া ২ ব্লকে তাপস চক্রবর্তীকে সরিয়ে মুকুল বন্দ্যোপাধ্যায়কে সভাপতি করার পর থেকেই গোলমাল শুরু হয়েছে। তাপসবাবুর অনুগামী কর্মীদের অভিযোগ, মুকুলবাবুর গোষ্ঠীর কিছু লোকজন এলাকায় ঘুরে-ঘুরে হুমকি দেওয়া শুরু করে। তাপসবাবুর যেখানে বাড়ি, সেই হিজলগড়ায় একটি ক্লাব ও গ্রন্থাগার পরিচালনার দায়িত্ব দখল করে নেওয়া হয়। একটি কারখানার জলপ্রকল্পের পাইপলাইন পাতা নিয়ে পাথরচূড় গ্রামের বাসিন্দারা আপত্তি তুলেছিলেন। আগে এলাকায় উন্নয়নমূলক কাজ করে দিতে হবে, কারাখানা কর্তৃপক্ষকে জানানো গ্রামবাসীর একাংশের এই দাবি তাঁরা সমর্থন করেছিলেন বলে তাপস-অনুগামীদের দাবি। তাঁদের অভিযোগ, মুকুল-ঘনিষ্ঠ কর্মীরা কারখানা কর্তৃপক্ষের পাশে দাঁড়ানোর নামে দলেরই কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করেছেন। এ সব নিয়েই গোলমাল পাকছিল।

Advertisement

দলে তাপসবাবুর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত তৃণমূল কর্মী দীপক মণ্ডলের অভিযোগ, ‘‘সকালে মুকুল-গোষ্ঠীর জনা পঞ্চাশ লোক পিস্তল হাতে এসে আমাদের বাপি মণ্ডল ও সঞ্জয় মণ্ডলের উপরে চড়াও হয়। বাপির পায়ে গুলি লাগে। ওরা এলাকায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। আমরা ভয়ে গ্রামের বাইরে যেতে পারছি না। তাই অভিযোগও করতে পারছি না।’’ সঞ্জয় মণ্ডলের দাবি, মারধর করার পরে বীরভূম থেকে দুষ্কৃতী এনে শায়েস্তা করার হুমকি দেওয়া হয়েছে তাঁদের। আহত বাপিবাবুকে বাহাদুরপুর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে বলে দীপকবাবু দাবি করেন।

নতুন ব্লক সভাপতি মুকুলবাবুর গোষ্ঠীর নেতা-কর্মীদের পাল্টা দাবি, তাপসবাবু পদ হারানোয় সেই ক্ষোভে তাঁর ছেলে কৌস্তভ চক্রবর্তীর নেতৃত্বে বোমা-গুলি নিয়ে হামলা হয়েছে। মুকুলবাবুর অভিযোগ, ‘‘ওদের ছোড়া গুলিতে গ্রামের চার জন আহত হয়েছেন। তাঁদের বাহাদুরপুর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘আমরা নতুন কমিটির কাজ নিয়ে ব্যস্ত। মারামারি করার সময় নেই। পদ হারানোর দুঃখে দলের কিছু লোকের মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে। তারাই বাইরে থেকে লোক নিয়ে এসে গোলমাল পাকাচ্ছে। পুলিশ ব্যবস্থা নিচ্ছে।’’

তাপসবাবুর পাল্টা বক্তব্য, “বিধানসভা ভোটে হিজলগড়া গ্রামে বিজেপির হয়ে কাজ করেছেন গৌরীশঙ্কর মণ্ডল। মুকুল সভাপতি হয়েই তাঁকে হিজলগড়া অঞ্চল কমিটির সভাপতির দায়িত্ব দিয়েছে। আমাদের পক্ষে যাঁরা থাকবেন, তাঁদের নাকি মারতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আমি দলের উচ্চ নেতৃত্বকে পুরো বিষয়টি জানিয়েছি।’’

বাহাদুরপুর ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের বিএমওএইচ রাজেশচন্দ্র সাহা অবশ্য গুলিবিদ্ধ অবস্থায় কারও ভর্তি হওয়ার কথা মানতে চাননি। তিনি বলেন, ‘‘পাঁচ জনকে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আনা হয়েছিল। কেউ গুলিবিদ্ধ হননি। সবার চোট-আঘাত আছে। এক মহিলার হাতে দু’টি সেলাই করতে হয়েছে। বাকি চার জনকে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।’’ পুলিশ জানায়, সন্ধে পর্যন্ত কোনও অভিযোগ হয়নি। নজরদারি চালানো হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন