দৃষ্টান্ত ১: ওয়ার্ড নম্বর ১, হোল্ডিং নম্বর ৫০২, ছিল ৩৬.৯০ টাকা। বেড়ে হয়েছে ২৩১৫.২৫ টাকা।
দৃষ্টান্ত ২: ওয়ার্ড নম্বর ৭, হোল্ডিং নম্বর ৯৭, ছিল ৮৭.৪৫ টাকা। বেড়ে হয়েছে ১৬৮৪.৯৫ টাকা।
বর্ধমান পুরসভার তথ্যই বলছে, এক ধাক্কায় লাফিয়ে বেড়েছে সম্পত্তিকর। তা জেনে চড়তে শুরু করেছে ক্ষোভের পারদ। কর কমানোর জন্য প্রতিদিনই আবেদন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। পুরসভা সূত্রে জানা যায়, শহরে প্রায় ৫৪ হাজার বাড়িতে সম্পত্তি কর নির্ধারণের জন্য চিঠি পৌঁছানোর কাজ শুরু হয়েছে। এর মধ্যেই সাড়ে তিন হাজার বাড়ির মালিক সম্পত্তি কর বেশি হয়েছে বলে আপত্তি জানিয়েছেন।
বাসিন্দাদের ক্ষোভের কথা একেবারে উড়িয়ে দেননি পুরপ্রধান স্বরূপ দত্ত। তিনি বলেন, “সম্পত্তি করের পুনর্মূল্যায়ন করেছে রাজ্যের ভ্যালুয়েশন বোর্ড। আবেদনকারীদের বক্তব্য শুনে ফের পুনর্মূল্যায়ন করার জন্য বোর্ডের কর্তাদের কাছে অনুরোধ করা হয়েছে।”
বৃদ্ধির হার দেখে চোখ কপালে উঠেছে অনেকেরই। সিপিএমের অভিযোগ, নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করেই সম্পত্তি কর নির্ধারণ করা হয়েছে। সে জন্যই এই অস্বাভাবিক বৃদ্ধি। সিপিএমের বর্ধমান শহর জোনাল কমিটির সম্পাদক তাপস সরকারের কথায়, “মানুষের উপরে পুরকরের জন্য অতিরিক্ত চাপ তৈরি হয়েছে। তাঁরা ছুটে আসছেন। আমরাও আন্দোলন সংগঠিত করছি।”
বর্ধমান পুরসভা সূত্রে জানা যায়, প্রতি পাঁচ বছর অন্তর সম্পত্তি কর নির্ধারণ করার প্রয়োজন। সে জন্য পশ্চিমবঙ্গ ভ্যালুয়েশন বোর্ডকে চিঠি দিয়ে সম্পত্তিকর নির্ধারণ করার জন্য বলতে হয়। রাজ্যে সরকার পরিবর্তনের আগে আগে আর শহরের সম্পত্তি কর নির্ধারণে উদ্যোগী হয়নি তৎকালীন বাম পরিচালিত পুরসভা। পুরসভার এক আধিকারিক বলেন, “২০১১ সালে বামেরা ভোটের আগে সম্পত্তি কর নির্ধারণ করার ঝুঁকি নিতে পারেনি। তবে তৃণমূল ২০১৩ সালে বর্ধমান পুরসভায় আসার পর থেকেই সম্পত্তি কর পুনর্মূল্যায়নের চেষ্টা করে আসছিল।”
পুরসভা সূত্রে জানা যায়, সম্পত্তি কর পুনর্মূল্যায়নের জন্য ২০১৪ সালে কাজে নামে পশ্চিমবঙ্গ ভ্যালুয়েশন বোর্ড। ২০১৬ সালে পুনর্মূল্যায়নের রিপোর্ট করে পুরসভায় পাঠানো হয়। সেই রিপোর্টে থাকা সম্পত্তি করের নতুন হিসেব লিখিত ভাবে বাড়িতে পাঠাচ্ছে পুরসভা। সেই চিঠি হাতে পেয়েই আঁতকে উঠছেন বাসিন্দারা। পুরবাসী নির্মাল্য মুখোপাধ্যায় থেকে আজবা সামদের দাবি, “দশ বছরে বাড়ির অবস্থা খারাপ হয়েছে। কিন্তু সম্পত্তি কর বেড়েছে ৩০০ থেকে ৭৫০ গুণ। ভাবা যায়!” পুরসভার তথ্যই বলছে,
এ রকম অস্বাভাবিক বৃদ্ধির কারণ কী? ভ্যালুয়েশন বোর্ডের কর্তারা জানান, জমির দাম বৃদ্ধি থেকে এলাকার সামগ্রিক উন্নয়ন, সম্পত্তি বাণিজ্যিক ভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে কি না, সে সবই পুনর্মূল্যায়নের সময় দেখা হয়। পুরসভার তরফে দাবি, এ বছর অনেক নিয়ম-নীতি মেনে পুনর্মূল্যায়ন করা হয়েছে। ২০০৬ সালের সম্পত্তি কর মূল্যায়নের পর পুর সদস্যরা নিজেদের খুশি মতো কমানোর সুযোগ পেয়েছিলেন। এখন তাঁরাই সম্পত্তি কর বেড়েছে বলে দাবি করছেন। ২০০৯ সালে হাইকোর্টের রায়ের পর সম্পত্তি কর কমানোর সুযোগও পুর সদস্যদের হাতে নেই।