আয় বেড়েছে অনেকটা। তাই জলের সমস্যা মেটানো ও বস্তি এলাকার উন্নয়নের উপরে এ বার বরাদ্দ বাড়ল দুর্গাপুরে।
সম্প্রতি দুর্গাপুর পুরসভায় বাজেট পেশ হয়েছে। সেখানে গত বারের তুলনায় নতুন অর্থবর্ষে প্রায় ৯৮ লক্ষ টাকা বেশি খরচ ধরা হয়েছে। গত তিন বছরের তুলনায় এ বার আয় অনেকটাই বেড়েছে বলে জানানো হয়েছে। পুরসভার ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিএম কাউন্সিলর শিবশঙ্কর চট্টোপাধ্যায় অবশ্য দাবি করেন, ‘‘সাধারণ মানুষের চাহিদার সঙ্গে এই বাজেটের কোনও সম্পর্ক নেই।’’
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, নতুন অর্থবর্ষে পুরসভার খরচ ধরা হয়েছে ৩০৫ কোটি ৬৯ লক্ষ টাকা। এর বেশ কিছুটা ধরা হয়েছে জল দফতরের জন্য। গত বছর জল দফতরে বরাদ্দ ছিল প্রায় ১৪ কোটি টাকা। নতুন বাজেটে তা বেড়ে হয়েছে ১৯ কোটি ২৭ লক্ষ টাকা। দুর্গাপুর পুর এলাকার বিভিন্ন প্রান্তে এমনিতেই পানীয় জলের বেশ সমস্যা রয়েছে। গ্রীষ্মের শুরুতে তা চরমে ওঠে। পানীয় জলের জোগান দিতে হিমশিম হন পুর কর্তৃপক্ষ। তাঁদের দাবি, বরাদ্দ বাড়ানোর ফলে সেই সমস্যা অনেকটাই কমবে। যে সব এলাকায় পানীয় জলের সমস্যা রয়েছে সেগুলিকে বিশেষ ভাবে গুরুত্ব দেওয়া হবে বলে পুরসভার তরফে জানানো হয়েছে।
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, দুর্গাপুরের বেশ কিছু এলাকা আশপাশের তুলনায় উঁচু। সেখানে জলের যে পাইপলাইন পাতা হয়েছে তা অনেক ক্ষেত্রেই ঠিক ভাবে হয়নি। এর ফলে সেই সব জায়গায় জল পৌঁছনো নিয়ে সমস্যা থেকেই গিয়েছে। এই সমস্যা মেটানোর চেষ্টা করা হচ্ছে বলে পুরসভার তরফে জানানো হয়েছে।
জলের জন্য বরাদ্দ বাড়ানোর পাশাপাশি দারিদ্র উন্নয়ন তহবিলেও বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। নতুন অর্থবর্ষে এই তহবিলে বরাদ্দ করা হয়েছে ১৩ কোটি ১০ লক্ষ টাকা, যা গত বছর ছিল ১০ কোটি ৪৩ লক্ষ টাকা। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, বিভিন্ন বস্তি এলাকার সামগ্রিক উন্নয়নে এই টাকা খরচ করা হবে। ওই সব এলাকায় কমিউনিটি শৌচাগার, রাস্তা, নিকাশি, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, পানীয় জল সরবরাহ-সহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে ব্যবহার করা হবে।
এ বারের বাজেটে সব থেকে বেশি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে পুরসভার সামগ্রিক পরিকাঠামো উন্নয়নে। ওই খাতে বরাদ্দ হয়েছে ১৫৪ কোটি ৬০ লক্ষ টাকা। গত বার যা ছিল ৬৭ কোটি ৫ লক্ষ টাকা। সুস্থ নাগরিক পরিষেবার উপর জোর দেওয়ার জন্যই এই খাতে বেশি বরাদ্দ করা হয়েছে বলে পুরসভার তরফে জানানো হয়েছে। গত তিন অর্থবর্ষের তুলনায় পুরসভার আয়ও এক ধাক্কায় অনেকটা বেড়েছে বলে জানান পুর কর্তৃপক্ষ। ২০১২-১৩ বর্ষে আয় ছিল ১২৭ কোটি ১৫ লক্ষ টাকা। সেখানে ১৪-১৫ অর্থবর্ষে আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ২২২ কোটি ২৭ লক্ষ টাকা ধরা হয়েছিল। তা পূরণ হয়েছে বলেই জানাচ্ছেন পুর কতৃর্পক্ষ। এ বার আয়ের লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ৪১ কোটি টাকা বাড়ানো হয়েছে। পুর কর্তৃপক্ষের আশা, তা পূরণ হয়ে যাবে।
পুরসভার সিপিএম কাউন্সিলর শিবশঙ্করবাবু যদিও বলছেন, ‘‘কিছু কিছু ক্ষেত্রে বরাদ্দ আরও বাড়ানো উচিত ছিল।’’ তবে সেগুলি কোন ক্ষেত্র তা এখনই জানাতে পারেননি তিনি। তাঁর বক্তব্য, ‘‘গোটা বাজেট নিয়ে আলোচনার পরে আমরা আন্দোলনে নামব।’’ মেয়র অপূর্ব মুখোপাধ্যায় অবশ্য বলেন, ‘‘এ বারের বাজেট উন্নয়নমুখী। আশা করি, সামনের দিনে নাগরিকদের আরও ভাল পরিষেবা দেওয়া যাবে।’’