শৌচাগারেই গুদাম, ক্ষোভ

গত আর্থিক বছরের মধ্যে জেলার প্রতিটি পঞ্চায়েতকে ‘নির্মল’ করার উদ্যোগ নিয়েছিল বর্ধমান জেলা প্রশাসন। কিন্তু রাজ্যের প্রথম ‘পূর্ণ সাক্ষর’ জেলাতেই সেই উদ্যোগ মাঠে মারা গিয়েছে। বরং দেখা গিয়েছে, বেশ কয়েকটি ব্লক শৌচাগার তৈরি না করেও রিপোর্টে শৌচাগার তৈরি হয়েছে বলে উল্লেখ করেছে।

Advertisement

সৌমেন দত্ত

বর্ধমান শেষ আপডেট: ০৭ জুলাই ২০১৬ ০১:০০
Share:

গত আর্থিক বছরের মধ্যে জেলার প্রতিটি পঞ্চায়েতকে ‘নির্মল’ করার উদ্যোগ নিয়েছিল বর্ধমান জেলা প্রশাসন। কিন্তু রাজ্যের প্রথম ‘পূর্ণ সাক্ষর’ জেলাতেই সেই উদ্যোগ মাঠে মারা গিয়েছে। বরং দেখা গিয়েছে, বেশ কয়েকটি ব্লক শৌচাগার তৈরি না করেও রিপোর্টে শৌচাগার তৈরি হয়েছে বলে উল্লেখ করেছে। এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় সরকার চলতি আর্থিক বছরের মধ্যে সব বাড়িতে শৌচাগার তৈরির নির্দেশ দিয়ে দিয়েছে। জেলা প্রশাসনেরও দাবি, ডিসেম্বর মাসের মধ্যে জেলার সব বাড়িতে শৌচাগার তৈরি তো বটেই, কেউ যাতে মাঠে-নদীতে শৌচ না করে সে ব্যাপারেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে এখনও পর্যন্ত শৌচাগার গড়ার যে গতি তাতে লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।

Advertisement

পরিস্থিতি কঠিন কেন?

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বছরে সেপ্টেম্বরে গোটা জেলায় ১ লাখ ৬০ হাজার বাড়িতে শৌচাগার ছিল না। ন’মাস পরে, গত সপ্তাহের রিপোর্ট অনুযায়ী গোটা জেলায় ১ লক্ষ ১৬ হাজার ৭২৭টি শৌচাগার এখনও তৈরি বাকি। রিপোর্ট দেখে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেন জেলা প্রশাসনের কর্তারা। অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) প্রণব বিশ্বাস বলেন, “বৈঠকে প্রধানেরা আসেন না। পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতিরা অনুপস্থিত থাকেন। মাঠে-ঘাটে শৌচকার্য আটকাতে গেলে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। নাহলে পঞ্চায়েতের অনুদান পর্যন্ত বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে হবে।”

Advertisement

জেলা প্রশাসনের রিপোর্টেও দেখা যাচ্ছে, বেশ কিছু পঞ্চায়েত জেলা প্রশাসনকে ‘ভুল তথ্য’ দিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছেন প্রশাসনের কর্তারাই। বিভিন্ন ব্লক থেকে জানানো হয়েছে, গত বছর অগস্টে পর থেকে শৌচাগার তৈরির প্রয়োজনীয় টাকা ছিল না। স্যানিটারি মার্ট বা ঠিকাদার সংস্থাগুলির কাছে প্রচুর টাকা বাকি থাকায় তাঁরা কাজ করতে নিমরাজি ছিল। এ বছরের গোড়া থেকে টাকা ঢুকতে শুরু করে ঠিকই, কিন্তু নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যাওয়ায় শৌচাগার তৈরির কাজ বিশেষ এগোয়ানি। ওই রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০১২ সালের ‘বেসিক লাইন সার্ভে’ অনুযায়ী গোটা জেলায় ৪ লক্ষ ৩০ হাজার ৩৩৯টি বাড়িতে শোচাগার নেই। ২০১৪-১৫ সালে ১০৭৪৫৭টি, ২০১৫-১৬ সালে ১১৩৭৪৫টি শৌচাগার তৈরি হয়। আর এ বছরের প্রথম ছ’মাসে ১০,৮২১টি বাড়িতে শৌচাগার তৈরি করা হয়েছে। এখনও পর্যন্ত বর্ধমান জেলায় ১ লক্ষ ১৬ হাজার ৭২৭টি বাড়ি শৌচাগারহীন হয়ে রয়েছে।

জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, বর্ধমান জেলায় ২৭৭টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে ৩৫টি পঞ্চায়েত ‘নির্মল’ বলে স্বীকৃতি পেয়েছে। আরও ৫৬টি পঞ্চায়েত ওই স্বীকৃতি পাবে। জেলা প্রশাসন সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সকাল-সন্ধ্যায় বাঁশ গাছের জঙ্গল, নদীর ধার, খোলা মাঠে অভিযান চালানো হবে। প্রতিটি সংসদ স্তরে একটি করে ‘নজরদারি’ কমিটি গঠন করে অভিযান চালাতে হবে। ব্লকগুলিকে পরিচালনা করবেন এক জন করে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট। জেলাশাসক সৌমিত্র মোহন বলেন, “খোলা জায়গায় শৌচ করতে দেখলেই পুরুষদের ছবি তুলে গ্রামে টাঙিয়ে দিতে হবে। তার নীচে লিখে দিতে হবে এই ব্যক্তি গ্রামকে অপরিষ্কার করছেন। তাহলেই দেখবেন, অনেকটাই কাজ হবে।’’

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, সালানপুর, জামুড়িয়া, মঙ্গলকোট, পূর্বস্থলী ১, ২ ব্লকের মতো বেশ কিছু ব্লকে শৌচাগার তৈরি নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ এসেছে। জানা গিয়েছে, ওই সব ব্লকে অনেক শৌচাগারের হদিশ মেলেনি। আবার শৌচাগার ব্যবহার না করে বাড়ির গুদামঘরে পরিণত করা হয়েছে। বাড়ি থেকে বেশ কিছুটা দূরে শৌচাগার তৈরি করে দেওয়া হয়েছে, ফলে ব্যবহার নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। জেলা সভাধিপতি দেবু টুডু বলেন, “শৌচাগার তৈরির পাশাপাশি তার ব্যবহারের উপরেও জোর দেওয়া হচ্ছে। গ্রামে গ্রামে সচেতনতা শিবির করা হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন