কদমা, বাতাসা শিল্পের দিন ফেরাতে ক্লাস্টারের ভাবনা

পিতলের রেকাবিতে ‘কয়েকটি বাতাসা’ দিয়ে মেয়ের বিয়ের কথা পেড়েছিলেন নবীন বাঁড়ুজ্জ্যে। রবীন্দ্রনাথের ‘শুভদৃষ্টি’ গল্পে বর্ণিত বাঙালির অতিথি আপ্যায়নের এই রীতি বেশ পুরনো। কিন্তু সেই বাতাসা-নকুলদানা-কদমাকে আর তেমন বাজারজাত করা যাচ্ছে না। অথচ দেশ জুড়েই ভাল চাহিদা রয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বর্ধমান শেষ আপডেট: ১৫ অগস্ট ২০১৬ ০১:৩১
Share:

মানকরে কদমা তৈরিতে ব্যস্ত শিল্পী। ফাইল চিত্র।

পিতলের রেকাবিতে ‘কয়েকটি বাতাসা’ দিয়ে মেয়ের বিয়ের কথা পেড়েছিলেন নবীন বাঁড়ুজ্জ্যে। রবীন্দ্রনাথের ‘শুভদৃষ্টি’ গল্পে বর্ণিত বাঙালির অতিথি আপ্যায়নের এই রীতি বেশ পুরনো। কিন্তু সেই বাতাসা-নকুলদানা-কদমাকে আর তেমন বাজারজাত করা যাচ্ছে না। অথচ দেশ জুড়েই ভাল চাহিদা রয়েছে। তা কাজে লাগিয়েই এ বার রফতানি, ক্লাস্টার তৈরি-সহ বিভিন্ন পদক্ষেপ করার পরিকল্পনা করেছে রাজ্য সরকার।

Advertisement

মনাকরের কদমার বিশেষ কদর রয়েছে ক্রেতাদের মধ্যে। এখানকার কদমা-শিল্পের নিজস্ব ইতিহাসও রয়েছে। মানকরের কারিগরেরা কদমা রাজ্যের বাইরেও পাঠান। কিন্তু কারিগরের সংখ্যা কমে যাওয়ায় কদমা-শিল্প বর্তমানে মার খাচ্ছে বলে প্রশাসনের সূত্রে খবর। অনেকে আবার বাংলার বিভিন্ন এলাকায় বড়ি তৈরি হলেও তা ভিন্ রাজ্যের বাজারে পাঠানোর ব্যবস্থা নেই। রাজ্য সরকারের ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প দফতরের কর্তারা জানিয়েছেন, গোটা বাংলা জুড়ে মূলত ব্যক্তিগত ভাবেই বাতাসা-নকুলদানা-বড়ি তৈরি করেন কারিগরেরা। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে অনেকেই পুঁজির অভাবে পুরনো পেশা ছাড়ছেন।

তবে এই প্রাচীন কুটির শিল্পের হাল ফেরাতে আসরে নেমেছে রাজ্য সরকার। রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ জানান, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশমতো খাদি গ্রামোদ্যোগকে সঙ্গে নিয়ে রাজ্য সরকারের ওয়েবসাইট সংস্থা (রাজ্য.কম) ইতিমধ্যেই সমীক্ষার কাজ শুরু হয়েছে। দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, গোটা বাংলায় প্রায় ২৫০০ বাতাসা ও নকুলদানা তৈরির ছোট ‘কারখানা’ রয়েছে। এর সঙ্গে ২৭ হাজার মানুষ যুক্ত। বর্ধমানের নীলপুর, মালদার হরিশ্চন্দ্রপুর, গড়িয়া-বেলেঘাটা, উত্তরবঙ্গের বালুরঘাটে প্রচুর কারিগর বাতাসা-নকুলদানা তৈরির সঙ্গে যুক্ত। দিন কয়েক আগেই বর্ধমানের প্রশাসনিক সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী ‘মিষ্টি বাংলা হাব’ তৈরির কথা ঘোষণা করেন। সেই হাবে সিউড়ির মোরব্বা ঠাঁই পাবে। কিন্তু তার বাইরেও উত্তরবঙ্গ-সহ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে মোরব্বা তৈরি হয়। সেই সব এলাকায় তৈরি মোরব্বাকেও নতুন এই উদ্যোগে সামিল করার কথা জানিয়েছেন স্বপনবাবু।

Advertisement

কদমা-বাতাসা শিল্পের হাল ফেরাতে কী কী উদ্যোগ করা হবে? খাদি গ্রামদ্যোগের উদ্যোগে ক্লাস্টার তৈরি করে কারিগরদের এক ছাদের তলায় এনে প্রথমে ছোটছোট ‘হাব’ তৈরি হবে। সেখানেই আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারও শেখানো হবে কারিগরদের। খাদি গ্রামোদ্যোগের এক কর্তা জানান, ওড়িশা, উত্তরপ্রদেশে বাতাসার, দেশের দক্ষিণের রাজ্যগুলিতে নকুলদানার চাহিদা রয়েছে। হাবে তৈরি জিনিসপত্র আধুনিক প্রযুক্তিতে প্যাকেটজাত করে পাঠানো হবে। এর ফলে কারিগর ও ব্যবসায়ী, উভয় পক্ষই লাভবান হবেন বলে মনে করছেন খাদি গ্রামোদ্যোগের কর্তারা। আগীম দিনে এই সব ক্ষুদ্র শিল্পে নতুন কর্মসংস্থানও তৈরি হবে বলে আশা ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প দফতরের।

খাদি ও গ্রামোদ্যোগের মুখ্য নির্বাহী আধিকারিক মৃত্যুঞ্জয় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আমরা ক্লাস্টার তৈরি করে সঙ্ঘবদ্ধ ভাবে পরিকাঠামোগত সুবিধা দেওয়া, ভিন্ রাজ্যে দ্রব্য পাঠানোর মতো বিষয়ে সাহায্য করব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন