সব শেষ শুনে অজ্ঞান টুম্পা

স্বামী, ছেলে-মেয়ে কেউ আর বেঁচে নেই।— দুঃসংবাদটা দিতে গিয়েছিলেন পাড়ার মহিলারই। ‘খবর’টা শুনেই সংজ্ঞা হারালেন স্ত্রী। ভেঙে পড়ল গোটা পাড়া, পরিবার। সবার মুখে তখন ওই তিন জনের কথায়।

Advertisement

বিপ্লব ভট্টাচার্য

কাঁকসা শেষ আপডেট: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০২:০৩
Share:

স্বামী, ছেলে-মেয়ে কেউ আর বেঁচে নেই।— দুঃসংবাদটা দিতে গিয়েছিলেন পাড়ার মহিলারই। ‘খবর’টা শুনেই সংজ্ঞা হারালেন স্ত্রী। ভেঙে পড়ল গোটা পাড়া, পরিবার। সবার মুখে তখন ওই তিন জনের কথায়। রবিবার কাঁকসার বিরুডিহায় ২ নম্বর জাতীয় সড়কে ছেলে, মেয়ে ও বাবার মৃত্যুর পরে পানাগড়ের ডাঙাপাড়ায় তাঁদের পরিবার ও পড়শিদের অবস্থা ছিল এমনটাই।

Advertisement

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এই এলাকার দীর্ঘ দিনের বাসিন্দা শ্যাম থাপা। বাবা, কৃষ্ণপদবাবু মারা গিয়েছেন অনেক দিন আগেই। শ্যামবাবুরা তিন ভাই। ছোট ভাই রাম থাকেন অন্যত্র। মা যমুনাদেবী, সৎ মা সরস্বতীদেবী, স্ত্রী টুম্পা, দুই ছেলেমেয়ে ও ভাই লক্ষ্মণকে নিয়ে সংসার ছিল শ্যামের। পরিবার সূত্রে জানা যায়, বাড়ির এক মাত্র রোজগেরে ছিলেন শ্যাম। পেশায় মাটিকাটার যন্ত্রের অপারেটর শ্যাম পরিবারের জন্য একসময় দিনমজুরের কাজও করেছিলেন বলে জানান বাসিন্দারা। তাঁদেরই এক জন বলেন, ‘‘ও ছেলের এই পরিণতি কিছুতেই মানতে পারছি না।’’

বাড়িতে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, ফি দিন ছেলেমেয়ের সঙ্গে কিছুটা সময় কাটানো, কখনও বা বেড়াতে যাওয়া, সবেতেই দেখা যেত শ্যামকে। মেয়ে জিমিকে পানাগড়েরই একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে ভর্তিও করান। এই মুহূর্তে সে চতুর্থ শ্রেণিতে প়ড়ত। ছেলে আদিকেও স্কুলে ভর্তির জন্য তোড়জোড় চলছিল বলে জানান শ্যামের মা। পড়শিরা জানান, ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার জন্য আরও কী কী করা যায়, তা নিয়ে প্রতিনিয়ত নানা জনের সঙ্গে আলোচনা করতেন শ্যাম।

Advertisement

শুধু পরিবারের দায়িত্ব নেওয়াই নয়, এলাকার কারও কোনও দরকারেও শ্যামকে পাওয়া যেত বলে জানান পড়শিরা। পড়শি উৎপল লোহার বলেন, ‘‘কী ভাবে ওই পরিবারের পাশে দাঁড়াব, বুঝতে পারছি না।’’

এ দিন দুপুরে দুঃসংবাদ বাড়িতে আসতেই সংজ্ঞা হারান স্ত্রী টুম্পাদেবী। বাড়ির বাকি সকলেও কথা বলার মতো অবস্থায় নেই। পড়শি মহিলারা বারবার সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। তাঁদের মধ্যে থেকেই কেউ বলে উঠলেন, ‘‘সব শেষ হয়ে গেল।’’

স্থানীয় পঞ্চায়েত পরিবারটির পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন