কৃষ্ণপুরে যুবকের দেহ উদ্ধারের পরে শোকার্ত পরিজনেরা। নিজস্ব চিত্র
রাতে খাওয়া-দাওয়ার পরে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন ছেলে। আর ফেরেননি। সকালে গ্রামেরই এক পুকুরপাড়ে মুখ গোঁজা অবস্থায় যুবকের পড়ে থাকার খবর পেয়ে ছুটে গিয়ে মা দেখেন, তাঁর ছেলের দেহ।
বৃহস্পতিবার সকালে বর্ধমান শহর লাগোয়া শহর লাগোয়া কৃষ্ণপুরে নজরুল ইসলাম বিশ্বাস (২৯) নামে ওই যুবকের দেহ মেলার পরেই অশান্ত হয়ে ওঠে এলাকা। দেহ আনতে গিয়ে বিক্ষোভের মুখে পড়ে পুলিশ। কুকুর নিয়ে এসে তদন্তের দাবিতে দেহ নিয়ে যেতে বাধা দেয় জনতা। ঘণ্টা দুয়েক পরে কুকুর নিয়ে এসে তদন্ত হলেও বিক্ষোভ থামেনি। শেষ পর্যন্ত বর্ধমানের তৃণমূল নেতা খোকন দাস গিয়ে বাসিন্দাদের আশ্বস্ত করার পরে দেহ ময়না-তদন্তে পাঠানো হয়। পুলিশ জানায়, কে বা কারা কেন ওই যুবককে খুন করল তার তদন্ত চলছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এ দিন সকাল ৬টা নাগাদ গ্রামের উত্তরপাড়ার মোড়ল পুকুরে নজরুলের দেহ দেখতে পান কয়েকজন বাসিন্দা। তাঁর মা মিনা বেগম এসে দেহ শনাক্ত করেন। সকাল ৭টা নাগাদ পুলিশ এসে দেহ তুলে কৃষ্ণপুর ইউথ ক্লাবের সামনে রাখে। কিন্তু শববাহী গাড়িতে তোলার সময়েই বিক্ষোভ শুরু হয়ে যায়।
বাসিন্দাদের অভিযোগ, পরোপকারী নজরুলকে খুন করে দেহ লোপাটের জন্য পুকুরে ফেলে দেওয়া হয়েছে। ঘটনায় নজরুলের পরিচিত লোকজনই জড়িত বলে এলাকাবাসীর দাবি। তাই কুকুর নিয়ে এসে তদন্তের দাবি জানানো হয়। তবে কুকুর আনা হলেও সে পুকুর পর্যন্ত ছুটে গিয়ে খেই হারিয়ে ফেলে। পুলিশ উপযুক্ত তদন্তে আশ্বাস দিলেও দেহ নিয়ে যেতে দেননি বাসিন্দারা। খবর পেয়ে পৌঁছন বর্ধমান পুরসভার চেয়ারম্যান-ইন-কাউন্সিল খোকন দাস। তিনি বলেন, ‘‘মৃত্যুর কারণ জানার জন্য ময়না-তদন্ত করতে হবে। তা না হলে পুলিশ দোষীদের ধরতে পারবে না।’’ এর পরেই বিক্ষোভ থামে।
নজরুল ইসলাম বিশ্বাস।
মৃতের পরিজনদের দাবি, ঘটনার পিছনে রয়েছে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। নজরুলের বাবা নুর ইসলাম বিশ্বাস, মা মিনা বেগমদের অভিযোগ, ‘‘রাজনীতি ছেড়ে ছেলে শীতবস্ত্রের দোকান করেছে। দু’মাস দোকানেই বসছিল। গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জন্যই খুন হতে হল ওকে।’’ তাঁরা জানান, বুধবার রাতে খাওয়ার পরে বাড়ি থেকে বেরোন নজরুল। তাঁরা ভেবেছিলেন, ছেলে কোথাও ক্রিকেট খেলতে গিয়েছেন। সকালে বন্ধুদের বাড়িতে খোঁজ করার সময়েই পুকুরে দেহ ভাসার খবর পান। এলাকাবাসীর একাংশের আবার দাবি, প্রণয়ঘটিত সম্পর্কের জেরেও খুন হয়ে থাকতে পারেন নজরুল। যদিও পরিজনেরা তা মানতে নারাজ।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, মৃতের কপালে ও পিঠে কাটা দাগ রয়েছে। জেলার এক পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে খুনের তদন্ত শুরু হয়েছে। এলাকায় পুলিশ টহল দিচ্ছে। ময়না-তদন্ত রিপোর্ট আসার পরে মৃত্যুর কারণ জানা যাবে।’’