অন্ডালের বিক্ষোভে তৃণমূল নেতারাও

দলনেত্রী এক কথা বলছেন আর কর্মীরা ধরছেন অন্য পথ। অন্ডাল বিমাননগরীতে ‘অনিচ্ছুক’ জমিদাতাদের সমর্থনে বিজেপি রাস্তায় নামার পরে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, “ওখানে বিমাননগরী তৈরি করতেই হবে। প্ল্যাকার্ড লিখে কেউ বসে পড়ছে। এ সব মানব না।” অথচ বুধবার সেই তৃণমূলেরই বেশ কিছু নেতা-কর্মী জমিদাতাদের বিক্ষোভে সামিল হলেন। তবে দলের ঝান্ডা ছাড়া।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

অন্ডাল শেষ আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০১৪ ০২:২৭
Share:

দলনেত্রী এক কথা বলছেন আর কর্মীরা ধরছেন অন্য পথ।

Advertisement

অন্ডাল বিমাননগরীতে ‘অনিচ্ছুক’ জমিদাতাদের সমর্থনে বিজেপি রাস্তায় নামার পরে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, “ওখানে বিমাননগরী তৈরি করতেই হবে। প্ল্যাকার্ড লিখে কেউ বসে পড়ছে। এ সব মানব না।” অথচ বুধবার সেই তৃণমূলেরই বেশ কিছু নেতা-কর্মী জমিদাতাদের বিক্ষোভে সামিল হলেন। তবে দলের ঝান্ডা ছাড়া।

প্রত্যাশিত ভাবেই প্রশ্ন উঠছে, তবে কি পরিস্থিতির চাপে দলনেত্রীর নির্দেশ অমান্য করছে নিচুতলা? না কি, বিজেপি যাতে ফাঁকা মাঠে গোল দিয়ে যেতে না পারে, তার জন্য দলের শীর্ষ নেতৃত্বই সুকৌশলে নিচুতলাকে ব্যবহার করছেন? ঠিক যেমনটা করা হয়েছিল শালবনিতে, যেখানে জিন্দলদের প্রস্তাবিত ইস্পাত প্রকল্প স্থগিত হওয়া মাত্র বিজেপির পালের হাওয়া কেড়ে মাঠে নেমে পড়েছিল তৃণমূল। অন্ডালের জমি আন্দোলনকে কোনও দিনই সিঙ্গুরের সমান মর্যাদা দিতে রাজি হননি শাসকদলের নেতারা। বরং বারবার দাবি করা হয়েছে, ওখানে জমি নিয়ে কোনও সমস্যাই নেই। অথচ তাঁদেরই একাংশ বলছেন, এই বিক্ষোভ স্বতঃস্ফূর্ত, তাই তাঁরা তাতে যোগ দিয়েছেন।

Advertisement

ন্যায্য ক্ষতিপূরণ ও বিমাননগরী প্রকল্পে চাকরি না মেলার অভিযোগে এ দিন বিমাননগরীর এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল অফিসের সামনে দক্ষিণখণ্ড গ্রামের শ’দুয়েক বাসিন্দা বিক্ষোভ দেখান। তৃণমূলের দক্ষিণখণ্ড অঞ্চল সভাপতি অনন্ত ঘোষ-সহ দলের বেশ কিছু কর্মী-সমর্থক তাতে সামিল হন। অনন্তবাবুর ব্যাখ্যা, “আমরা দলের তরফে যাইনি। গ্রামের মানুষ স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন, স্থানীয় বাসিন্দা হিসেবে তাতে যোগ দিয়েছি।” নেতার দাবি, এই প্রকল্পে গ্রামের প্রায় সাড়ে ছ’শো একর জমি নেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখনও কোনও বর্গাদার বা খেতমজুর ক্ষতিপূরণ পাননি। এক জনকেও ঠিকাকর্মী হিসেবে নিয়োগ করা হয়নি। তার প্রতিবাদেই এই বিক্ষোভ।

বর্ধমানের তৃণমূল নেতারা অবশ্য দাবি করছেন, এমন কোনও বিক্ষোভের কথা তাঁরা জানেনই না। শিল্পাঞ্চলের নেতা তথা রাজ্যের শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটক দাবি করেন, “ওখানে অনেকেই সরকারি ক্ষতিপূরণ নিয়েছেন। যাঁরা নেননি, তাঁরা নিতে সম্মত হয়েছেন। আজ কে কোথায় কী করেছে, জানা নেই।” তৃণমূলের অন্ডাল ব্লক সভাপতি কাঞ্চন মিত্রও বলেন, “প্রকল্পের সমস্ত কাজ শেষ। এর পরে আর কোনও সমস্যা থাকতে পারে না। দলের কেউ আন্দোলন করেছে কি না, জানা নেই।” দলের বর্ধমান জেলা (শিল্পাঞ্চল) কার্যকরী সভাপতি ভি শিবদাসনের বক্তব্য, “দলের নির্দেশ উপেক্ষা করে কিছু হয়েছে কি না, খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

তবে কি বিজেপি-র পরে এ বার তৃণমূলও জমিদাতাদের পাশে?

অন্ডাল ব্লক কৃষিজমি রক্ষা কমিটির সম্পাদক সুশীল ঘোষ বলেন, “কে কোন দল করে, বড় কথা নয়। ন্যায্য দাবি আদায়ের জন্যই গ্রামবাসী পথে নামছেন।” বারবার চেষ্টা করেও বিমাননগরী নির্মাণকারী সংস্থার কর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তবে শাসকদলের একাংশের এই ভোলবদলে মোক্ষম সুযোগ পেয়ে গিয়েছে বিরোধী দলগুলি।

পাণ্ডবেশ্বরের সিপিএম বিধায়ক গৌরাঙ্গ চট্টোপাধ্যায়ের মতে, “কোনও দাবি-দাওয়া নয়, প্রকল্প কর্তাদের চাপ দিয়ে কিছু রোজগারের জন্যই তৃণমূলের লোকজন বিক্ষোভের নাটক করেছে।” আর, বিজেপি-র আসানসোল জেলা সভাপতি নির্মল কর্মকারের টিপ্পনী, “বিজেপি আজ যা ভাবে, তৃণমূল তা কাল ভাবে এই কথাই প্রমাণ হয়ে গেল।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন