হিন্দুস্তান কেব্‌লস কারখানা

অবসরের বয়স কমল, আশা-আশঙ্কায় কর্মীরা

হিন্দুস্তান কেবলসের রূপনারায়ণপুর ইউনিটের শ্রমিক-কর্মীদের অবসর নিতে হবে ৫৮ বছর বয়সেই। শনিবার সন্ধ্যায় কারখানায় এই মর্মে একটি নোটিস ঝুলিয়ে দিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। এই সিদ্ধান্তে অসন্তুষ্ট শ্রমিক-কর্মীদের একাংশ। তাঁদের দাবি, জোর করে এই সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। অন্য অংশের অবশ্য আশা, এতে পুনরুজ্জীন প্রক্রিয়ায় গতি আসবে। যদিও কারখানা কর্তৃপক্ষের তরফে এ ব্যাপারে আর কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

আসানসোল শেষ আপডেট: ২২ ডিসেম্বর ২০১৪ ০০:৩৫
Share:

হিন্দুস্তান কেবলসের রূপনারায়ণপুর ইউনিটের শ্রমিক-কর্মীদের অবসর নিতে হবে ৫৮ বছর বয়সেই। শনিবার সন্ধ্যায় কারখানায় এই মর্মে একটি নোটিস ঝুলিয়ে দিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। এই সিদ্ধান্তে অসন্তুষ্ট শ্রমিক-কর্মীদের একাংশ। তাঁদের দাবি, জোর করে এই সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। অন্য অংশের অবশ্য আশা, এতে পুনরুজ্জীন প্রক্রিয়ায় গতি আসবে। যদিও কারখানা কর্তৃপক্ষের তরফে এ ব্যাপারে আর কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি।

Advertisement

১৯৫২ সালে তৈরি হিন্দুস্তান কেব্‌লসের রূপনারায়ণপুর ইউনিটে কর্মীদের অবসরের বয়স প্রথম থেকেই ছিল ৬০ বছর। কিন্তু এ নিয়ে সমস্যা শুরু হয় ২০০৫ সালে। কারখানা সূত্রে জানা গিয়েছে, ভারী শিল্প মন্ত্রকের নির্দেশে কারখানা কর্তৃপক্ষ সে বছর সিদ্ধান্ত নেন, এই ইউনিটের কর্মীদের অবসরের বয়স ৬০ থেকে কমিয়ে ৫৮ বছর করা হবে। খোঁজ নিয়ে জানা গিয়েছে, হায়দরাবাদ এবং নৈনিতে সংস্থার বাকি দু’টি ইউনিটের শ্রমিক-কর্মীদের অবসরের বয়স যেহেতু প্রথম থেকে ৫৮ বছর ছিল, তাই তিনটি ইউনিটের মধ্যে সমতা আনতে রপনারায়নপুর ইউনিটেও তা ৫৮ বছর করার সিদ্ধান্ত হয়। তার পর থেকেই শ্রমিক-কর্মীরা কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে লাগাতার আন্দোলনে নামেন। কিন্তু কারখানা কর্তৃপক্ষ নিজেদের সিদ্ধান্তে অনড় থেকে ২০০৬ সালে সংস্থার পাঁচ কর্মীকে ৫৮ বছর বয়সে অবসরে পাঠান। তাঁরা ৬০ বছর বয়সে অবসরের সুযোগ-সুবিধা চেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হন। এর পরে ২০০৮ সালে সংস্থা থেকে আরও ২৪১ জন শ্রমিক-কর্মীকে ৫৮ বছর বয়সে অবসর দিয়ে দেওয়া হয়। তাঁরাও ওই একই সুবিধা চেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হন। আদালতের রায় মামলাকারী শ্রমিক-কর্মীদের পক্ষে যায়। কারখানা কর্তৃপক্ষ তাঁদের ৬০ বছর বয়সে অবসরের সুবিধা মিটিয়ে দেন।

কিন্তু কর্মীদের অবসরের বয়স কত হবে, সে ব্যাপারে আদালত কোনও নির্দেশ দেয়নি। এ নিয়ে এখনও কর্তৃপক্ষের সঙ্গে শ্রমিক-কর্মীদের বিবাদ চলছে। বর্তমানে ৫৮ বছর পেরিয়ে যাওয়া একাধিক শ্রমিক-কর্মী এখনও কারখানায় যাচ্ছেন, হাজিরাও দিচ্ছেন। কর্তৃপক্ষ তাঁদের কারখানায় আসা-যাওয়ায় বাধা দিচ্ছেন না। কিন্তু বেতনও দিচ্ছেন না। এ দিকে অবসরকালীন ভাতাও নিচ্ছেন না শ্রমিক-কর্মীরা।

Advertisement

শনিবার সন্ধ্যায় কেব্‌লস কর্তৃপক্ষ কারখানার সদর দরজা ও নোটিস বোর্ডে শ্রমিক-কর্মীদের অবসরের বয়স ৫৮ বছর করার সিদ্ধান্ত লিখিত আকারে ঝুলিয়ে দেওয়ায় অবসরের বয়স নিয়ে টানাপড়েন ফের সামনে এসেছে। শ্রমিক-কর্মীদের একাংশ মনে করছেন, এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে সংস্থাটির পুনরুজ্জীবন প্রক্রিয়া তরান্বিত হবে। অনেকে আবার ভাবছেন, এই সিদ্ধান্তে শ্রমিক-কর্মীদের অস্তিত্ব বিপন্ন হবে।

কারখানা কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে বিএমএস। সংগঠনের শাখা সম্পাদক ওমপ্রকাশ সিংহ বলেন, “আমরা এই সিদ্ধান্তের বিরোধি নয়। কারখানার হিতার্থে আমরা তা স্বাগত জানাচ্ছি।” তবে এমন নোটিসের বিরোধিতা করেছে সিটুর শাখা সম্পাদক মধু ঘোষ। তিনি দাবি করেন, “এই সিদ্ধান্ত শ্রমিক-স্বার্থ বিরোধী। আমাদের সঙ্গে কোনও আলোচনা না করেই একতরফা চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। সোমবার থেকে আমরা আন্দোলনে নামব।” একই সুর এইচএমএস নেতৃত্বের গলাতেও। সংগঠনের শাখা সম্পাদক বিরোজা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আমরা এই সিদ্ধান্ত মানছি না। আন্দোলনে নামব।” আইএনটিইউসি-র শাখা সম্পাদক উমেশ ঝা বলেন, “কারখানার উন্নতিই আমাদের লক্ষ্য। এই সিদ্ধান্তের ফলাফলের দিকে নজর রাখছি।”

সংস্থার অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের অনেকে সদস্যও জানিয়েছেন, তাঁর এই সিদ্ধান্তকে সমর্থন করছেন না। তবে প্রকাশ্যে কেউ এ নিয়ে মুখ খুলতে চাননি। গোটা বিষয়টি নিয়ে কারখানা কর্তৃপক্ষের কারও কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি। কেব্‌লসের রূপনারায়ণপুর ইউনিটের কর্তা বাসুদেব দে-র সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে জানানো হয়, তিনি বাইরে রয়েছেন। এসএমএস করা হলেও জবাব মেলেনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন