ভেঙে পড়ল ১৭০ বছরের সেতু

অল্পের জন্য রক্ষা পেলেন বাসযাত্রীরা

ভোরের কুয়াশা তখনও কাটেনি। যাত্রীবাহী বাসটিকে পাশ কাটিয়ে দ্রুত সেতুর দিতে ছুটছিল ডাম্পারটি। সেতুতে উঠতেই আচমকা প্রচণ্ড শব্দ। মুহূর্তে মাঝ বরাবর ভেঙে পড়ে খড়ি নদীর উপরের ওই সেতুটি। মুখ থুবড়ে পড়ে পাথর বোঝাই ডাম্পারটিও। চালক, খালাসি বরাতজোরে বেঁচে গেলেও বর্ধমান-কাটোয়া রোডের নরজার কাছে ওই এলাকায় কার্যত থমকে গিয়েছে যান চলাচল। গাড়ি, বাস, লরিগুলিকে কোথাও দশ-পনেরো, কোথাও বা তারও বেশি পথ ঘুরে যাতায়াত করতে হচ্ছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নরজা (বর্ধমান) শেষ আপডেট: ২৩ ডিসেম্বর ২০১৪ ০১:২৩
Share:

নরজায় খড়ি নদীর উপর ভাঙা সেতুর পাশেই কাজ শুরু হয়েছে অস্থায়ী রাস্তার। নিজস্ব চিত্র।

ভোরের কুয়াশা তখনও কাটেনি। যাত্রীবাহী বাসটিকে পাশ কাটিয়ে দ্রুত সেতুর দিতে ছুটছিল ডাম্পারটি। সেতুতে উঠতেই আচমকা প্রচণ্ড শব্দ। মুহূর্তে মাঝ বরাবর ভেঙে পড়ে খড়ি নদীর উপরের ওই সেতুটি। মুখ থুবড়ে পড়ে পাথর বোঝাই ডাম্পারটিও।

Advertisement

চালক, খালাসি বরাতজোরে বেঁচে গেলেও বর্ধমান-কাটোয়া রোডের নরজার কাছে ওই এলাকায় কার্যত থমকে গিয়েছে যান চলাচল। গাড়ি, বাস, লরিগুলিকে কোথাও দশ-পনেরো, কোথাও বা তারও বেশি পথ ঘুরে যাতায়াত করতে হচ্ছে। জেলাশাসক সৌমিত্র মোহন অবশ্য আশ্বাস দিয়েছেন, সেতু ভেঙে পড়ার কথা পূর্ত দফতরকে জানানো হয়েছে। দু’একদিনের মধ্যেই ওই নদীর উপর দিয়ে যানবাহন পারাপারের ব্যবস্থা করা হবে।

সোমবার ভোরের ওই ঘটনার পরে বেলা গড়াতেই ভিড় জমতে থাকে সেতুর দু’পাশে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ভোর সাড়ে পাঁচটা নাগাদ বীরভূমের দিক থেকে পাথর বোঝাই ওই ডাম্পারটি বর্ধমান কাটোয়া সড়ক ধরে এসে সেতুতে ওঠে। ডাম্পারটির ঠিক পিছনেই একটি যাত্রীবাহী বাস ছিল। বাসটিকে ডাম্পারটি পাশ কাটিয়ে না এগিয়ে এলে দুর্ঘটনাটি আরও ভয়াবহ হতো বলেও প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি। কর্জনা গ্রামের বাসিন্দা কৃষ্ণ বিশ্বাস বলেন, “বাসটি সমেত সেতু ভেঙে পড়লে প্রচুর মানুষ আহত হতেন। প্রাণহানিও ঘটতে পারত।”

Advertisement

গিয়ে দেখা যায়, নদীর দু’পাশে ছড়িয়ে রয়েছে ডাম্পারে বোঝাই স্টোনচিপস। ইটের পিলার, লোহার খাঁচা ভেঙে দাঁড়িয়ে রয়েছে সেতুটি। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, সেতুটি ব্রিটিশ আমলে তৈরি। বয়স প্রায় ১৭০ বছর। তবে কোনওদিনই সেভাবে সংস্কার হয়নি বলেও তাঁদের অভিযোগ। পাশের ছ’মাইল গ্রামের প্রবীণ বাসিন্দা শেখ আজম আলির দাবি, “বছর কুড়ি আগে একবার আমাদের চাপে পড়ে পিলারের ওপর নতুন করে লোহার খাঁচা তৈরি করে সেতুর মেরামত করা হয়েছিল। কিন্তু তারপরে দীর্ঘদিন ধরে ভারি যানবাহন চলায় তা কমজোর হয়ে পড়ে। সেতুর অনেক জায়গায় ওই খাঁচার জোড় খুলেও গিয়েছিল। আমরা বহু বার সংস্কারের দাবি জানিয়েছি। কিন্তু কেউ কর্ণপাত করেননি।” ভাতারের বিধায়ক বনমালি হাজরাও ঘটনাস্থলে এসেছিলেন এ দিন। তাঁরও দাবি, “এই সেতুটির মেরামতের কথা পূর্ত দফতরকে কয়েকমাস আগেই জানিয়েছিলাম। কিন্তু তার আগেই যে এমন করে সেতুটি ভেঙে পড়বে, ভাবতে পারিনি।”


সোমবার পাথর বোঝাই ডাম্পার যাওয়ার সময় ভেঙে পড়ল বর্ধমানের খড়ি নদীর উপর এই সেতুর একাংশ। ছবি: উদিত সিংহ

এ দিন অবশ্য পূর্ত দফতরের আধিকারিকেরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে সেতুর পাশ দিয়ে সাময়িক চলাচলের একটি রাস্তা তৈরির উদ্যোগ করেন। ওই দফতরের দাবি, ওই রাস্তা দিয়ে আপাতত মোটরবাইক, গাড়ি চলাচল করতে পারবে। তবে মালবাহী ট্রাকগুলিকে ঘুরপথেই যাতায়াত করতে হবে। পূর্ত দফতরের সুপারিন্টেন্ডেন্টিং ইঞ্জিনিয়ার উজ্জ্বল বিশ্বাস একদল আধিকারিককে নিয়ে ভেঙে পড়া প্রায় ১৩০ মিটার দীর্ঘ ওই সেতুটি ঘুরে দেখেন। ভাঙা অংশের বেশ কিছু ছবিও তোলা হয়। উজ্জ্বলবাবু বলেন, “এই সেতুটি মেরামত করার কথা আমাদের তালিকায় ছিল। কিছুদিনের মধ্যেই কাজ শুরু হত। কাটোয়া রোডে এ ধরনের আরও দুটি সেতুর সংস্কার করেছি আমরা। তবে এখন ভাঙ সেতুটিকে বাতিল করে এই সেতুটিকে এখন নতুন করে তৈরি করতে হবে।” তাঁর আশ্বাস, এক বছরের মধ্যে নতুন সেতু তৈরি হয়ে যাবে। আর আপাতত নদীতে যেহেতু জল কম, তাই পাশ দিয়ে চলাচলের রাস্তা গড়ে দেওয়া হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন