আউশগ্রামে স্কুলছাত্রের মৃত্যুতে গ্রেফতার প্রধান শিক্ষক

ছাত্রকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে প্রধান শিক্ষককে গ্রেফতার করল পুলিশ। তার পাশেই পুলিশের উপর হামলা, সরকারি কাজে বাধা দেওয়া, শিক্ষকদের আটকে রাখার অভিযোগে ধরা হল আউশগ্রামের সুয়াতা গ্রামের ৬ বাসিন্দাকেও। বৃহস্পতিবার জামতাড়া উচ্চবিদ্যালয়ের ওই প্রধান শিক্ষক-সহ ৭ জনকে বর্ধমান আদালতে তোলা হয়। জেলার ভারপ্রাপ্ত মুখ্য বিচারক ধৃতদের ১৪ দিন জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

আউশগ্রাম শেষ আপডেট: ২৮ অগস্ট ২০১৫ ০১:১৪
Share:

ছাত্রকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে প্রধান শিক্ষককে গ্রেফতার করল পুলিশ। তার পাশেই পুলিশের উপর হামলা, সরকারি কাজে বাধা দেওয়া, শিক্ষকদের আটকে রাখার অভিযোগে ধরা হল আউশগ্রামের সুয়াতা গ্রামের ৬ বাসিন্দাকেও।

Advertisement

বৃহস্পতিবার জামতাড়া উচ্চবিদ্যালয়ের ওই প্রধান শিক্ষক-সহ ৭ জনকে বর্ধমান আদালতে তোলা হয়। জেলার ভারপ্রাপ্ত মুখ্য বিচারক ধৃতদের ১৪ দিন জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন। শিক্ষক ও পড়ুয়ারা না আসায় জামতাড়ার স্কুলটিও তালাবন্ধ ছিল এ দিন।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার রাতে ওই স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র, সুয়াতা গ্রামের বাসিন্দা রাকেশ মাঝির অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়। ছাত্রটির পরিবার ও গ্রামবাসীদের অবশ্য অভিযোগ, স্কুলের খেলা চলাকালীন কিছু গোলমাল হওয়ায় রাকেশকে মারধর করেন ক্রীড়া শিক্ষক। পরে স্কুলে এনে প্রধান শিক্ষকও মারধর করেন। এমনকী ওই ছাত্রের মা ক্ষমা চাওয়ার পরেও দু’জনকে স্কুলের মধ্যেই অপমান করা হয় বলে তাঁদের অভিযোগ। এরপরেই বাজার থেকে বেগুনগাছে দেওয়ার কীটনাশক কিনে তা পান করে আত্মঘাতী হয় রাকেশ। তাঁকে প্রথমে জামতাড়া প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র, পরে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বুধবার সকালে সেখানেই মারা যায় সে।

Advertisement

খবর ছড়াতেই স্কুলের সামনে জড়ো হয়ে যান সুয়াতা গ্রামের বাসিন্দারা। প্রধান শিক্ষককে স্কুলে আসার দাবি তোলেন তাঁরা। তাঁদের দাবি, ওই প্রধান শিক্ষক বর্ধমানের বাসিন্দা হওয়া সত্ত্বেও মেডিক্যাল কলেজের মর্গে গিয়ে মৃত ছাত্রের প্রতি কোনও সহানুভূতি দেখান নি। সেই ক্ষোভ থেকে স্কুলের অন্য শিক্ষক-শিক্ষিকাদেরও প্রায় দশ ঘন্টা আটকে রাখেন তাঁরা। পরে পুলিশ পরিস্থিতি সামাল দেয়। তিনটি পৃথক মামলা দায়ের হয় এই ঘটনায়।

মৃত ছাত্রের জামাইবাবু প্রদীপ মেটে পুলিশের কাছে প্রধান শিক্ষক মানব দত্তের নামে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ করেন। যদিও শিক্ষকের দাবি, ওই ছাত্রের গায়ে তিনি হাত তোলেননি। বরং অনুশাসন বজায় রাখতে ক্রীড়া শিক্ষকই সকলের সামনে রাকেশকে ৫-৬ বার ছড়ি দিয়ে মারেন। আদালতেও ওই শিক্ষক বলেন, ‘‘স্কুলে কোনও খেলা ছিল না। স্কুলের দল নির্বাচন হচ্ছিল একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের মধ্যে থেকে। রাকেশ শ্রেণিকক্ষ থেকে ক্রীড়া শিক্ষকের উদ্দেশে অশ্লীল ভাষা প্রয়োগ করে। সে জন্য এক জন শিক্ষক শাসন করেছে।’’ তাঁর আরও দাবি, ‘‘পরে আমি ওই ছাত্রের বাবাকে ডেকে নিয়ে আসতে বলি। সে মাকে ডেকে নিয়ে আসে। আমি বলি, বাবাকে নিয়ে এসে সবার সামনে ওই শিক্ষকের কাছে ক্ষমা চাইবি। এর পরেই সন্ধ্যায় দুঃখজনক ঘটনাটি কানে আসে।”

অন্য দিকে, স্কুলের আর এক শিক্ষক শঙ্কু রায় গ্রামবাসীদের বিরুদ্ধে তাঁদের আটকে রাখা, শিক্ষকদের মারধর ও স্কুল লক্ষ্য করে ইট ছোড়ার অভিযোগ করেছেন আউশগ্রাম থানায়। ওই থানার এক পুলিশকর্মী অজয় গুপ্তও ৮ জন গ্রামবাসীর নামে পুলিশের উপর আক্রমণ, সরকারি কাজে বাধা দেওয়া ও স্কুলে ভাঙচুর চালানোর অভিযোগ করেন। যার মধ্যে পুলিশ ৬ জনকে গ্রেফতার করেছে।

এ দিন গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, শিক্ষক,পড়ুয়া কেউই স্কুলে আসেনি। স্কুলের গেট খোলা থাকলেও শ্রেণিকক্ষ তালাবন্ধ ছিল। গ্রামেও বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে চাননি কেউ। সবার মুখে একটাই কথা, “আমি ছিলাম না। ঘটনার কথা জানি না। অন্য কাউকে জিজ্ঞাসা করুন।” তবে ভাল্কি অঞ্চলের তৃণমূলের নেতা স্বপন চক্রবর্তী গ্রামবাসীদের পাশে দাঁড়িয়ে বলেন, “ওই ভাবে একটি ছেলেকে মারা হলে গ্রামের লোকেরা তো খেপবেই। তবে প্রধান শিক্ষক সহানুভূতি দেখালে ঘটনাটা এত বড় নাও হতে পারত।’’ তাঁর আরও অভিযোগ, ‘‘পুলিশ রাতে নিরীহ লোকেদের অন্যায় ভাবে মারধর করেছে।’’ যদিও পুলিশ তা মানতে চায়নি। সিপিএম নেতা অচিন্ত্য মজুমদারও বলেন, “এটা অনভিপ্রেত ঘটনা। এই ধরণের ঘটনার সমাজের উপর মারাত্মক প্রভাব পড়ে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন