আসেন না ডাক্তার, স্বাস্থ্যকেন্দ্র যেন ধ্বংসস্তূপ

শহর ও লাগোয়া এলাকায় বাস করেন প্রায় পনেরো লক্ষ মানুষ। তাঁদের জন্য উন্নত স্বাস্থ্য পরিষেবার ব্যবস্থা করতে বছর তিনেক আগে স্বাস্থ্য জেলা হিসেবে ঘোষণা করা হয় আসানসোলকে। কিন্তু শহরের নানা প্রান্তে স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলির দিকে তাকালেই মালুম হয়, স্বাস্থ্যের কী হাল। শুধু স্বাস্থ্যকেন্দ্র নয়, হাসপাতাল থেকে বিশ্ব ব্যাঙ্কের অনুদানে পুরসভার গড়ে তোলা কেন্দ্র— বেহাল সবই। প্রশাসনের আশ্বাস, শহর তথা এই মহকুমায় উন্নত স্বাস্থ্য পরিষেবা দিতে নানা পরিকল্পনা হয়েছে।

Advertisement

সুশান্ত বণিক

আসানসোল শেষ আপডেট: ২৬ জানুয়ারি ২০১৫ ০০:৫০
Share:

ডিহিকা স্বাস্থ্যকেন্দ্র।

শহর ও লাগোয়া এলাকায় বাস করেন প্রায় পনেরো লক্ষ মানুষ। তাঁদের জন্য উন্নত স্বাস্থ্য পরিষেবার ব্যবস্থা করতে বছর তিনেক আগে স্বাস্থ্য জেলা হিসেবে ঘোষণা করা হয় আসানসোলকে। কিন্তু শহরের নানা প্রান্তে স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলির দিকে তাকালেই মালুম হয়, স্বাস্থ্যের কী হাল। শুধু স্বাস্থ্যকেন্দ্র নয়, হাসপাতাল থেকে বিশ্ব ব্যাঙ্কের অনুদানে পুরসভার গড়ে তোলা কেন্দ্র— বেহাল সবই। প্রশাসনের আশ্বাস, শহর তথা এই মহকুমায় উন্নত স্বাস্থ্য পরিষেবা দিতে নানা পরিকল্পনা হয়েছে।

Advertisement

আসানসোল পুর এলাকায় পাঁচটি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র রয়েছে। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ৫০টি ওয়ার্ডের জন্য শহরের বিভিন্ন প্রান্তে এই কেন্দ্রগুলি তৈরি করা হয়েছিল। সব ক’টিই হয়েছিল তিরিশ থেকে চল্লিশ বছর আগে।

এখন যেখানে আসানসোল জেলা হাসপাতাল, সেখান থেকে অন্তত ২০ কিলোমিটার দূরে রয়েছে ডিহিকা স্বাস্থ্যকেন্দ্র। সেখানে গেলে মনে হয় যেন কোনও ধ্বসংস্তূপ। ঝোপজঙ্গলে ঢেকে গিয়েছে কেন্দ্র। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কোনও বালাই নেই। জল, বিদ্যুৎ কোনও ব্যবস্থাই নেই। আশপাশের নানা গ্রামের প্রায় ১০ হাজার বাসিন্দা এই কেন্দ্রের উপরে নির্ভরশীল। বাসিন্দাদের অভিযোগ, এখানে কোনও চিকিৎসক আসেন না। তাই রোগ হলে তাঁরা এ দিকে আসেনই না। তাঁরা জানান, বছর কয়েক আগেও রোজ চিকিৎসকের দেখা মিলত। ওষুধও পাওয়া যেত। সে সব এখন অতীত।

Advertisement

এখন কেন্দ্রটি সামলান স্বাস্থ্যকর্মী শিখা পাল ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মী সিয়ারাম হেলা। শিখাদেবী জানান, এক জন চিকিৎসকের সপ্তাহে তিন দিন আসার কথা। কিন্তু কেউ আসেন না। তিরিশ বছর ধরে এখানে রয়েছেন সিয়ারামবাবু। তাঁর দাবি, রোজ রাতে চোরের উপদ্রব হয়। ঝুঁকি নিয়ে জিনিসপত্র আগলে বসে রয়েছেন। স্থানীয় বাসিন্দা শুকলাল মাজি বলেন, “কয়েক বছর ধরে রোগী দেখা বন্ধ এখানে। শেষ কবে চিকিৎসক এসেছিলেন মনে নেই!” আর এক বাসিন্দা জয়ন্তী মুর্মুর কথায়, “হাতের কাছে সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্র থাকা সত্ত্বেও পরিষেবা না পেয়ে বিনা চিকিৎসায় মরতে হচ্ছে অনেককে।”

ধেনুয়া স্বাস্থ্যকেন্দ্র।

পুরসভার প্রত্যন্ত এলাকায় রয়েছে ধেনুয়া স্বাস্থ্যকেন্দ্র। ধেনুয়া, তালকুড়ি, কালাঝড়িয়া, বড়ডাঙা-সহ প্রায় ৯টি গ্রামের হাজার কুড়ি বাসিন্দা এই কেন্দ্রটির উপরে নির্ভরশীল। তবে এই কেন্দ্রের ভবনও ঝোপজঙ্গলে ভরে গিয়েছে। যদিও ডিহিকার তুলনায় এই কেন্দ্র পরিচ্ছন্ন। জানা গেল, এক মহিলা চিকিৎসক সপ্তাহে তিন দিন এখানে রোগী দেখেন। তবে হাসপাতালের পরিকাঠামো নিয়ে অসন্তোষের শেষ নেই এলাকায়। হাসপাতাল চত্বরে দাঁড়িয়েই ধেনুয়া গ্রামের বাসিন্দা উপল বাউড়ি অভিযোগ করেন, “এত বড় এলাকার জন্য এক জন মাত্র চিকিৎসক। তা-ও আবার সপ্তাহে তিন দিন। স্বাস্থ্যকর্মী থেকে ডাক্তার, সকলেই দেরি করে আসেন। রোগীদের দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে হয়।” এই অভিযোগ যে ভুল নয়, তা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গেলেই বোঝা যায়। সম্প্রতি গিয়ে দেখা যায়, সকাল ৯টায় আসার কথা থাকলেও সাড়ে ১০টা নাগাদ পৌঁছলেন একমাত্র স্বাস্থ্যকর্মী। তখনও আসেননি ডাক্তার। কখন আসবেন, নিশ্চিত করে জানাতে পারেননি তিনি।

ডামরায় রয়েছে আরও একটি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র। আগের দু’টির তুলনায় পরিষেবার হাল এখানে কিছুটা ভাল। গেলে ডাক্তারের দেখা মেলে। আশপাশের এলাকার রোগীরা চিকিৎসার জন্য আসেনও। আশপাশের নানা এলাকার প্রায় ১৭ হাজার বাসিন্দার জন্য গড়া হয়েছে এই কেন্দ্রটি। প্রয়োজনের তুলনায় পরিকাঠামো অবশ্য যথেষ্ট নয়। এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসক দেবীদাস মুখোপাধ্যায়ও বলেন, “একজন ফার্মাসিস্ট এবং এক জন স্টাফ নার্স দিয়ে হাসপাতাল চালাচ্ছি। মাঝে মাঝে রোগীর চাপে হিমশিম খেতে হয়। আর একটু উন্নত পরিকাঠামো পেলে ভাল পরিষেবা দেওয়া যায়।” স্থানীয় বাসিন্দা প্রদ্যোৎ মালাকার বলছেন, “আপদে-বিপদে হাতের সামনে এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রই ভরসা। কিন্তু এত বড় এলাকার জন্য মাত্র এক জন চিকিৎসক, তিনি আবার সপ্তাহে তিন দিন বসেন। সারা সপ্তাহ ডাক্তার পেলে কিছুটা সুরাহা হত।”

(চলবে)
ছবিগুলি তুলেছেন শৈলেন সরকার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন