উচ্ছেদে বাধা, উদ্বিগ্ন কেব্‌লস কর্তৃপক্ষ

হিন্দুস্তান কেব্‌লস কারখানার জমি থেকে উঠতে চাইছেন না জবরদখল করে রাখা লোকজন। উচ্ছেদ অভিযানে বাধা আসায় সংস্থার রূপনারায়ণপুর ইউনিটের অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া গতি হারাচ্ছে বলে দাবি করেছেন কর্তৃপক্ষ। কী ভাবে এই সমস্যা মিটবে, তা তাঁরা ভেবে কূল পাচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন কারখানার কর্তারা।

Advertisement

সুশান্ত বণিক

আসানসোল শেষ আপডেট: ০৮ ডিসেম্বর ২০১৪ ০১:২৫
Share:

হিন্দুস্তান কেব্‌লস কারখানার জমি থেকে উঠতে চাইছেন না জবরদখল করে রাখা লোকজন। উচ্ছেদ অভিযানে বাধা আসায় সংস্থার রূপনারায়ণপুর ইউনিটের অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া গতি হারাচ্ছে বলে দাবি করেছেন কর্তৃপক্ষ। কী ভাবে এই সমস্যা মিটবে, তা তাঁরা ভেবে কূল পাচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন কারখানার কর্তারা।

Advertisement

হিন্দুস্তান কেব্‌লস কারখানা অধিগ্রহণের সম্মতি দিয়েছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের অধীনস্থ অর্ডিন্যান্স ফ্যাকট্রি বোর্ড (ওএফবি)। তবে অধিগ্রহণ পর্ব চূড়ান্ত করার আগে দু’টি শর্ত আরোপ করেছে তারা। প্রথমটি, কারখানার সমস্ত শ্রমিক-কর্মীকে লিখিত সম্মতি দিতে হবে, তাঁরা দেশের যে কোনও প্রান্তে ওএফবি-র কারখানায় বদলি হতে রাজি। অন্য শর্তটি হল, রূপনারায়ণপুরের বিস্তীর্ণ এলাকায় দখল হয়ে যাওয়া জমি পুনরুদ্ধার করে ওএফবি-র হাতে তুলে দিতে হবে। কেব্‌লস সূত্রে জানা গিয়েছে, সংস্থার ৮৩১ জন শ্রমিক-কর্মীর মধ্যে প্রায় ছ’শো জন ইতিমধ্যে সম্মতিপত্র জমা দিয়েছেন। কিন্তু, সমস্যা বেধেছে দখল হয়ে থাকা জমি পুনরুদ্ধার নিয়ে।

কেব্‌লস কর্তৃপক্ষ জানান, এলাকার জোড়বাড়ি, বড়মুড়ি, নিউ মার্কেট, ওল্ড কলোনি, হস্টেল কলোনি, দেশবন্ধু পার্ক এলাকায় সংস্থার জমিতে পাকা নির্মাণ করে কয়েক হাজার মানুষ বাস করছেন। অধিগ্রহণের তোড়জোড় শুরু হওয়ার পরে বেগতিক বুঝে এই দখলদারেরা পুনর্বাসনের দাবি তুলেছেন। ‘হিন্দুস্তান কেবলস পুনর্বাসন সমিতি’ নামে একটি সংগঠন গড়ে তাঁরা এলাকায় বিক্ষোভও দেখিয়েছেন। তাঁদের দাবি, পুনর্বাসন না পেলে এলাকা ছেড়ে উঠবেন না তাঁরা। ওই সংগঠনের নেতা সুভাষ মহাজনের বক্তব্য, “প্রায় তিরিশ বছর ধরে এখানে মানুষ বাস করছেন। পুনর্বাসন না দিয়ে রাতারাতি তাঁদের ঘরছাড়া করা যাবে না।” মওকা বুঝে ঘোলা জলে মাছ ধরতে নেমেছে তৃণমূলও। দলের যুব নেতা পাপ্পু উপাধ্যায় বলেন, “কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি, জোর খাটিয়ে উচ্ছেদ করতে গেলে আমরা প্রতিবাদের রাস্তায় নামব।”

Advertisement

দখলদারদের এমন আচরণে ক্ষুব্ধ সংস্থার শ্রমিক-কর্মীরা। কারখানার ভাল চেয়ে তাঁরা দেশের যে কোনও প্রান্তে বদলি হওয়ার ব্যাপারে সম্মতি দিয়েছেন। অথচ, যাঁরা কারখানার জমি অবৈধ ভাবে দখল করে রেখেছেন, তাঁদের জঙ্গিপনায় অধিগ্রহন পর্ব ঘিরে আশঙ্কার মেঘ জমায় রীতিমতো বিরক্ত তাঁরা। কেব্‌লস কারখানার এস্টেট অফিসার তথা জনসংযোগ আধিকারিক হরিশঙ্কর চট্টোপাধ্যায় বলেন, “আমরা দখলদারদের নোটিস পাঠিয়ে ডাকা শুরু করেছি। কবে তাঁরা উঠে যাবেন, সেই নির্দিষ্ট সময় তাঁদেরই জানাতে বলা হচ্ছে। এর পরেও কাজ না হলে আইনি সাহায্য নিয়েই পরবর্তী পদক্ষেপ করব।”

কারখানার জমি পুনরুদ্ধার হোক, চাইছে শ্রমিক সংগঠনগুলিও। আইএনটিইউসি-র শাখা সম্পাদক উমেশ ঝা বলেন, “কারখানার অধিগ্রহণ পর্বে কোনও বাধাই কাম্য নয়।” সিটুর শাখা সম্পাদক মধু ঘোষের কথায়, “কারখানার জমি কর্তৃপক্ষ দখলমুক্ত করবে, এ নিয়ে আমাদের কিছু বলার নেই।” এইচএমএসের শাখা সম্পাদক বিরোজা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আমরা চাই কারখানার অধিগ্রহণ হোক। এক্ষেত্রে কোনও বাধা আসা উচিত নয়।”

কারখানা অধিগ্রহণের পিছনে দখল হয়ে যাওয়া জমি উদ্ধারের শর্ত আরোপ করা হয়েছে কেন? কারখানা সূত্রে জানা গিয়েছে, এখানে অর্ডিন্যান্স ফ্যাক্টরি বোর্ড সামরিক কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন সামগ্রী তৈরি করবে। নিরাপত্তার স্বার্থে পুরো অঞ্চলটি সংরক্ষণ করা হবে। সেই কারণেই সংস্থার দখল জমি পুনরুদ্ধার করে ঘিরে রাখা হবে।

কেব্‌লসের কর্মী-আধিকারিকদের একাংশের যুক্তি, রূপনারায়ণপুরের বিস্তীর্ণ এলাকায় সরকারি খাস জমি আছে। রাজ্য সরকার চাইলে কারখানার স্বার্থে সেই সব খাস জমিতে দখলদারদের তুলে দেওয়া হলে আর সমস্যা থাকবে না। কারখানা কর্তৃপক্ষ জেনেছেন, আছড়া ও উত্তররামপুর-জিতপুর পঞ্চায়েত এলাকায় কারখানার জমি দখল করে যাঁরা পাকা নির্মাণ করে বাস করছেন, তাঁদের নির্মাণের নকশা অনুমোদন করেছে সালানপুর পঞ্চায়েত সমিতি। এমনকী, বাসিন্দাদের কাছ থেকে নিয়মিত করও আদায় করছে তারা। পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি শ্যামল মজুমদার বলেন, “অত্যন্ত বেআইনি কাজ হয়েছে। কোন আমলে এটা হয়েছে, তা খুঁজে দেখব।” তবে তাঁর দাবি, “উচ্ছেদের আগে ওখানকার বাসিন্দাদের পুনর্বাসনের বিষয়টি মানবিকতার সঙ্গে দেখা উচিত।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন