কোথাও তারে কৌটো, কোথাও ভুল নথি দিয়ে চলছে বিদ্যুৎ চুরি

অবাধে বিদ্যুৎ চুরি চলছে কালনা মহকুমার সব কটি ব্লকে। কোথাও ট্রান্সফর্মার থেকে সরাসরি সংযোগ, আবার কোথাও মিটারে কারচুপিনানা উপায়ে চলছে এই চুরি। মহকুমা বিদ্যুৎ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, মহকুমার মধ্যে সবথেকে বেশি বিদ্যুৎ চুরির ঘটনা ঘটে মন্তেশ্বর ব্লকে। এই এলাকায় প্রায় সারা বছর ধরেই ধান চাষ করা হয়। চাষের জন্য মাটির তলা থেকে তুলতে হয় প্রচুর জল। অনেকে সাবমার্সিবল থেকে চাষিদের জল বিক্রি করেন। সব থেকে বেশি জল তোলা হয় বোরো চাষের মরসুমে।

Advertisement

কেদারনাথ ভট্টাচার্য

কালনা শেষ আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০০:৩০
Share:

তারে প্লাস্টিকের কৌটৌ ঝুলিয়ে দেদার চলছে হুকিং। —নিজস্ব চিত্র।

অবাধে বিদ্যুৎ চুরি চলছে কালনা মহকুমার সব কটি ব্লকে। কোথাও ট্রান্সফর্মার থেকে সরাসরি সংযোগ, আবার কোথাও মিটারে কারচুপিনানা উপায়ে চলছে এই চুরি।

Advertisement

মহকুমা বিদ্যুৎ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, মহকুমার মধ্যে সবথেকে বেশি বিদ্যুৎ চুরির ঘটনা ঘটে মন্তেশ্বর ব্লকে। এই এলাকায় প্রায় সারা বছর ধরেই ধান চাষ করা হয়। চাষের জন্য মাটির তলা থেকে তুলতে হয় প্রচুর জল। অনেকে সাবমার্সিবল থেকে চাষিদের জল বিক্রি করেন। সব থেকে বেশি জল তোলা হয় বোরো চাষের মরসুমে। বিদ্যুৎ চাহিদা বেশি থাকায় মন্তেশ্বর ব্লকের পুরশুড়ি, মালম্বা, মন্তেশর ১, মন্তেশর ২, ভাগরা এবং রায়গ্রামে রয়েছে বিদ্যুৎ দফতরের ৬টি ফিডার। এক একটি ফিডারের আওতায় রয়েছেন চার হাজারের বেশি গ্রাহক। দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এর মধ্যে পুরশুড়ি ফিডারে সবথেকে বেশি লোকসান হচ্ছে। এখানে লোকসানের পরিমাণ হল প্রায় ৯০ শতাংশ। এখানে কোথাও ১০০ কেবি, কোথাও ২৫ কেবি আবার কোথাও ১০ কেবি বহন ক্ষমতার ট্রান্সফর্মার বসিয়ে চুরি হচ্ছে বিদ্যুৎ। এই তথ্য পেয়ে তদন্তে নেমে বিদ্যুৎ দফতরের কর্তারা জানতে পারেন, বিভিন্ন জায়গাতে ব্যক্তিগত ট্রান্সফর্মার বসিয়ে দেদার বিদ্যুৎ চুরি চলছে। ফলে অন্যান্য এলাকায় প্রতি মাসে গড়ে ১৫ বার লাইন ট্রিপ করে লোডশেডিং হলেও পুরশুড়িতে সেই সংখ্যা হয়েছে প্রায় ২৫ বার। বিদ্যুৎ দফতরের এক কর্মীর অভিযোগ, “হুকিংয়ের কারণে জঙ্গল ঘেরা বিভিন্ন জায়গায় বিদ্যুতের তার ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। যে কোনও সময় ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। দ্রুত বড় অভিযানে না নামলে এই প্রবণতা আরও বাড়বে।” তিনি জানান, বিষয়টি ঊর্ব্ধতন কর্তৃপক্ষের নজরে আনা হয়েছে।

মন্তেশ্বরের তুলনায় কম হলেও কালনা মহকুমার বাকি চার ব্লকে বিদ্যুৎ চুরির পরিমাণ নিয়েও চিন্তিত বিদ্যুৎ কর্তারা। নান্দাই, ধাত্রিগ্রাম, কৃষ্ণদেবপুর, বেগপুর পঞ্চায়েতের কয়েকটি গ্রামে গেলেই নজরে আসবে তারের মাথায় কৌটো রেখে দেওয়ার মতো হুকিংয়ের বহু ছবি। সম্প্রতি ধাত্রিগ্রাম এলাকার একটি গ্রামে রাতে এক দুষ্কৃতীর খোঁজে তল্লাশিতে যায় পুলিশের একটি দল যায়। পুলিশের এক কর্তা জানান, গ্রামে পুলিশ দেখে হুকিং খুলতে হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। অবস্থা এমনই হয়েছিল যে অন্ধকারের মধ্যে অনেকেই বিদ্যুৎপৃষ্ঠ হতে পারত। মহকুমা বিদ্যুৎ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, কয়েক মাস আগে বেগপুর পঞ্চায়েতের একটি গ্রামে বিপিএল তালিকাভুক্তদের কয়েকটি সংযোগ থেকে বিল জমা না পড়ার অভিযোগ মেলে। বিষয়টির তদন্তে ঘটনাস্থলে যান কালনা ডিভিশনের এক আধিকারিক। সেখানে গিয়ে তিনি দেখেন বিভিন্ন বাড়িতে বৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে হুকিং করে দৈনন্দিন কাজ চলছে। বছর দু’য়েক ধরে এ ভাবে প্রায় ৫৬০০০ ইউনিট বিদ্যুৎ খরচ হয়েছে। বিদ্যুৎ কর্তাদের অভিযোগ, মহকুমার বহু উচ্চ মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবার বিভিন্ন কৌশলে নিজের বাড়িতে যে বিদ্যুৎ খরচ করছে তার বেশির ভাগই মিটারে উঠছে না। এক শ্রেণির মিটার রিডার আবার মিটারের সঠিক তথ্য দিচ্ছে না।

Advertisement

মহকুমা জুড়ে ব্যাপক বিদ্যুৎ চুরির কথা স্বীকার করেছেন বিদ্যুৎ দফতরের কালনা ডিভিশনাল ইঞ্জিনিয়ার চঞ্চল বিশ্বাস বলেন, “অবস্থার পরিবর্তনের জন্য প্রতি সপ্তাহে নিয়ম করে অভিযান চালানো হচ্ছে। পুরশুড়িতে মাটিতে ট্রান্সফর্মার রেখে ব্যাপক বিদ্যুৎ চুরির বিষয়টি দফতরের নজরে এসেছে। বড় বাহিনী নিয়ে অভিযান চালানোর পরিকল্পনা চলছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন