বর্ধমান থানায় ধৃত কর্মাধ্যক্ষ অলোক মাঝি। —নিজস্ব চিত্র।
একশো দিনের কাজ ও ইন্দিরা আবাসের বাড়ি তৈরি নিয়ে তৃণমূলের দু’টি গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় গ্রেফতার করা হল বর্ধমান জেলা পরিষদের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ স্থায়ী সমিতির কর্মাধ্যক্ষ অলোক মাঝিকে। তিনি তৃণমূলের খণ্ডঘোষ ব্লক সভাপতিও। বুধবার রাতে তাঁকে তাঁর শঙ্করপুর গ্রামের বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
জেলা পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জা বলেন, “দু’দল লোকের মধ্যে খণ্ডঘোষের কাপশিট গ্রামে বোমাবাজি হয়। স্থানীয় লোদনা পঞ্চায়েতের ১০০ দিনের কাজ, গ্রামের মোরাম রাস্তা নির্মাণের ঠিকাদারি কে পাবে, ইন্দিরা আবাস যোজনার বাড়ি তৈরি কারা করবে ইত্যাদি বিষয়কে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ বাধে। তাতে মোট পাঁচ জন আহত হন। তাঁদের বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। এই ঘটনার জেরে জেলা পরিষদ কর্মাধ্যক্ষ অলোক মাঝি-সহ দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।”
ধৃত জেলা পরিষদ কর্মাধ্যক্ষকে খণ্ডঘোষ থানার পুলিশ বৃহস্পতিবার বর্ধমান সিজেএম আদালতে তোলে। তাঁকে আদালতে পেশের সময়ে গোলমালের আশঙ্কায় প্রচুর পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল আদালত চত্বরে। ধৃত অলোকবাবুকে সাত জুলাই পর্যন্ত জেল-হাজতে রাখার নির্দেশ দেন বিচারক।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, খণ্ডঘোষে দীর্ঘদিন ধরে অলোক মাঝির অনুগামীদের সঙ্গে আর এক তৃণমূল নেতা মোয়াজ্জেম হোসেন মনির অনুগামীদের গোলমাল চলছিল। দু’পক্ষেরই বেশ কিছু লোক এর জেরে এলাকা ছাড়া হন। তাঁদের মধ্যে উখরিদ গ্রামে মনির বেশ কিছু অনুগামীকে সম্প্রতি পুলিশ ঘরে ফেরায়। জেলা পুলিশের একটি সূত্রের খবর, গোষ্ঠী-সংঘর্ষ বড় আকার নেওয়ায় শাসকদলের উচ্চ নেতৃত্বের তরফে পুলিশকে গোলমালে জড়িতদের শীঘ্র ধরতে বলা হয়।
অলোক মাঝির পাশাপাশি বুধবারের সংঘর্ষের ঘটনায় মনির অনুগামী মোজাম্মেল মল্লিককেও গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পুলিশ সূত্রের খবর, সংঘর্ষ বন্ধ করতে মোয়াজ্জেম হোসেন মনিকেও খোঁজা হচ্ছে। মনি তৃণমূলের খণ্ডঘোষের প্রাক্তন সভাপতি। তাঁকে সরিয়ে দেড় বছর আগে অলোকবাবুকে ব্লক সভাপতি করে দলের উচ্চ নেতৃত্ব। তার পরেই এলাকায় দলের গোষ্ঠী-কোন্দল বাড়ে।
সংঘর্ষে আহত হয়ে বধর্মান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি থাকা শেখ রাজুর অভিযোগ, “বুধবার বিকেলে কাপশিট গ্রামের বাজারে আমরা কয়েক জন বসেছিলাম। আচমকা আমাদের উপরে এক দল লোক চড়াও হয়। তারা আমাদের উপরে বোমা ছোড়ে। তাতে পাঁচ জন আহত হয়েছি।” এই লোকেরা কারা, তা অবশ্য তিনি বলতে চাননি। আর এক আহত শেখ আমিনুলের দাবি, “আমাদের উপরে যারা আক্রমণ করেছে, তারা এক সময়ে গ্রামে সিপিএম করত। এখন তৃণমূল করে।”
তৃণমূলের অন্যতম জেলা সম্পাদক উত্তম সেনগুপ্তের বক্তব্য, “অলোক মাঝিকে পুলিশ গ্রেফতার করার ঘটনায় এটা স্পষ্ট হচ্ছে যে, আমরা পুলিশের কাজে হস্তক্ষেপ করি না। আইন আইনের পথে যাতে চলে, সেটাই দেখেন দলের নেতারা। আমরা সর্বত্র দলের সমস্ত গোষ্ঠীকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে চলতে বলেছি। যাঁরা দলের এই নির্দেশ মেনে চলতে পারবেন না, দল তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।”