খোলা জায়গায় চলছে রান্না।—নিজস্ব চিত্র।
কোথাও খোলা আকাশের নীচে, কোথাও বা স্থানীয় প্রাথমিক স্কুল, শিশু শিক্ষা কেন্দ্র, ক্লাবের ভবন ধার করে চলছে কাজ। এমনই অবস্থা কালনা মহকুমার অধিকাংশ অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের।
মহকুমা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, কালনা ১ ও ২, পূর্বস্থলী ১ ও ২ এবং মন্তেশ্বর- এই ৫টি ব্লক জুড়ে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের সংখ্যা ১৪৯০ টি। কেন্দ্র প্রশাসনের শেষ তথ্য অনুসারে নিজস্ব ভবন রয়েছে মাত্র ৫৮৫টি কেন্দ্রের। এর মধ্যে মন্তেশ্বর ব্লকে সবথেকে বেশি সংখ্যক কেন্দ্রের নিজস্ব ভবন রয়েছে। সেখানে মোট ৩১২টি কেন্দ্রের মধ্যে ১৮৮ -টির নিজস্ব ভবন রয়েছে। কালনা ১ ব্লকে ১৩২, কালনা ২ ব্লকে ১৬৮, পূর্বস্থলী ১ ব্লকে ৪৩ এবং পূর্বস্থলী ২ ব্লকে ৫৪ টি কেন্দ্রের নিজস্ব ভবন রয়েছে। এর জেরে বাকি কেন্দ্রগুলির মধ্যে ৫০৭টির কাজ চলছে স্থানীয় প্রথমিক স্কুল ও শিশু শিক্ষা কেন্দ্রের ভবনে। সবথেকে খারাপ অবস্থা পূর্বস্থলী ১ ব্লকের। ওই ব্লকে ১৩৪টি কেন্দ্রের কাজ চলে স্থানীয় স্কুলগুলিতে। কালনা ১ ব্লকের ১২টি এবং পূর্বস্থলী ২ ব্লকের ২৪টি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের কাজ চলছে বিভিন্ন সরকারি ভবনের ঘরে। ৫টি ব্লকের মোট ৫০টি কেন্দ্রকে কাজ চালাতে হচ্ছে পাড়ার বিভিন্ন ক্লাবের ঘর নিয়ে। ৭৩টির মতো অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রকে কাজ চালাতে হচ্ছে বিভিন্ন ব্যক্তির বাড়ি ভাড়া নিয়ে। সবথেকে খারাপ অবস্থা ৭৩টি কেন্দ্রের। ওই কেন্দ্রগুলির কোথাও জায়গা না মেলায় কাজ চালাতে হচ্ছে খোলা আকাশের নীচে।
তবে শুধু ভবনের সমস্যায় নয় কেন্দ্রগুলি সঠিক ভাবে পরিচালনার জন্য অন্য পরিকাঠামোরও অভাব রয়েছে বলে অভিযোগ। প্রতিটি কেন্দ্রে একজন করে সুপারভাইজর থাকা প্রয়োজন। কিন্তু প্রতিটি ব্লকে মাত্র ২ বা ৩ জন করে সুপারভাইজর রয়েছেন। এর ফলে কেন্দ্রগুলির দৈনন্দিন কাজ পরিচালনার ক্ষেত্রেও সমস্যা হচ্ছে। পাশাপাশি প্রতিটি ব্লকে একজন করে সিডিপিও পদে আধিকারিক থাকায় সরকরি নিয়ম, সেখানে মহকুমার পাঁচটি ব্লকে রয়েছেন মাত্র দু’জন। তাঁদের একজনকে ৩টি ব্লক, অপরজনকে ২টি ব্লক দেখতে হয়।
কেন সব কেন্দ্রের নিজস্ব ভবন নেই? এই প্রশ্নের উত্তর খঁুজতে গিয়ে জানা গেল, ভবনের জন্য প্রয়োজনীয় জমি জোগাড় করা যাচ্ছে না। মূলত দু’ভাবে অঙ্গনওয়াড়ি প্রকল্পের জন্য জমি মেলে বলে জানা গেল। কোনও কেন্দ্রের কাছে খাস জমি থাকলে তা সরকারি ভাবে দেওয়া হয় ভবন নির্মাণের জন্য। দ্বিতীয়ত কোনও ব্যক্তি প্রকল্পের স্বার্থে জমি দিলে সরকারি খরচে তা রেজিষ্ট্রি করে দেওয়া হয়। মহকুমা প্রশাসনের তরফেও বেশিরভাগ ভবন না থাকার সমস্যা মেনে নেওয়া হয়েছে। মহকুমা শাসক সব্যসাচী ঘোষ বলেন, “অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র গুলির ভবন তৈরির জন্য অর্থের অভাব নেই, সমস্যা জমি না পাওয়া।” সব্যসাচীবাবু জানান, সমস্যার দ্রুত সমাধান করার জন্য ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিকদের খাস জমি চিহ্নিত করতে বলা হয়েছে। কেন্দ্রের লাগোয়া খাস জমি মিললেই তা বিলি করা হবে। মহকুমা শাসক জানান, শূন্য পদগুলি যাতে পূরণ করার জন্য উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। পূর্বস্থলী দক্ষিণ কেন্দ্রের বিধায়ক তপন চট্টোপাধ্যায় যদিও জানান, সমস্যা সমাধানে কয়েকটি কেন্দ্রের জন্য জমির ব্যবস্থা করা হয়েছে। আবার কয়েকটি কেন্দ্রের কাজ চালানো হচ্ছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।