মাঠে কাজ করার সময়ে জামালপুর ও রায়নার তিনটি গ্রামে বজ্রাঘাতে মৃত্যু হল মোট পাঁচ জনের। আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও দু’জন। রবিবার সকালে জামালপুরের পাঁচড়া-শিমুলডাঙা ও ধুলুক এবং রায়নার আউশারা গ্রামে এই ঘটনা ঘটে।
জেলা পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জা জানান, এ দিন সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ মাঠে কাজ করার সময়ে বাজ পড়ে মৃত্যু হয় পাঁচড়া-শিমুলডাঙা গ্রামের সুকুমার ক্ষেত্রপাল (৩৪) ও অনিল মালিকের (৩২)। ধুলুক গ্রামে মৃত্যু হয় যিশু হাঁসদা (১৭) ও দীপু কিস্কু (১৭) নামে আরও দু’জনের। আউশারায় বজ্রাঘাতে মারা গিয়েছেন হরিসাধন পণ্ডিত (৩৫)।
পুলিশ সুপার আরও জানান, আউশারা গ্রামে অশোক পণ্ডিত নামে এক বাসিন্দা আহত হয়েছেন। এ দিন সকালেই মেমারির কেজা গ্রামে বজ্রাঘাতে আহত হন বৈদ্যনাথ সরেন নামে এক ব্যক্তি। অশোকবাবু ও বৈদ্যনাথবাবুকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, সকালে এই সাত জনই চাষের কাজ করছিলেন। সেই সময়েই বজ্রপাত হয়। সাত জনই পেশায় খেতমজুর।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, আউশারা গ্রামে হরিসাধনবাবুর মৃত্যুর খবর পাওয়ার পরপরই কীটনাশক পান করে অসুস্থ হয়ে পড়েন তাঁর স্ত্রী ঝুমাদেবী। তাঁকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে।
জামালপুরের বিধায়ক তথা তৃণমূলের পরিষদীয় দলনেতা উজ্জ্বল প্রামাণিক বলেন, “আমি রায়না ও জামালপুরের তিনটি গ্রামেই গিয়েছিলাম। হাসপাতালে গিয়ে আহতদের সঙ্গেও কথা বলেছি।” তাঁর দাবি, “মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানিয়েছিলাম, মৃতের পরিবারের লোকজনকে যদি কিছু ক্ষতিপূরণ দেওয়া যায়। তিনি পরে আমাকে ফোন করে জানিয়েছেন, মৃতদের পরিবার পিছু দু’লক্ষ টাকা করে দেওয়া হবে। সে কথা মৃতদের পরিবারকে জানিয়ে দিতে বলেছেন।”
বজ্রাঘাতে আহত হয়ে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি, আউশারার বাসিন্দা অশোকবাবু রবিবার দুপুরে বলেন, “এ বার দেরিতে বৃষ্টি শুরু হওয়ায় আমরা আজ দল বেঁধে ধানের বীজতলা তৈরি করতে গ্রামের খেতে গিয়েছিলাম। কাজ শুরু হয়েছিল ভোর থেকে। সাড়ে ৮টা নাগাদ প্রচুর বৃষ্টি শুরু হয়। তাতে ধানের চারা বেঁচে যাবে, এই কথা ভেবে আমরা সকলেই খুব খুশি ছিলাম। হরিসাধন আমার সঙ্গেই মাঠে কাজ করছিল। হঠাত্ বিকট শব্দে বাজ পড়ে। আমি ছিটকে পড়ি। উঠে দেখি, হরিসাধন মাটিতে পড়ে। ওর শরীর কালো হয়ে গিয়েছে।”
পাঁচড়া গ্রামের বাসিন্দা শেখ মাজেদ বলেন, “অনেক দিন পরে আমাদের গ্রামে বৃষ্টি হয়েছে। তাতে আমরা ভেবেছিলাম, এত দিন পরে চাষের কাজ শুরু হবে। খেতমজুরেরা কাজ পাবে। সকাল থেকে আমরাও দলে-দলে মাঠে চাষের কাজ শুরু করে দিয়েছিলাম। তখনই এমন ঘটে গেল!” ওই গ্রামেরই গণেশ হাঁসদার কথায়, “বাজ পড়ার পড়ে আমরা সকলে হতভম্ব হয়ে যাই। সম্বিত ফিরতে দেখি সুকুমার আর অনিল মাটিতে পড়ে রয়েছে। আমরা ওদের তড়িঘড়ি হাসপাতালে নিয়ে গিলে দু’জনকেই মৃত বলে জানানো হয়।”