কুলটিতে তৃণমূল প্রার্থী দোলা সেনের সঙ্গে মমতা। ছবি: শৈলেন সরকার।
খনি এলাকায় এই গ্রীষ্মে দুপুর ২টোয় সভা শুনে ভ্রু কুঁচকেছিলেন অনেকে। এমনকী, তাঁদের মধ্যে ছিলেন দলের কিছু নেতা-কর্মীও। কিন্তু প্রায় ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসেও সভা শুরুর অনেক আগে থেকে উপচে পড়া ভিড়। এক জায়গায় নয়, তিন-তিনটি সভাতেই। শুধু তাই নয়, পরিস্থিতি এমন দাঁড়াল যে ভিড় সামলাতে বাঁশের ব্যারিকেড খুলে দিতে হল পুলিশকে। এক সময়ে সভার মঞ্চ থেকে নীচে নেমে এসে জনতাকে শান্ত করতে হল নেতা-কর্মীদের।
আসানসোল কেন্দ্রে দলীয় প্রার্থী দোলা সেনের সমর্থনে শুক্রবার কুলটি, সালানপুর ও রানিগঞ্জে সভা করলেন তৃণমূল নেত্রী তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রথম সভাটি ছিল কুলটিতে। নির্ধারিত সময়ের মিনিট কুড়ি পরে সভাস্থলে পৌঁছন মমতা। গাড়ি থেকে নেমে সোজা মঞ্চে না গিয়ে কিছুক্ষণ নীচে দাঁড়িয়েই নিচুগলায় আলোচনা সারেন আসানসোল উত্তরের বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী মলয় ঘটকের সঙ্গে। সেই ফাঁকে প্রথমে হাত নাড়তে নাড়তে মঞ্চে উঠলেন সদ্য নির্বাচিত রাজ্যসভার সাংসদ তথা অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তী। মঞ্চে উঠেই একেবারে ফিল্মি কায়দায় বললেন, ‘নমস্কার, ক্যায়সে হ্যায়। বাংলায় বলব, না হিন্দিতে। আচ্ছা ঠিক আছে, দোনো ভাষামেই বোলেঙ্গে।’’
হুড়োহুড়ি রানিগঞ্জের সভায়। ছবি: ওমপ্রকাশ সিংহ।
মিঠুন কিছুক্ষণ বক্তৃতা করার পরে মাইক হাতে নিলেন মমতা। তার পরেই তুলোধুনো বাম থেকে শুরু করে কংগ্রেস, বিজেপিকে। তৃণমূল নেত্রী এ দিন অভিযোগ করেন, আসানসোলের বর্তমান সাংসদের অসহযোগিতাতেই কুলটির জলপ্রকল্পটি হয়নি। তবে কুলটির তৃণমূল পরিচালিত পুরবোর্ড নতুন একটি জলপ্রকল্প তৈরি করেছে। তাঁরাই সেটি করবে। এর পরেই মমতা অভিযোগ করেন, ভোট এলেই সিপিএম ও কংগ্রেস তলায়-তলায় মিলে যায় তৃণমূলকে হারানোর জন্য। সঙ্গে নেয় বিজেপিকেও। সিপিএম এত কাল একটি লক-আউটের, ধ্বংসের ও দেনার রাজনীতি করেছে দাবি করে এ বার এখানে তৃণমূল প্রার্থী দোলা সেনকে জেতানোর ডাক দেন তিনি।
ক্ষমতায় আসার পরে রাজ্যে তৃণমূলের সরকার কী কী করেছে, এ দিন তার ফিরিস্তি দেন মমতা। তাঁর দাবি, রেলমন্ত্রী থাকার সময়ে তিনি সেলের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে কুলটিতে একটি ওয়াগন কারখানা তৈরির ব্যাপারে উদ্যোগী হয়েছিলেন। চিত্তরঞ্জনের রেল ইঞ্জিন কারখানার আধুনিকীকরণের ব্যবস্থা করেছেন। আসানসোলে জেলা হাসপাতাল বানিয়েছেন। আসানসোলে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ও বানিয়েছেন। তাঁর দাবি, এই শহরে কাজী নজরুলের জন্মভিটে হলেও এত দিন তাঁর নামে কিছুই হয়নি। তাই বিশ্ববিদ্যালয় গড়া হয়েছে তাঁর নামে। অন্ডাল বিমানবন্দরও নজরুলের নামে করা হচ্ছে।
খনি এলাকার দীর্ঘ দিনের সমস্যা বেআইনি খাদানও এ দিন ঘুরে-ফিরে আসে তৃণমূল নেত্রীর বক্তব্যে। তিনি দাবি করেন, আসানসোল-দুর্গাপুরে পুলিশ কমিশনারেট তৈরি হওয়ার জন্যই এখানে অবৈধ কয়লার রমরমা কারবার বন্ধ হয়েছে। তাই ইসিএল একটি লাভজনক সংস্থায় পরিণত হয়েছে। রানিগঞ্জের সভায় তিনি বলেন, “বেআইনি খাদানে কাজ করতে গিয়ে বহু গরিব মানুষের মৃত্যু হয়েছে। আমরা কেন্দ্রকে কয়লা শিল্পে কেন্দ্র ও রাজ্য যাতে যৌথ ভাবে কাজ করতে পারে, সেই প্রস্তাব দিয়েছিলাম। তাতে পরিকল্পনামাফিক কাজ হবে। গরিব মানুষ কাজ পাবে। কেন্দ্রে আমাদের সরকার তৈরি হলে এই দাবি পূরণ হবে।” তাঁর আরও দাবি, বীরভূম সীমান্তে নতুন কোল ব্লক তৈরি হবে। এর ফলে ৫ লক্ষ বেকার যুবকের চাকরি হবে। ডিভিসি, এনটিপিসি এবং সেলের আধুনিকীকরণ হচ্ছে। ছোট-মাঝারি সংস্থায় ১০ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ হচ্ছে রাজ্যে। ফলে, বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান হবে। আসানসোল-রানিগঞ্জের ধস সমস্যা সমাধানেও তাঁরা উদ্যোগী হয়েছেন বলে আশ্বাস দেন মমতা। তিনি জানান, একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি তৈরি করা হয়েছে। সেই কমিটি রিপোর্ট দিলেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কুলটি জলপ্রকল্প বাতিল নিয়ে তৃণমূল নেত্রীর দোষারোপ প্রসঙ্গে আসানসোলের বিদায়ী সাংসদ তথা এ বারের সিপিএম প্রার্থী বংশগোপাল চৌধুরী বলেন, “ কেন্দ্রীয় প্রকল্পের আওতায় এই কাজটি আমরাই এনেছিলাম। কেন্দ্রীয় সরকার এডিডিএ-কে নোডাল এজেন্ট করেছিল। অর্থাৎ, প্রকল্প গড়ার দায়িত্বে এডিডিএ-ই ছিল। প্রকল্প তৈরি হয়ে গেলে সেটি কুলটি পুরসভার হাতে তুলে দেওয়ার কথা। কারণ, ১৩৩ কোটি টাকার প্রকল্প তৈরির মতো পরিকাঠামো পুরসভার নেই। কিন্তু ওরাই প্রকল্প গড়তে চেয়ে আদালতে চলে গেল। তা থেকেই তো গোলমাল বাধল।”