কেরিয়ার শুরু করেছিলেন তারকা-পুত্রের সঙ্গে। কেরিয়ারের প্রথম ছবি বক্সঅফিসে মুখ থুবড়ে পড়েছিল। তবে, নায়ক-নায়িকার পরবর্তী কেরিয়ার বয়ে গিয়েছিল ভিন্ন খাতে। সেই নায়কের অভিনয়দক্ষতা নিয়ে বর্তমানে চতুর্দিকে প্রশংসার ছড়াছড়ি। অন্য দিকে, গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে বড় পর্দা থেকে একেবারেই ‘উধাও’ হয়ে গিয়েছেন অভিনেত্রী অঞ্জলা জ়াভেরি।
১৯৭২ সালের এপ্রিল মাসে ইংল্যান্ডের পোর্টসমাউথের এক প্রবাসী গুজরাতি পরিবারে জন্ম অঞ্জলার। বিদেশে থাকলেও মাঝেমধ্যেই আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে দেখা করতে পরিবার-সহ ভারতে আসতেন তিনি। সেই সূত্রেই হিন্দি ছবির সঙ্গে পরিচিতি হয় অঞ্জলার।
চিকিৎসক হওয়ার ইচ্ছা ছিল অঞ্জলার। এমনকি, ব্রিটেনের কোন কলেজে পড়াশোনা করবেন, তা-ও স্থির করে ফেলেছিলেন তিনি। মেডিসিন নিয়ে এ-লেভেলের পড়াশোনা করছিলেন তিনি। সেই সময় তাঁর উপর নজর পড়েছিল বিনোদ খন্নার।
কানাঘুষো শোনা যায়, বিনোদ খন্না বলিপাড়ায় তাঁর পুত্র অক্ষয় খন্নার অভিষেক করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু অক্ষয়ের বিপরীতে কোন নায়িকা অভিনয় করবেন, সেই সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলেন না। নতুন মুখের সন্ধানে ছিলেন বিনোদ। সেই ইচ্ছা পূরণ হয়েছিল বিদেশের মাটিতে।
বলিপাড়া সূত্রে খবর, ইংল্যান্ডে গিয়ে অঞ্জলাকে ছেলের নায়িকা হিসাবে পছন্দ করে ফেলেছিলেন বিনোদ। তখন পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন অঞ্জলা। তা সত্ত্বেও হিন্দি ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাব পেয়ে তা ফেরাতে পারেননি তিনি। পরিবারের তেমন মত না থাকলেও অভিনয় করতে মুম্বই চলে গিয়েছিলেন অঞ্জলা।
১৯৯৭ সালে বিনোদের প্রযোজনায় প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ‘হিমালয় পুত্র’। অক্ষয় এবং অঞ্জলার পাশাপাশি এই ছবিতে অভিনয় করেছিলেন বিনোদ, হেমা মালিনী, ড্যানি ডেনজ়ংপা, জনি লিভার, সতীশ শাহের মতো তারকারা। কিন্তু সেই ছবি বক্সঅফিসে মুখ থুবড়ে পড়েছিল।
কেরিয়ারের প্রথম ছবি ব্যর্থ হলেও পরে অবশ্য ‘বর্ডার’ ছবিতে অভিনয় করে বলিউডে নিজের জায়গা তৈরি করে ফেলেছিলেন অক্ষয়। কিন্তু অঞ্জলার বিশেষ লাভ হয়নি। তিনি স্থির করে ফেলেছিলেন যে, অভিনয়জগতে পসার জমাতে না পারলে তিনি আবার বিদেশে গিয়ে পড়াশোনা শুরু করবেন।
‘বেতাবি’, ‘মুসকান’, ‘বাজার’, এমনকি সলমন খান এবং কাজল অভিনীত ‘প্যার কিয়া তো ডরনা কয়া’ ছবিতেও অভিনয় করতে দেখা গিয়েছিল অঞ্জলাকে। তবে হিন্দি ছবিতে অভিনয় করে নামডাক হচ্ছিল না তাঁর। তাই দক্ষিণী ছবিতে অভিনয়ের জন্য অডিশন দিতে শুরু করেছিলেন তিনি।
১৯৯৭ সালে তেলুগু অভিনেতা দগ্গুবতী ভেঙ্কটেশের সঙ্গে অভিনয়ের সুযোগ পান অঞ্জলা। দু’বছর পর জনপ্রিয় তেলুগু অভিনেতা চিরঞ্জীবীর সঙ্গেও অভিনয় করেন তিনি। চিরঞ্জীবীর সঙ্গে যে ছবিতেই অঞ্জলা অভিনয় করতেন, সে ছবিই বক্সঅফিসে দুর্দান্ত সফল হত। অনেকের ধারণা ছিল, চিরঞ্জীবীর ‘লাকি চার্ম’ অঞ্জলা।
তেলুগু ভাষার পাশাপাশি তামিল, মালয়ালম এবং কন্নড় ভাষার ছবিতে অভিনয় করেন অঞ্জলা। নব্বইয়ের দশকে নন্দমুরি বালকৃষ্ণ, চিরঞ্জীবী, নাগার্জুনের মতো প্রথম সারির নায়কের সঙ্গে অভিনয় করে বক্সঅফিস জয় করেছিলেন অঞ্জলা। বলিউডের তুলনায় দক্ষিণী ছবিতে অভিনয় করে নাম, যশ, এমনকি পারিশ্রমিক পর্যন্ত বেশি পেতেন তিনি। কিন্তু অভিনয় নিয়ে বেশি দূর এগোতে পারলেন না অঞ্জলা।
কানাঘুষো শোনা যেতে থাকে যে, অভিনয়জগতে আসার পর ভাষাগত সমস্যায় ভুগছিলেন অঞ্জলা। বলিউড এবং দক্ষিণের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে ক্রমে পিছিয়ে পড়তে শুরু করেছিলেন তিনি।। অঞ্জলার মাতৃভাষা ছিল গুজরাতি। তার উপর ইংল্যান্ডে অধিকাংশ সময় কাটানোর কারণে হিন্দি অথবা দক্ষিণী ভাষা আয়ত্তে আনতে সমস্যা হচ্ছিল তাঁর।
২০১২ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘লাইফ ইজ বিউটিফুল’ নামের তেলুগু ভাষার একটি ছবিতে শেষ অভিনয় করতে দেখা যায় অঞ্জলাকে। বলিউড এবং দক্ষিণের চলচ্চিত্রজগৎ থেকে নিজেকে পুরোপুরি সরিয়ে নিয়েছেন তিনি।
আলোর রোশনাই থেকে সরে গিয়ে স্বামী, সংসার নিয়ে ব্যস্ত রয়েছেন অঞ্জলা। বলিপাড়া সূত্রে খবর, করিনা কপূর খানের ‘প্রেমিকের’ সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধেছেন তিনি।
২০০৭ সালে ইমতিয়াজ আলির পরিচালনায় প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ‘জব উই মেট’ নামের জনপ্রিয় হিন্দি ছবিটি। সেই ছবিতে করিনার বিপরীতে জুটি বেঁধেছিলেন বলি অভিনেতা শাহিদ কপূর। করিনার প্রেমিকের চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছিল তরুণ অরোরাকে। করিনার পর্দার সেই ‘প্রেমিক’কেই বিয়ে করেছেন অঞ্জলা।
বলিপাড়া সূত্রে খবর, কাজের সূত্রে তরুণের সঙ্গে আলাপ হয়েছিল অঞ্জলার। তাঁদের বন্ধুত্ব ক্রমে প্রেমে পরিণতি পায়। কয়েক বছর সম্পর্কে থাকার পর বিয়ে করে ফেলেন তাঁরা। বিয়ের পর সন্তান না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁরা।
অঞ্জলা অভিনয়জগৎ থেকে সরে আসলেও তরুণ এখনও অভিনয় করেন। দক্ষিণী ছবিতে অভিনয় করতে দেখা যায় তাঁকে। ২০২৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘ভোলা শঙ্কর’ নামের তেলুগু ভাষার একটি ছবিতে শেষ অভিনয় করতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। আলোর রোশনাই থেকে সরে গেলেও মাঝেমধ্যেই তরুণের সমাজমাধ্যমের পাতায় অঞ্জলার দেখা পাওয়া যায়।