জেনারেটর চালাতে দেরির অভিযোগে হাসপাতালের কয়েকজন কর্মীকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে রোগীর পরিজনদের বিরুদ্ধে। বুধবার গভীর রাতে শহরের অনাময় সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ঘটনাটি ঘটে। পরে ঘটনায় জড়িতদের নাম-ঠিকানা দিয়ে তানায় অভিযোগ দায়ের করেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তবে পুলিশ এখনও কাউকে গ্রেফতার করেনি।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবার সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ হাসপাতালের বিদ্যুৎ চলে যায়। পরে সাড়ে ১২টা নাগাদ বিদ্যুৎ আসে। তবে কিছুক্ষণের মধ্যেই আবার চলে যায়। রোগীর আত্মীয়দের অভিযোগ, সন্ধ্যায় জেনারেটর চালানো হলেও রাতে বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার পরে জেনারেটর চালানো হয়নি। এরপরেই মারধর শুরু করেন ক্ষুব্ধ আত্মীয়েরা। হাসপাতাল কর্মীদের অভিযোগ, রাতেই ওই হাসপাতালের আইসিসিইউ ওয়ার্ডের আট নম্বর বেডে ভর্তি এক মহিলার বাড়ির লোকেরা প্রথমে কার্ডিওলজি বিভাগের ওয়ার্ড বয় পিন্টু মণ্ডলকে মারতে মারতে জেনারেটর ঘরে নিয়ে যান। সেখানে জেনারেটর চালানোর লোক সুভাষ মাহাতোকেও মারধর করে ওয়ার্ড মাস্টার অফিসে ফিরে আসেন তাঁরা। পরে সেখানে কতর্ব্যরত অফিস-ইন-চার্জ কাজি সিরাজুল হক ও সিকিউরিটি স্টাফ শিবশঙ্কর দত্তকে মাটিতে ফেলে মারধর করা হয় ও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করা হয়। ওয়ার্ড মাস্টারের অফিসের টেলিফোনটিও ভেঙে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ।
প্রহৃতদের আরও দাবি, ঘটনার খবর পেয়ে বর্ধমান থানার পুলিশ হাসপাতালে যায়। পরে লিখিত ভাবে অভিযোগ দায়ের করতে বলে চলে আসে। তবে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বর্ধমান থানার আইসি আব্দুল গফ্ফর বলেন, “ওই ঘটনার তদন্ত করা হচ্ছে। তবে কাউকে আমরা গ্রেফতার করিনি।” কিন্তু হাসপাতালের দায়ের করা এফআইআরে প্রহারকারীদের পাঁচজনের নাম ধাম থাকা সত্বেও কেন অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা হয়নি তার সদুত্তর তিনি দিতে পারেননি।
ওই সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের আইসিসিইউতে অনেক গুরুতর অসুস্থ রোগীকে ভর্তি করানো হয়। তাঁদের বেশিরভাগই হৃদরোগী। তা সত্ত্বেও ওই রাতে জেনারেটর চালানো হল না কেন? রোগীদের দাবি, ওই ওয়ার্ডে তাঁদের বাড়ির লোকেদের সঙ্গে নিয়মিত দুর্ব্যবহার করেন এক শ্রেনীর আয়া ও ওয়ার্ড বয়েরা। বুধবার রাতের মারধরের ঘটনার পিছনেও ওই দুর্ব্যবহার রয়েছে বলে তাঁদের দাবি।
তবে হাসপাতালের ডেপুটি সুপারকে লেখা ঘটনার অভিযোগে ওয়ার্ড মাস্টার অফিসের ইনচার্য কাজি সামসুল হক দ্বিতীয়বার জেনারেটার না চালানোর কারণ হিসেবে বলেন, “জেনারেটর চালাতে ১০ মিনিট দেরি হয়েছিল। কারণ যাঁর ওই জেনারেটর চালানোর কথা তিনি শৌচাগারে গিয়েছিলেন। তাতেই দেরি হয়েছে।”
যদিও বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের সহ-অধ্যক্ষ উৎপল দাঁ বলেন, “জেনারেটর দ্বিতীয়বার চালাতে কুড়ি থেকে পঁচিশ মিনিট দেরি হয়েছিল। আসলে আমাদের জেনারেটার চালানোর লোক নেই। চুক্তি ভিত্তিক চতুর্থশ্রেনীর ঠিকা কর্মীদের দিয়ে ওই কাজ করানো হয়। তার উপর ওই জেনারটর জেলা পরিষদ থেকে দেওয়া হলেও তার দায়িত্ব এখনও নেয়নি পিডবলিউডি।” তবে উৎপলবাবুর দাবি, জেনারেটর না চালানো আসলে অজুহাত মাত্র। হাসপাতালের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতেই কর্মীদের মারধর ও গালিগালাজের ঘটনা ঘটিয়েছেন কিছু লোক।