জার্সি কিনে, পতাকা টাঙিয়ে তৈরি শহর

মহারণ শুরু হতে বাকি আর ঘণ্টা কয়েক। সবুজ মাঠে বিশ্বযুদ্ধে নামবে ৩২ দেশ। জার্সি কিনে, পতাকা এঁকে, ফেস্টুন টাঙিয়ে তৈরি দুর্গাপুর শহরও। এ বার শুধু বল মাঠে গড়ানোর অপেক্ষা। কেউ জপছেন মেসি-নাম। কারও গলায় শুধু নেইমার।

Advertisement

সুব্রত সীট

দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ১২ জুন ২০১৪ ০০:৩৭
Share:

ক্লাবের দেওয়ালে চলছে নানা দেশের পতাকা আঁকা।

মহারণ শুরু হতে বাকি আর ঘণ্টা কয়েক।

Advertisement

সবুজ মাঠে বিশ্বযুদ্ধে নামবে ৩২ দেশ। জার্সি কিনে, পতাকা এঁকে, ফেস্টুন টাঙিয়ে তৈরি দুর্গাপুর শহরও। এ বার শুধু বল মাঠে গড়ানোর অপেক্ষা।

কেউ জপছেন মেসি-নাম। কারও গলায় শুধু নেইমার। কেউ কেউ আবার রোনাল্ডো ছাড়া কারও কথা ভাবতেই পারছেন না। তারকা নিয়ে মতভেদ থাকলেও সব মিলেমিশে যাচ্ছে এক জায়গায়আজ, বৃহস্পতিবার গভীর রাত থেকে আগামী মাসখানেক রাত নামলেই টিভি-র পর্দায় চোখ রাখবেন সকলে। মহারণের সাক্ষী হতে।

Advertisement

রাত জেগে খেলা দেখার ব্যবস্থা মোটামোটি সকলেই পাকা করেছে ফেলেছেন বুধবারের মধ্যে। ধুম পড়েছে নানা দেশের জার্সি কিনতেও। ব্রাজিল-আর্জেন্তিনার পতাকায় মুখ ঢেকেছে পাড়ার মোড়। সব মিলিয়ে বিশ্বকাপ-জ্বরে আক্রান্ত এই শিল্পশহর।

বিক্রেতাদের অভিজ্ঞতায়, প্রতি বারের মতোই ব্রাজিল ও আর্জেন্তিনার জার্সি বেশি বিক্রি হচ্ছে। তার পরেই ইংল্যান্ড, জার্মানি ও স্পেন। চণ্ডীদাস বাজারের একটি দোকান মালিক সঞ্জীব নাগ বলেন, “দেরিতে হলেও জেগে উঠেছে শহর। অন্য বার আরও আগে থেকে জার্সি বিক্রির ধুম লেগে যায়। এ বার সপ্তাহখানেক আগে থেকে তা শুরু হয়েছে।” বেনাচিতি বাজারের ব্যবসায়ী খোকন গড়াই বলেন, “স্কুল-কলেজের পড়ুয়ারাই বেশি জার্সি কিনছে। তবে খদ্দেরের তালিকায় মেয়েরা সে ভাবে নেই।” বিধাননগরের এক বেসরকারি ম্যানেজমেন্ট কলেজের ছাত্রী বিপাশা বণিক বা অনন্যা দাসেরা অবশ্য তা মানতে নারাজ। তাঁদের কথায়, “কে বলেছে মেয়েরা জার্সি কিনছে না? আমরা চার বন্ধু এক সঙ্গে গিয়ে ব্রাজিলের জার্সি কিনে এনেছি।”

জার্সি বাছছেন ক্রেতারা।

বিপাশা, অনন্যারা জানান, এমনিতে তাঁদের পছন্দ আর্জেন্তিনা। কিন্তু স্রেফ নেইমারের জন্য এ বার তাঁরা ব্রাজিলের সমর্থক। বিধাননগরেরই বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ছাত্র অভিষেক দাস, সুনন্দ মুখোপাধ্যায়েরা আবার মেসি-ভক্ত। তাঁরা বলেন, “মেসি ছাড়া আর কারও কথা ভাবতে পারছি না। ব্রাজিলের নেইমার ছাড়া আর আছেটা কে? বাজি ধরাই যায়!” দুর্গাপুর গভর্নমেন্ট কলেজের ছাত্র জয়দীপ সেনগুপ্ত সরকার অবশ্য অন্য বাজির কথা শোনালেন। “পেলে যখন ব্রাজিলের পরে ইংল্যান্ডের দিকে বাজি ধরেছেন তখন আমাদেরও ভাবতে হবে বইকি!”

তর্কাতর্কির মধ্যেই শহরের নানা ক্লাবে চলছে এক সঙ্গে রাত জেগে বসে খেলা দেখার প্রস্তুতি। কোথাও বড় টিভি ভাড়া নেওয়া হয়েছে তো কোথাও প্রজেক্টর। প্রচণ্ড গরমের কথা মাথায় রেখে বাড়তি পাখাও লাগানো হচ্ছে। কোথাও কোথাও রাতে থাকছে খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা। ইস্পাত কলোনির একটি ক্লাবের কর্তা তপন পাল বলেন, “বাড়িতে বিছানায় শুয়ে খেলা দেখা যেতেই পারে। কিন্তু এক সঙ্গে বসে দেখার যে উন্মাদনা, তা তো আর পাওয়া যাবে না! তাই বড় পর্দার টিভি ভাড়া নেওয়া হয়েছে ক্লাবে।” ডিপিএল সি-জোনের একটি ক্লাবের দেওয়ালে আবার বিশ্বকাপে যোগ দেওয়া দেশগুলির জাতীয় পতাকা আঁকা হয়েছে দেওয়ালে। ক্লাবের সভাপতি দেবব্রত দাস বলেন, “এতে বিশ্বকাপ নিয়ে আগ্রহ বাড়বে আশপাশের মানুষের।” ক্লাবের সদস্য সুদীপ লাহা বলেন, “যত বেশি সম্ভব মানুষকে বিশ্বকাপ দেখানো যায়, সেই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”

এত প্রস্তুতির মাঝেও কারও কারও মনে একটা কাঁটা খোঁচা দিয়েই চলেছে। “কত নতুন দেশ যোগ্যতার প্রমাণ দিয়ে পৌঁছে গেল বিশ্বকাপের আসরে। আর আমরা যেন দিন-দিন আরও পিছিয়ে পড়ছি!”বলছিলেন দুর্গাপুর মহকুমা ক্রীড়া সংস্থার অন্যতম কর্তা বিধান মজুমদার। পেশায় কলেজ শিক্ষক শ্রীবেশ টিকাদার, ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়া মনোজ বসুরা আবার বলছেন, “শুনেছিস, ’৫০-এ ব্রাজিল বিশ্বকাপে আমাদের দেশকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। কিন্তু তা গ্রহণ করেননি এ দেশের ফুটবল কর্তারা। কে জানে, আরও কত দিন এই রকম একটা মঞ্চের বাইরে থাকতে হবে আমাদের!”

ছবি: বিশ্বনাথ মশান।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন