জগ-বোমা কাণ্ডে রবিবার পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। যদিও মহকুমা পুলিশের দাবি, তদন্তের কাজ এগিয়েছে অনেকটাই।
শুক্রবার রাতে শুতে যাওয়ার আগে ফোন বেজে ওঠে কালনা ২ ব্লকের পূর্ব সাতগাছিয়া পঞ্চায়েতের হাঁসপুকুর গ্রামের তৃণমূল নেতা অনন্ত হালদারের। অন্তবাবুর দাবি, ফোনে জানানো হয় তাঁর বাড়ির কাছে কোটি টাকার সম্পদ পড়ে রয়েছে। তা উদ্ধার করলে ১০ লক্ষ টাকার ইনামের কথাও জানানো হয়। বেশ কয়েকবার ফোন আসার পরে পরের দিন ভোরে ভাইকে নিয়ে বাড়ির কাছে খোঁজ করেন অনন্তবাবু। তাঁদের নজরে আসে, বাঁশবাগানের মধ্যে একটি কাগজে মোড়া একটি পিতলের জগ পড়ে রয়েছে। অনন্তবাবুর দাবি, জগের নীচ থেকে বেরোনো লোহার রড দেখে সন্দেহ হয়। দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে দৌড়ে এসে পুলিশে খবর দেন তাঁরা। পরে বোম্ব ডিসপোসাল দলের সদস্যরা এসে জগটিকে দড়ি বেঁধে টেনে নিয়ে যাওয়ার সময় বোমাটি ফেটে যায়। অনন্তবাবুর অভিযোগ, তাঁকে খুন করতেই ওই বোমাটি রাখা হয়েছিল।
পুলিশের দাবি, পিতলের জগের মধ্যে বোমা রাখার কারণ যাতে সেটি দেখে সোনা মনে হয় এবং সহজেই ওই নেতা প্রলুদ্ধ হন। জগটির উপরের অংশ প্লাস্টার অফ প্যারিস দিয়ে আটকানো ছিল বলেও জানা গিয়েছে। পুলিশের দাবি, হাতলওয়ালা জগটির গায়ে নানা জায়গায় ঝাল দেওয়া ছিল। অত্যন্ত কৌশলে সালফার, জালকাঠি-সহ নানান বিস্ফোরক ব্যবহার করে বোমাটি তৈরি করা হয়েছিল বলেও। এমনকী, বোমার নীচের অংশের রড যাতে মাটিতে ঠেকে না যায় তার জন্য দুটি ইটের উপর জগটি রেখে, মাঝখানটি ফাঁকা রাখা হয়েছিল। পুলিশের দাবি, বোমা নিষ্ক্রীয়কারী দলের সদস্যেরা সেটি নিয়ে যাওয়ার সময় নীচের অংশের লোহার রডের সঙ্গে ঘষা লাগতেই বিস্ফোরন ঘটে।
শনিবার রাতেই ওই তৃণমূল নেতা ও তাঁর বেশ কয়েকজন ঘনিষ্ঠের সঙ্গে পুলিশ কথা বলে। ইটভাটা নিয়ে গোলমালের জেরে ওই ঘটনা ঘটে থাকতে পারে বলেও পুলিশের অনুমান। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, পূর্ব সাতগাছিয়া এলাকায় বেশ কিছু ইটভাটা রয়েছে। মাটি বিক্রির রমরমা কারবার চলে সেখানে। অনন্তবাবুও জমি কেনাবেচার সঙ্গে যুক্ত। ব্যবসায়ীক কারণে তাঁর সঙ্গে এলাকার কয়েকজনের মতপার্থক্য রয়েছে বলেও জানা গিয়েছে। যে নম্বর থেকে অন্তবাবুকে বারবার ফোন করা হয়েছিল তা নিয়েও তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। পুলিশের দাবি, সম্প্রতিই সিমটি কেনা হয়েছিল। অনন্তবাবুর সঙ্গে কথার পর থেকে ফোনটি বন্ধ। পুলিশের অনুমান, খুনের পরিকল্পনা করেই সিমটি কেনা হয়েছিল। রবিবার কালনার এক পুলিশ কর্তা দাবি করেন, ‘‘বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সূত্র হাতে এসেছে। আশা করা যাচ্ছে দ্রুত ঘটনার কিনারা করা যাবে।’’