হাটন রোডে মৃত্যু শিক্ষিকার

জবরদখলে সরু রাস্তা, ফের দুর্ঘটনায় বিক্ষোভ

রাস্তার অনেকটা অংশ চলে গিয়েছে ব্যবসায়ীদের দখলে। সরু হয়ে যাওয়া সেই রাস্তা দিয়েই যাতায়াত করে পণ্য বোঝাই লরি। রাস্তায় দাঁড়িয়ে চলে পণ্য তোলা-নামা। এ নিয়ে অনেক দিন ধরেই অসন্তোষ জানিয়ে আসছেন আসানসোলের হাটন রোডের আশপাশের বাসিন্দারা। বুধবার ওই রাস্তায় পণ্য নামিয়ে ফেরা লরির ধাক্কায় এক শিক্ষিকার মৃত্যুর পরে ক্ষোভে ফেটে পড়লেন তাঁরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

আসানসোল শেষ আপডেট: ০৭ অগস্ট ২০১৪ ০১:৩৭
Share:

অবরোধ আসানসোলে। বুধবার তোলা নিজস্ব চিত্র।

রাস্তার অনেকটা অংশ চলে গিয়েছে ব্যবসায়ীদের দখলে। সরু হয়ে যাওয়া সেই রাস্তা দিয়েই যাতায়াত করে পণ্য বোঝাই লরি। রাস্তায় দাঁড়িয়ে চলে পণ্য তোলা-নামা। এ নিয়ে অনেক দিন ধরেই অসন্তোষ জানিয়ে আসছেন আসানসোলের হাটন রোডের আশপাশের বাসিন্দারা। বুধবার ওই রাস্তায় পণ্য নামিয়ে ফেরা লরির ধাক্কায় এক শিক্ষিকার মৃত্যুর পরে ক্ষোভে ফেটে পড়লেন তাঁরা।

Advertisement

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন স্কুলে যাওয়ার পথে দুর্ঘটনায় মারা যান স্থানীয় একটি বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের শিক্ষিকা হিরামনি মিশ্র (৩৩)। তাঁর বাড়ি ওই এলাকাতেই। ঘটনার পরে রাস্তা অবরোধ করা হয়। দেহ রাস্তায় রেখে বিক্ষোভ শুরু করেন বাসিন্দারা। প্রায় দু’ঘণ্টা ধরে অবরোধ চলার পরে পুলিশ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়ে অবরোধ তোলে। লরিটিকে আটক করেছে পুলিশ। তবে চালক ও খালাসি পলাতক।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, এমনিতেই হাটন রোড ও আশপাশের রাস্তাগুলি বিশেষ চওড়া নয়। তার উপরে রাস্তার বেশ কিছুটা অংশ অবৈধ ভাবে দখল করে রাখা হয়েছে। এলাকায় প্রায় ১০টি বেসরকারি সংস্থার অফিস ও গুদাম আছে। সেখানে অনবরত পণ্য বোঝাই লরি ঢোকে-বেরোয়। তাতে পথচারীরা মুশকিলে পড়েন। মাঝে-মাঝেই দুর্ঘটনা ঘটে। বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, বুধবারের দুর্ঘটনার পিছনেও রয়েছে এই রাস্তা দখল করে রাখা ও পণ্য বোঝাই লরি। তাঁরা জানান, এ দিন ওই শিক্ষিকা রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময়ে একটি বেসরকারি পরিবহণ সংস্থার গুদাম ও অফিসের সামনে রাখা পণ্য পাশ কাটিয়ে পেরোতে যান। তখনই ওই গুদামে পণ্য খালাস করে বেরিয়ে যাওয়ার পথে একটি লরি তাঁকে ধাক্কা মারে। ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়।

Advertisement

আসানসোলের হাটন রোড ও তার আশপাশের রাস্তাগুলির খানিকটা করে অংশ দখলদারদের কব্জায় চলে যাওয়ার অভিযোগ বহু দিনের। তার সঙ্গে যোগ হয়েছে বেসরকারি পরিবহণ সংস্থাগুলির গুদাম। এলাকায় গেলেই দেখা যায়, জি টি রোড ও হাটন রোডের সংযোগস্থল থেকে রাস্তার খানিকটা করে অংশ দখল হয়ে গিয়েছে। রাস্তার গা ঘেঁষে গড়ে উঠেছে দোকান। অনেকটা জুড়ে বসে আছে ফল, চা, তেলেভাজা-সহ নান ধরনের দোকানপাট। যেখানে-সেখানে দাঁড়িয়ে আছে রিকশা ও অটো। সেই ঘিঞ্জি রাস্তা দিয়েই যাচ্ছে যাত্রিবাহী বাস, পণ্যবাহি লরি-সহ সব রকম যানবাহন।

এ দিন এলাকার বাসিন্দারা জানান, তাঁদের কার্যত জীবন হাতে নিয়ে চলাফেরা করতে হচ্ছে। শুধু এলাকার বাসিন্দারা নন, রাস্তা জুড়ে দখলদারদের জন্য যে ট্রাফিক ব্যবস্থায় অসুবিধা তৈরি হয়েছে, তা কবুল করেন পুলিশ কমিশনারেটের এডিসিপি (ট্রাফিক) বিশ্বজিৎ ঘোষ। তিনি বলেন, “আমরাও সমস্যায় পড়ি। তবে দখলদার সরানোর কাজ আমাদের নয়। এই কাজ পুরসভার।” পুরবোর্ডের মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়ার পরেও ভোট না হওয়ায় এখন আসানসোল পুরসভার দায়িত্ব রয়েছে প্রশাসকের হাতে। পুরসভার প্রশাসক তথা আসানসোলের অতিরিক্ত জেলাশাসক অমিত দত্ত বলেন, “আমি দুর্ঘটনার পরেই বিষয়টি খোঁজ নিয়েছি। শুধু হাটন রোড নয়, রাহা লেন নিয়েও একই রকম সমস্যা আছে। এই দুই এলাকায় পরিবহণ ব্যবসায়ীদের নিয়ে মঙ্গলবার বৈঠক করে উপযুক্ত সিদ্ধান্ত নেব।” তিনি আরও জানান, রাস্তার অবৈধ দখল নতুন নয়। পুরো বিষয়টির সন্তোষজনক সমাধানের চেষ্টা হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন