আসানসোল-কুলটিতে এই চিত্র দেখা যায় বছরের প্রায় সব সময়। নিজস্ব চিত্র।
এলাকার সব থেকে বড় সমস্যা জল। ভোটের প্রচারে নেমেই টের পেয়েছিলেন প্রার্থী। সাংসদ হওয়ার পরেই তাই সেই জল সমস্যা মেটাতে উদ্যোগী হন তিনি। এ বার শিল্পাঞ্চলে এসে সেই সমস্যার কথা তৃণমূল নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখেও।
গত শুক্রবার দলের কর্মিসভায় মমতা বলেন, “কুলটিতে জলের সমস্যা আছে। আসানসোলে আছে, রানিগঞ্জে আছে, জামুড়িয়ায় আছে, পাণ্ডবেশ্বরে আছে। এগুলি সব শুষ্ক এলাকা। আমি কালই ববিকে (ববি হাকিম) ফোন করেছিলাম। সুব্রতদা (সুব্রত মুখোপাধ্যায়) আপনি জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর দেখেন। আমি ববিকে বলেছি কয়েকটি জায়গার জন্য দ্রুত অর্থ বরাদ্দ করতে। নদী থেকে জল তুলে পানীয় জলের ব্যবস্থা করা যাবে।” সভামঞ্চ থেকেই তিনি নির্দেশ দেন, “নগরোন্নয়ন দফতর এবং জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর এক সঙ্গে বসে দ্রুত কাজ করে দেবে। সুব্রতদা দেখবেন যাতে দু’তিন মাসের মধ্যে কাজটা হয়ে যায়।”
এই এলাকার জলের সমস্যা দীর্ঘ দিনের। প্রতি বছরই জলের দাবিতে খনি-শিল্পাঞ্চলে নানা জায়গায় রাস্তা অবরোধ-বিক্ষোভ চলতে থাকে। আসানসোলে পুরভোট আসন্ন। আর সে কারণেই এ বার এখানে সভা করতে এসে মুখ্যমন্ত্রীর জলের সমস্যার কথা মনে পড়েছে বলে কটাক্ষ করেছে বিজেপি। বিজেপি-র আসানসোল জেলা সম্পাদক প্রশান্ত চক্রবর্তী বলেন, “আসলে আমাদের সাংসদ বাবুল সুপ্রিয় পানীয় জলের সঙ্কট মেটাতে উদ্যোগী হয়েছেন। তাই মুখরক্ষা করতে এত দিন পরে মুখ্যমন্ত্রী এ নিয়ে ভাবতে শুরু করেছেন।” তবে দেরিতে হলেও মুখ্যমন্ত্রী জল সমস্যা নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানানোয় খুশি শিল্পাঞ্চলবাসী।
প্রায় আট বছর আগে আসানসোল ও কুলটি পুর এলাকার জন্য দু’টি পৃথক পানীয় জলপ্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছিল নগরোন্নয়ন মন্ত্রক। কুলটির প্রকল্পটির জন্য প্রায় ১৩৩ কোটি টাকা ও আসানসোলের জন্য প্রায় ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছিল। ২০১১ সালের মধ্যেই প্রকল্প দু’টি শেষ হওয়ার কথা ছিল। দেরিতে হলেও আসানসোলের প্রকল্পটি প্রায় শেষের মুখে। শহরের ৫০টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৪৫টির বাসিন্দারা নতুন প্রকল্প থেকে কমবেশি জল পাচ্ছেন। কিন্তু কুলটির ওই জল প্রকল্পটি আসানসোল-দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদ ও পুর কর্তৃপক্ষের টানাপড়েনে দীর্ঘ দিন কাজ শুরু হয়নি। শেষে গত বছর প্রকল্পটি ফিরিয়ে নেয় কেন্দ্র। ফলে, কুলটির জল সমস্যা মেটার আশা এখনও অন্ধকারে। জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, আসানসোল ও কুলটির প্রকল্প দু’টিএকসঙ্গে শুরু করতে পারলে কল্যাণেশ্বরি প্রকল্পটির জল আর কুলটিতে আনা হত না। সেক্ষেত্রে ওই জল সালানপুর ও বারাবনিতে সরবরাহ করা হত। ফলে, সেখানেও জলের সমস্যা মিটত।
গত লোকসভা ভোটে বিজেপি-র প্রার্থী হয়ে এসে জলের সমস্যাকেই প্রচারে মূল হাতিয়ার করেছিলেন প্রতিমন্ত্রী বাবুল। সাংসদ হওয়ার পরে ইসিএল, ইস্কো ও রেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দেখা করে তাঁদের সামাজিক দায়িত্বপালন প্রকল্পে জলের সঙ্কট মেটানোর ব্যাপারে সচেষ্ট হওয়ার আর্জি জানান। রেল ছাড়া বকি দুই সংস্থার কাছ থেকে সাহায্যের আশ্বাসও পেয়েছেন বলে জানা গিয়েছে।
তৃণমূলের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, এ বার দুর্গাপুরে কর্মিসভার আগে বৈঠকে তৃণমূল নেত্রী আসানসোলের নেতাদের কাছে কুলটি ও আসানসোলের জলসঙ্কট নিয়ে বিশদ খোঁজ নেন। সমস্যার গুরুত্ব বুঝে পরের দিনই তিনি প্রকাশ্য সভায় রাজ্যের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীদের এই সমস্যা দ্রুত মেটানোর নির্দেশ দেন। একে সামনে পুরভোট, তার উপরে গত লোকসভা ভোটের ফলের নিরিখে আসানসোল ও কুলটিদুই পুর এলাকাতেই বিজেপি-র থেকে অনেকটা পিছিয়ে পড়েছে তৃণমূল। এই পরিস্থিতিতে নেত্রীর জলসমস্যা সমাধানের ডাক যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের একটি অংশও।
কুলটির প্রাক্তন পুরপ্রধান তথা তৃণমূল বিধায়ক উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায় বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী যখন বলেছেন তখন আর চিন্তা নেই। এ বার সমাধান হবেই।” তিনি জানান, তাঁরা ইতিমধ্যে একটি প্রকল্প তৈরি করে নগরোন্নয়ন মন্ত্রকে জমা দিয়েছেন। আসানসোল পুরসভার জল দফতরের প্রাক্তন মেয়র পারিষদ রবিউল ইসলামের দাবি, “জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণের জন্য পুরসভার পাঁচটি ওয়ার্ডে পাইপলাইন বসানো যাচ্ছে না। সড়ক তৈরির পরেই ওই ওয়ার্ডগুলিতে জল পৌঁছে যাবে।”