টোটোয় রাশ টানবে কে, দায় এড়াচ্ছে প্রশাসন

এমনিতেই রিকশাচালকদের আপত্তি, টোটোর অনুমোদন না থাকা নিয়ে সমস্যা চলছিল। কিছুদিন আগে পুরসভায় শহরের কোন রাস্তায় টোটো চলবে তা নিয়েও বৈঠক হয়। এ বার টোটো নিয়ন্ত্রণ নিয়ে প্রচারেও দেখা গেল চাপানউতোর। প্রচারের দায় একে অপরের ঘাড়ে চাপাতে ব্যস্ত পুরসভা ও পরিবহণ দফতর।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বর্ধমান শেষ আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৩:০৩
Share:

ব্যস্ত রাস্তায় চলছে টোটো। —নিজস্ব চিত্র।

এমনিতেই রিকশাচালকদের আপত্তি, টোটোর অনুমোদন না থাকা নিয়ে সমস্যা চলছিল। কিছুদিন আগে পুরসভায় শহরের কোন রাস্তায় টোটো চলবে তা নিয়েও বৈঠক হয়। এ বার টোটো নিয়ন্ত্রণ নিয়ে প্রচারেও দেখা গেল চাপানউতোর। প্রচারের দায় একে অপরের ঘাড়ে চাপাতে ব্যস্ত পুরসভা ও পরিবহণ দফতর।

Advertisement

বৃহস্পতিবার সকালের দিকে শহরের বেশ কিছু রাস্তায় টোটো নিয়ন্ত্রণের জন্য মাইকে প্রচার চলে। প্রচারের বক্তব্য ছিল, পুরসভা অনুমোদিত যে ৭৫টি টোটো রয়েছে, সেগুলিকেই একমাত্র পুরনো জিটি রোড দিয়ে চলাচল করতে দেওয়া হবে। টোটো তৈরি বন্ধের কথাও বলা হয়। এরপরেই শহর জুড়ে টোটো চালকদের মধ্যে শোরগোল শুরু হয়। পুরসভা, পরিবহণ দফতরে যোগাযোগ করেও অনেকে জানতে চান, বাকি টোটো বাতিল করে দেওয়া হবে কি না। কিন্তু প্রশাসনের তরফে স্পষ্ট উত্তর মেলে না। ফলে বিভ্রান্তি আরও বাড়ে।

পুরপ্রধান স্বরূপ দত্তের দাবি, “আমাদের তরফে ওই প্রচার হয়নি। যা হয়েছে তা পরিবহন অধিকারিকের তরফে।” আবার পরিবহণ নিয়ামক প্রদীপ মজুমদারের বক্তব্য, তাঁর দফতর থেকে নয়, টোটো নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত প্রচার চালানো হয়েছে পুরসভা থেকেই। তিনি বলেন, “কিছুদিন আগে বর্ধমান উন্নয়ন পর্ষদ ও পুরসভার তরফে যৌথ বৈঠক করে ঠিক করা হয়েছিল শহরের বুকে পুরসভা অনুমোদিত ৭৫টি টোটো ছাড়া অন্য কোনও টোটো চলাচল করতে দেওয়া হবে না। হাইকোর্ট সম্প্রতি নির্দেশ দিয়েছে টোটো চলাচলের বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসনের দেখার কথা। তাই ওই বিষয়ে আমাদের করার কিছু নেই।”

Advertisement

বর্ধমান শহরে এখন কয়েকশো ব্যাটারি চালিত টোটো দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। ফলে দীর্ঘ সময়ের যানজট নিত্যচিত্র হয়ে উঠেছে। বিশেষত, পারবীরহাটা, বীরহাটা, কালীবাজার থেকে টাউনহল বা বিজয় তোরণ পর্যন্ত রাস্তায় সকালের ব্যস্ত সময়ে যানজট তীব্র সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। শহরের নাগরিকদের একাংশ অবশ্য টোটোর সমর্থনে কথা বলছেন। তাঁদের দাবি, টোটো আসার আগে শহরে রিকশা-রাজ চলত। যে কোনও দূরত্বে যেতে ইচ্ছেমতো ভাড়া চাইত রিকশা চালকেরা। না দিতে চাইলে বচসা, অপমানজনক কথাও লেগেই থাকত। টোটো নামার পরে সেই সমস্যা অনেকটাই মিটেছে। অনেকেই টোটো কিনে ভাড়া খাটাচ্ছেন। টোটো চালিয়ে দিন গুজরান করছেন বহু বেকার যুবক, অবসরপ্রাপ্ত কর্মীও।

টোটো তুলে দেওয়ার বিরুদ্ধে প্রচার চালাচ্ছে বর্ধমান সদর ইকো রিকশা চালক ইউনিয়নও। তাদের দাবি, শহরের বুকে টোটো বন্ধ করা যাবে না। কারণ টোটো চালিয়ে অনেক বেকার যুবকের গ্রাসাচ্ছাদন হচ্ছে। ইউনিয়ানের সদস্য তথা টোটো চালক অমিত সাউ বলেন, “মিনিবাস বা রিকশা দূষণ ছড়ায়, যানজট তৈরি করে, তার থেকে টোটো ঢের ভাল।” টোটো পরিবেশের পক্ষে নিরাপদ বলেও তাঁর দাবি।

বামফ্রন্ট পরিচালিত গত পুরবোর্ড যানজটের কথা মাথায় রেখেই একদা শহরে টোটো চালানোর অনুমোতি দেয়নি। কিন্তু তৃণমূলের বোর্ড গোড়াতেই টোটোর বাড়বাড়ন্ত ঠেকাতে চেষ্টা না করায় শহরে তীব্র যানজট তৈরি হয়েছে, বলেও বাসিন্দাদের একােংশার দাবি। পুরপ্রধান অবশ্য বলেন, “টোটো পরিবেশবান্ধব ঠিকই। তবে একটা শহরে যদি মাত্রাতিরিক্ত টোটো চলতে থাকে তাহলে তো যানজট বাড়বেই। তা ছাড়া রিকশা চালকদের কথাও তো বিবেচনা করতে হবে।”

এ দিকে, আর টোটো উৎপাদন করতে দেওয়া হবে না শুনে আতঙ্কিত ওই কারখানার মালিকেরা। তাঁদেরই একজন বলেন, “ওই কাজ করে অনেক শ্রমিকের পেট চলছিল। পুরসভা বা প্রশাসনের উচিত এ দিকে নজর দেওয়া।” তবে মালিকদেরই একাংশের দাবি, সস্তায় টোটো দিতে গিয়ে অনেকে নিম্নমানের যান তৈরি করছেন। ফলে প্রায় প্রতিদিনই শহরে দুর্ঘটনা ঘটছে। যান ভেঙে অনেক যাত্রী আহত হচ্ছেন। তাই স্থানীয় প্রশাসনের উচিত উৎপাদিত টোটোর মানের দিকে নজর দেওয়া।

শেষে বর্ধমান উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান তথা মন্ত্রী রবিরঞ্জন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “টোটো নিয়ে সিদ্ধান্ত আমাদের একার নয়। জেলা প্রশাসন, পুলিশ, পুরসভা ও উন্নয়ন পর্ষদের যৌথ সিদ্ধান্ত হল যে পুরসভা অনুমোদিত টোটোগুলি ছাড়া অন্য কোনও টোটোকে শহরের বুকে চলাচল করতে দেওয়া হবে না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন