শিবপুর স্বাস্থ্যকেন্দ্র। নিজস্ব চিত্র।
মেডিক্যালে স্নাতকোত্তর (এমডি, এমএস) পড়তে হলে সরকারি চিকিৎসকদের কমপক্ষে তিন বছর গ্রামে কাজ করে আসতেই হবে। না হলে স্নাতকোত্তরের প্রবেশিকা পরীক্ষায় বসার সুযোগই পাবেন না তাঁরা। সম্প্রতি গ্রামীণ স্বাস্থ্য পরিষেবার হাল ফেরাতে সরকারি চিকিৎসকদের জন্য এই নতুন কড়াকড়ি চালু করেছে রাজ্য সরকার। কিন্তু এর পরেও রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় স্বাস্থ্য পরিষেবার হাল খুব একটা যে ফেরেনি, তার প্রমাণ কাঁকসা ব্লকের স্বাস্থ্যকেন্দ্র। চারটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের তিনটিতেই এই মুহূর্তে কোনও চিকিৎসক নেই। এর জেরে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে ব্লকের অন্তর্গত বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দাদের। অভিযোগ, প্রশাসনের বিভিন্ন মহলে দরবার করেও লাভ হয়নি।
কাঁকসার শ্যামবাজার, সিলামপুর, মলানদিঘি ও শিবপুরে মোট চারটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র গড়ে ওঠে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, একমাত্র সিলামপুরে এক জন চিকিৎসক রয়েছেন। বাকি ৩টিতেই কোনও চিকিৎসক বা স্বাস্থ্যকর্মী নেই। অথচ বছর খানেক আগেও ছবিটা অন্যরকম ছিল বলে জানান বাসিন্দাদের একাংশ। যেমন, বছর চারেক আগে পর্যন্ত শিবপুরের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সপ্তাহে ছ’দিন ধরে বিভিন্ন পরিষেবা মিলত। বিভিন্ন জটিল রোগের প্রাথমিক চিকিৎসারও ব্যবস্থা ছিল বলে জানা গিয়েছে। এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রটির উপর ভরসা করতেন শিবপুর, অজয়পল্লি, বিষ্টুপুর, জামদহ, শশীপুর, বিনোদপুর-সহ বেশ কয়েকটি গ্রামের প্রায় ৫০ হাজার বাসিন্দা। স্থানীয় বাসিন্দা সহদেব মুখোপাধ্যায়, উত্তম চট্টোপাধ্যায়েরা জানান, স্বাস্থ্যকেন্দ্রের জন্য চিকিৎসক চেয়ে বেশ কয়েক জায়গায় আবেদন জানিয়েও লাভ হয়নি। মাস ছ’য়েক আগে একবার বিক্ষোভও দেখান বাসিন্দারা। উত্তমবাবুরা জানান, চিকিৎসার জন্য তাঁদের দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে অথবা অজয় পেরিয়ে জয়দেব প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যেতে হয়। বর্ষায় নদীতে জল বাড়লে কেঁদুলিতে গিয়ে চিকিৎসা করানোও কার্য়ত অসম্ভব হয়ে পড়ে বলে জানা গিয়েছে।
একই হাল বনকাটি পঞ্চায়েতের শ্যামবাজারের স্বাস্থ্যকেন্দ্রটির। ৯০-এর দশকে তৈরি হওয়া এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রায় বছর পাঁচেক ধরে কোনও চিকিৎসক নেই বলে জানান স্থানীয় বাসিন্দারা। এলাকার প্রায় ৩০ হাজার বাসিন্দা এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রটির উপর নির্ভরশীল ছিলেন। দীর্ঘদিন কোনও সংস্কার না হওয়ায় চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের আবাসনটি বেহাল। বাসিন্দারা জানান, রাতবিরেতে কেউ অসুস্থ হলে ২০ কিলোমিটার দূরের কাঁকসা ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যেতে হয়। মলানদিঘি স্বাস্থ্যকেন্দ্রেও চিকিৎসক নেই। তবে এখানের স্বাস্থ্যকেন্দ্রটির পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য বিধায়ক তহবিল থেকে অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে বলে খবর। এলাকার বিধায়ক নিখিল বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘ইতিমধ্যেই কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে।’’ তবে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসক না আসা পর্যন্ত পরিষেবা মিলবে কি না, তা নিয়ে সংশয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা।
সিলামপুরে মোটে এক জন চিকিৎসক রয়েছেন। স্থানীয় বাসিন্দা মোহর আলি, শেখ শাহজাহানরা জানান, প্রতিদিন প্রায় দেড়শো রোগী আসেন। ফলে এক জন চিকিৎসকের পক্ষে পরিস্থিতির সামাল দেওয়া বেশ কঠিন বলে জানান মোহররা।
বাসিন্দারা জানান, এলাকার বেশির ভাগ মানুষই চাষাবাদের সঙ্গে যুক্ত। বেসরকারি হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা করানোর মতো অর্থনৈতিক সামর্থ্যও তাঁদের নেই বলে দাবি স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের। ফলে আচমকা কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে শঙ্কা ও ভোগান্তের ছবিটাই কার্যত দ্বস্তুর বলে জানান বাসিন্দাদের একাংশ। যদিও চিকিৎসক না থাকাতেই এই হাল বলে জানিয়েছে মহকুমা স্বাস্থ্য দফতর।