সংঘর্ষের পরে। বার্নপুর স্টেশন বাজারে রবিবার রাতে। —নিজস্ব চিত্র।
খুচরো ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে তোলা আদায়ের অভিযোগ নিয়ে সংঘর্ষে জড়াল তৃণমূলেরই দু’টি গোষ্ঠী। রবিবার রাতে বার্নপুর স্টেশন বাজারে এই সংঘর্ষে দু’পক্ষের কয়েক জন আহত হন। বেশ কিছু ক্ষণ রাস্তা অবরোধও হয়। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে। এই ঘটনার পিছনে দলের কোন্দল রয়েছে, এ কথা মানতে চাননি তৃণমূল নেতৃত্ব। তবে দলীয় পর্যায়ে ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে বলে জানান তাঁরা।
কিছু ব্যবসায়ী অভিযোগ করেন, ইস্কো কারখানার তৈরি করে দেওয়া স্টেশন বাজারে খুচরো ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে তোলা আদায় করে কিছু লোকজন। তারা তৃণমূলের কর্মী-সমর্থক হিসেবে পরিচিত। গত তিন বছর ধরে এই ঘটনা চলছে। ওই ব্যবসায়ীদের দাবি, বেশ কিছ দোকানদারকে ভয় দেখিয়ে তোলা নেওয়া হয়। কেউ দিতে না চাইলে তাঁকে উচ্ছেদের হুমকি দেওয়া হয়। আবার, ওই বাজারে দোকান পাইয়ে দেওয়ার নাম করে অনেকের কাছে মোটা টাকা নিয়েছে ওই সব লোকজন। কিন্তু, তাঁদের দোকান দেওয়া হয়নি।
ব্যবসায়ীদের একাংশের দাবি, এ নিয়ে গত কয়েক দিন ধরেই চাপানউতোর চলছিল। রবিবার রাতে বাজারের কয়েক জনের কাছ থেকে ওই সব লোকজন তোলা নিতে এলে ফুঁসে ওঠেন কয়েক জন ব্যবসায়ী। অভিযোগ, ওই ব্যবসায়ীদের মারধর করা হয়। খবর পেয়ে তৃণমূলের অন্য একটি গোষ্ঠীর লোকজন ঘটনাস্থলে পৌঁছে যায়। দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। ওই বাজারের ব্যবসায়ী অচিন্ত্য রায়ের অভিযোগ, “তৃণমূলের লোকেরা আমাদের কাছ থেকে অন্যায় ভাবে টাকা আদায় করছে। না দিলে অনেককে উচ্ছেদের হুমকিও দিচ্ছে।” ব্যবসায়ীদের তরফে ওই রাতেই হিরাপুর থানায় স্থানীয় তৃণমূল নেত্রী রাখি মুখোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে তোলা আদায়ে জড়িত থাকার অভিয়োগ করা হয়।
রাতে ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে এলাকার যুব তৃণমূল নেতা পূর্ণেন্দু চৌধুরীর অভিযোগ, “তৃণমূলের প্রাক্তন হিরাপুর ব্লক সভানেত্রী রাখি মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে এক দল লোক দলের নাম করে খুচরো ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নিয়মিত টাকা নেয়। দিতে না চাইলে মারধর ও হুমকিও দেওয়া হয়।” তাঁর আরও অভিযোগ, ব্যবসায়ীদের মারধর করা হচ্ছে, এই খবর পেয়ে ওই রাতে ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রতিবাদ করেছেন তাঁরা। রাখি মুখোপাধ্যায় যদিও তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ উড়িয়ে বলেন, “আমি ব্যবসায়ীদের নানা বিপদ-আপদে পাশে থাকি। তা সহ্য হচ্ছে না তৃণমূলের একটি গোষ্ঠীর। আমাদের কর্তৃত্ব খর্ব করতে কোনও প্ররোচনা ছাড়া তারা আমার ছেলেদের উপরে আক্রমণ করেছে।” এর পিছনে টিএমসিপি-র রাজ্য সভাপতি তথা স্থানীয় নেতা অশোক রুদ্রেরও ইন্ধন রয়েছে বলে রাখিদেবীর দাবি। অশোকবাবু অবশ্য বলেন, “কে কী বলছেন, তা নিয়ে আমার মাথাব্যথা নেই। যিনি এ সব বলছেন, তিনি ওই এলাকায় কী করছেন তা এলাকার মানুষ জানেন। বেনিয়ম কোনও ভাবে বরদাস্ত করা হবে না।”
তৃণমূলের বর্ধমান জেলা (শিল্পাঞ্চল) কার্যকরী সভাপতি ভি শিবদাসনের বক্তব্য, “কে কোথায় কীসে জড়িত, আমরা জানি। তদন্ত শুরু করেছি। যাঁরা জড়িত থাকবে, প্রত্যেকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”