দুর্ঘটনায় হুঁশ ফেরেনি, দেদার স্নান ব্যারাজে

দুর্ঘটনার পরে হইচই হয়। নানা ব্যবস্থার পরিকল্পনা শোনা যায়। নজরদারি চলে কয়েক দিন। কিন্তু তার পরে আবার সেই এক দৃশ্য। দামোদরে ইচ্ছো মতো নেমে স্নান করার সেই চিত্র দেখা যায় বছরভরই। পিকনিকের মরসুমে তা আরও বেড়ে যায়।

Advertisement

বিপ্লব ভট্টাচার্য

দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০১৪ ০১:৪০
Share:

পিকনিকে এসে ইচ্ছে মতো নেমে পড়া ব্যারাজের জলে। ছবি: বিশ্বনাথ মশান।

দুর্ঘটনার পরে হইচই হয়। নানা ব্যবস্থার পরিকল্পনা শোনা যায়। নজরদারি চলে কয়েক দিন। কিন্তু তার পরে আবার সেই এক দৃশ্য। দামোদরে ইচ্ছো মতো নেমে স্নান করার সেই চিত্র দেখা যায় বছরভরই। পিকনিকের মরসুমে তা আরও বেড়ে যায়। চলতি বছরে দুর্গাপুরে দামোদরে বেশ কয়েকটি দুর্ঘটনা ঘটলেও শীতের সময়ে ছুটির দিনগুলিতে পিকনিক করতে আসা মানুষজনকে সতর্ক করা বা নজরদারি চালানোর বিশেষ কোনও ব্যবস্থা এখন চোখে পড়ছে না। ফলে, দুর্ঘটনার আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। প্রশাসনের তরফে আশ্বাস, ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Advertisement

দুর্গাপুর ব্যারাজের কাছে দামোদরে গত এক বছরে তলিয়ে গিয়ে মৃত্যু হয়েছে বেশ কয়েক জনের। মাস সাতেক আগে শহরের এক বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ১১ জন ছাত্র স্নান করতে যান। সাঁতার না জানা সত্ত্বেও জলে নামেন এক জন। তাঁকে তলিয়ে যেতে দেখে তিন সহপাঠী বাঁচাতে যান। প্রথম ছাত্রটিকে বাঁচাতে পারলেও ওই তিন জন তলিয়ে যান। এই ঘটনার কিছু দিন পরেই ব্যারাজে স্নান করতে গিয়ে তলিয়ে মৃত্যু হয় দুর্গাপুরের এমএএমসি এলাকার এক যুবকের। আট বন্ধুর সঙ্গে গিয়েছিলেন তিনি। লকগেটের নীচে স্নান করার সময়ে ওই যুবক তলিয়ে যান। পরে তাঁর দেহ মেলে।

ব্যারাজের আশপাশের বাসিন্দারা জানান, দামোদরে জলের স্তর সর্বত্র সমান নয়। কোথায় কোথায় গভীরতা রয়েছে, তা যাঁরা নিয়মিত সেখানে স্নান করেন, তাঁরা জানেন। কিন্তু বাইরে থেকে আসা লোকজনের পক্ষে তা বোঝা সম্ভব নয়। তার জেরেই অনেকে দুর্ঘটনার শিকার হন। যেখানে গভীরতা বেশি, সেখানে যাতে মানুষজন না নামেন সে ব্যাপারে নিয়মিত নজরদারির কোনও ব্যবস্থা হয়নি প্রশাসনের তরফে। মাঝে মধ্যে পুলিশের তরফে টহল দেওয়া হয়। কিন্তু তা যথেষ্ট অনিয়মিত।

Advertisement

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এ বারও শীত পড়ার সঙ্গে সঙ্গে দামোদরের পাড়ে পিকনিক করতে ভিড় বাড়ছে। পিকনিক করতে আসা লোকজনের মধ্যে দামোদরে নেমে স্নান করার প্রবণতাও বেড়েছে। কিন্তু কোনও নজরদারি নেই। কোথায় কতটা জল রয়েছে, সে ব্যাপারে কোনও ধারনা না থাকা সত্ত্বেও যে যেখানে খুশি জলে নেমে পড়ছেন। ব্যারাজের কাছে বীরভানপুর গ্রামের বাসিন্দা বাবন দাঁ, জগু দাঁ, রাজু মুখোপাধ্যায়, শঙ্কর মুখোপাধ্যায়েরা জানান, চোখের সামনে অনেককে জলে তলিয়ে যেতে দেখেছেন তাঁরা। কয়েক জনকে বাঁচানো গিয়েছে। কিন্তু অনেক সময়েই কিছু করার থাকে না বলে জানান তাঁরা। তাঁদের দাবি, প্রশাসন বিশেষ করে উত্‌সবের দিনগুলিতে নজরদারির ব্যবস্থা করলে দুর্ঘটনা কম ঘটবে। তাঁরা বলেন, “ব্যারাজের লকগেট থেকে জল বেশ কিছুটা নীচে পড়ার দরুণ বালি সরে গিয়ে গর্ত তৈরি হয়। আমরা জলের রং দেখে বুঝতে পারি কোথায় কত গভীরতা। কিন্তু বাইরের কারও পক্ষে তা বোঝা বেশ কঠিন। তাই সাঁতার না জানলে কারও লকগেটের নীচে স্নান করতে নামা উচিত নয়।”

দামোদরে নানা সময়ে দুর্ঘটনার কথা জানা সত্ত্বেও পিকনিক করতে এসে অতি উত্‌সাহে জলে নেমে পড়েন অনেকে। সম্প্রতি কাঁকসা থেকে ব্যারাজের কাছে চরে পিকনিক করতে আসা একটি দলের কয়েক জনকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলে তাঁদের জবাব, “সকলে তো নামেনি। যারা সাঁতার জানে শুধু তারাই জলে নেমেছে।” যদিও বাস্তবে দেখা যায়, পিকনিকে আসা নানা বয়সের পুরুষ-মহিলারা প্রায় সবাই জলে নেমে পড়েছেন।

দামোদরের বিভিন্ন অংশে সতর্কতামূলক বোর্ড লাগানো থাকলেও তা যে খেয়ালই করেন না, তা মেনে নিয়েছেন ডিভিসি-র আধিকারিক ও প্রশাসনের কর্তারা। বিপজ্জনক জায়গায় জলে নামা বন্ধ করতে হলে নজরদারিই যে একমাত্র, সমাধান স্বীকার করেছেন তাঁরা। দুর্গাপুরের মহকুমাশাসক কস্তুরী সেনগুপ্ত বলেন, “নজরদারির বিষয়ে ডিভিসি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন