নেই বিদ্যুত্‌, সঙ্কট পানীয় জলেও

খুঁটি রয়েছে। কিন্তু বিদ্যুত্‌ সংযোগ হয়নি। ইসিএল বিদ্যুত্‌ দিলেও তাতে ভাল করে আলো জ্বলে না। গোটা গ্রামে পানীয় জলের পাইপ সাকুল্য দু’টি। সেগুলিতে আবার ভাল করে জল পড়ে না। গ্রীষ্মকালে চারটি আদিবাসী পাড়ায় অজয় নদের বুক খুঁড়ে জল বের করতে হয়।

Advertisement

নীলোত্‌পল রায়চৌধুরী

পাণ্ডবেশ্বর শেষ আপডেট: ২১ মে ২০১৪ ০০:৫৮
Share:

অজয়ের পাড় খুঁড়ে জলের সন্ধান। কেন্দ্রায় ছবিটি তুলেছেন ওমপ্রকাশ সিংহ।

খুঁটি রয়েছে। কিন্তু বিদ্যুত্‌ সংযোগ হয়নি। ইসিএল বিদ্যুত্‌ দিলেও তাতে ভাল করে আলো জ্বলে না। গোটা গ্রামে পানীয় জলের পাইপ সাকুল্য দু’টি। সেগুলিতে আবার ভাল করে জল পড়ে না। গ্রীষ্মকালে চারটি আদিবাসী পাড়ায় অজয় নদের বুক খুঁড়ে জল বের করতে হয়। ঠিকমতো সাফাই না হওয়ায় রাস্তাতেই পড়ে থাকে নর্দমার আর্বজনা। সমস্যার এই সাতকাহন নিয়েই কোনওক্রমে দিন কাটাচ্ছেন পাণ্ডবেশ্বরের কেন্দ্রা পঞ্চয়েতের বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দারা। সোমবার সমস্যার সমাধানের দাবিতে গ্রামবাসীরা পাণ্ডবেশ্বরের বিডিও-র কাছে গণস্বাক্ষর সম্বলিত স্মারকলিপি জমা দেন।

Advertisement

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, বছর দেড়েক আগে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে গ্রামে বিদ্যুতের খুঁটি পোঁতা হয়েছিল। কিন্তু তার পরে বিদ্যুত্‌ সংযোগের কোনও ব্যবস্থা হয়নি। ইসিএল গ্রামে বিদ্যুত্‌ সরবরাহ করে। কিন্ত তাতে সমস্যা মেটে না। স্থানীয় বাসিন্দা অর্ধেন্দু পাল জানান, সকাল ৬টা থেকে বেলা ১০টা পর্যন্ত ইসিএল বিদ্যুত্‌ সরবরাহ বন্ধ রাখে। আবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত প্রায়ই লো ভোল্টেজ থাকে। ফলে, গরমে যেমন সমস্যা হয়, তেমনই ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনা করতে সমস্যা হয়। বিদ্যুত্‌ ছাড়াও রয়েছে জলের সমস্যা। ইসিএল তাদের ছত্রিশগন্ডা জলপ্রকল্প থেকে গ্রামে জল পাঠায়। স্থানীয় বাসিন্দা অজিত আকুড়ে জানান, প্রায় কুড়ি বছর আগে প্রয়াত নকশাল নেতা গনেশ পালের চেষ্টায় এই গ্রামে ইসিএল জল সরবরাহের জন্য দু’টি কলের ব্যবস্থা করে। কিন্তু পঞ্চায়েত এলাকাটি বড় হওয়ায় দু’টি কলে গ্রামবাসীদের জল সমস্যা মেটে না। পঞ্চায়েতের তৈরি করা ১০টি কুয়ো থেকে জল সংগ্রহ করে সমস্যা মেটানো হয়। কিন্তু এখন সেই কুয়োগুলি শুকিয়ে গিয়েছে।

আদিবাসী পাড়া, ডোম পাড়া, বাউরি পাড়া, ও আকুড়িয়া পাড়ায় আবার কুয়োও নেই। এই গ্রামগুলির বাসিন্দা সোমনাথ টুডু, রামু টুডু, নিরঞ্জন ডোম, জীতেন বাউড়ি, বামা বাউরিরা জানান, অজয় নদ থেকে জল নিয়ে আসেন তারা। কিন্তু গ্রীষ্মকালে অজয়ের জল শুকিয়ে যায়। ফলে ওই সময় অজয়ের বালি খুঁড়ে জল বের করতে হয়। কেন্দ্রা উপর পাডা়র বাসিন্দা অশোক সাধুর অভিযোগ, “গ্রামের নর্দমা সাফাই না হওয়ায় সামান্য বৃষ্টিতেই নর্দমার আর্বজনা রাস্তায় উঠে যায়। জলের তোড়ে তা অনেকের বাড়িতেও ঢুকে যায়। এর জেরে বর্ষায় রাস্তা খারাপ হয়ে যায়।”

Advertisement

ইসিএলের সিএমডি-র কারিগরি সচিব নীলাদ্রি রায় বলেন, “মানবিকতার দিকে তাকিয়ে আমরা জল ও বিদ্যুত্‌ সরবরাহ করি। বিদ্যুতের লাইন থেকে অতিরিক্ত সংযোগ নিয়েছেন বাসিন্দারা। তাই মাঝে মাঝে অতিরিক্ত চাপের কারণে লো ভোল্টেজ হয়।”

সমস্যা মেটানোর জন্য প্রশাসনের কাছে বার বার দরবার করা হলেও লাভ হয়নি। ২০১৩ সালে স্থানীয় বাসিন্দারা সমস্যার সমাধানের দাবিতে বিডিও দফতরে অনশনে বসেছিলেন। স্থানীয় নকশাল নেতা সাধন দাসের দাবি, “অনশনের তিন দিনের মাথায় মহকুমাশাসক আমাদের টেলিফোন করে অনশন প্রতাহ্যার করে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে বলেন। আমরা অনশন মঞ্চ থেকে সরাসরি দুর্গাপুরে গিয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করি। তিনি দ্রুত সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু বিদ্যুতের খঁুটি পঁুতে তার লাগানো হয়ে গেলেও এখনও গ্রামে বিদ্যুত্‌ সংযোগ দেওয়া হয়নি।”

পাণ্ডবেশ্বরের বিডিও নিশান্ত মুখোপাধ্যায় বলেন, “বিদ্যুত্‌ সরবরাহের জন্য খঁুটি পুঁতে তার জোড়া হয়েছে। তবে প্রযুক্তিগত সমস্যায় বিদ্যুত্‌ সংযোগ দেওয়া হয়নি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন