মহকুমাশাসকের দফতরে তখন চলছে বৈঠক।—নিজস্ব চিত্র।
নিরাপত্তার ব্যাপারে আশ্বাস দিয়ে ভাতারের কাগজকল কর্তৃপক্ষকে কারখানা খুলতে রাজি করাল প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার বর্ধমানের মহকুমাশাসক স্বপন কুণ্ডুর উদ্যোগে ওই কাগজকলের সমস্যা নিয়ে একটি বৈঠক হয়। সেখানে ছিলেন কারখানার মালিকপক্ষ, শ্রমিকদের প্রতিনিধি, বিডিও, জেলা সহ-শ্রম কমিশনার এবং পুলিশ। মহকুমাশাসক বলেন, “আমাকে মালিকপক্ষ জানিয়েছেন, কারখানা খোলার ব্যাপারে তাঁরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। আমি বলেছি, কারখানা খুলুন। কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে পুলিশ হস্তক্ষেপ করবে।”
না ঘুমিয়ে কাজ করতে বলায় কারখানার ম্যানেজার রাকেশ গুপ্তাকে মারধরের অভিযোগ উঠেছিল কিছু শ্রমিকের বিরুদ্ধে। বুধবার এর পরেই নিরাপত্তাহীনতার কারণ দেখিয়ে কর্মবিরতির নোটিস ঝুলিয়ে দেন কর্তৃপক্ষ। সে দিনই আবার আইএনটিটিইউসি-র নেতৃত্বে বেতন বৃদ্ধি-সহ নানা দাবিতে কারখানা চত্বরে বিক্ষোভ দেখানো হয়। মারধরের ঘটনায় ভাতার থানায় যে ছ’জন শ্রমিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়, তাঁরা আইএনটিটিইউসি কর্মী বলে স্থানীয় সূত্রে জানা যায়।
বৃহস্পতিবারই অভিযুক্ত ছয় শ্রমিক বর্ধমান সিজেএম আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। তাঁদের জামিনের আবেদন মঞ্জুর করে আদালত। জামিন পেয়ে এসে ওই ছয় শ্রমিক আবার এ দিন মহকুমাশাসকের বৈঠকেও যোগ দেন। প্রহৃত আধিকারিক এখনও হাসপাতালে ভর্তি বলে জানিয়েছেন মহকুমাশাসক। এই পরিস্থিতিতে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে জামিনযোগ্য ধারায় মামলা রুজু হল কী করে, সে প্রশ্নে জেলা পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জার দাবি, “মারধরের ব্যাপারে যে অভিযোগপত্র ভাতার থানায় জমা দেওয়া হয়েছিল, তার ভিত্তিতে জামিনযোগ্য ধারার বেশি কিছু দেওয়া সম্ভব নয়।” ঘটনার তদন্তে পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ অস্বীকার করে পুলিশ সুপারের আরও দাবি, ওই অভিযুক্তদের গ্রেফতারের জন্য পুলিশ বুধবার রাত থেকেই অভিযান চালায়। সে কারণেই ওই ছ’জন এ দিন সকালে তড়িঘড়ি আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। কারখানা খোলার ব্যাপারে সম্মত হলেও কাগজকলের অন্যতম ডিরেক্টার লক্ষ্মীকান্ত অগ্রবালের সাফ কথা, “আমরা মারধরে অভিযুক্ত ছ’জনের কাজে যোগ দেওয়ার বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছি। ওঁরা কারখানায় গোলমাল করেছেন। তাই আমরা চাই, ওই ঘটনার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ওঁরা যাতে কাজে যোগ না দেন।” তবে এই শর্ত মানতে চাননি আইএনটিটিইউসি-র ভাতার ব্লক সভাপতি আকাই শেখ। এ দিন তাঁর বক্তব্য, “ওই ছ’জন শ্রমিক-সহ মোট ৪০ জন বিক্ষোভকারীকে কাল যোগ দিতে না দিলে আমাদের কোনও সমর্থকই কাজে যোগ দেবেন না। কারখানা খুললে খুলবে।”
মহকুমাশাসক স্বপনবাবু জানান, আগামী ১১ তারিখে সহ-শ্রম কমিশনারের কাছে ফের শ্রমিক ও মালিকপক্ষকে নিয়ে বৈঠক হবে। ওই বৈঠকে শ্রমিকদের দাবিদাওয়া নিয়ে আলোচনা হবে। তিনি বলেন, “মালিকপক্ষের প্রতিনিধি লক্ষ্মীকান্তবাবু আমাকে জানিয়েছেন, তাঁরা শ্রমিকদের বাড়তি বেতনের বিষয়টি মিটিয়ে দিতে প্রস্তুত। এ ব্যাপারে তাঁরা শ্রমিকদের সঙ্গে একটি চুক্তি করতে তৈরি। কিন্তু শ্রমিক নেতারা ওই চুক্তিতে সই করতে চাইছেন না। এই বিষয়টি নিয়েও শ্রম কমিশনারের অফিসে বৈঠকে আলোচনা হবে।”