বাদ পড়লেন চার জোনাল সদস্য

প্রার্থী তোলা ঠিক হয়নি, এখন মানছে সিপিএম

পুরভোটের দিন সকালে প্রার্থী প্রত্যাহার করে নেওয়ার সিদ্ধান্ত যে মানুষের কাছে গ্রহণযোগত্য পায়নি, প্রায় দেড় বছর পরে তা মেনে নিল সিপিএম। ৩৫-০ ফলাফলের ধাক্কা যে যায় নি, দলের নবম বর্ধমান শহর জোনাল কমিটির সম্মেলনের খসড়া রাজনৈতিক-সাংগঠনিক রিপোর্টে তা কবুল করেছেন তারা। গত ২৯ জানুয়ারি বর্ধমানের টাউনহলে ওই সম্মেলনে নতুন ১৭ জনের কমিটি তৈরি হয়। তাতে বাদ পড়েছেন শহরের চার নামী সিপিএম নেতা মৃদুল সেন, দুর্গাশিব রায়, দিলীপ দুবে ও অধিক্রম সান্যাল। এই চারজনের বদলে ওই কমিটিতে দুই মহিলা-সহ চার জনকে নেওয়া হয়েছে।

Advertisement

রানা সেনগুপ্ত

বর্ধমান শেষ আপডেট: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০০:২৩
Share:

পুরভোটের দিন সকালে প্রার্থী প্রত্যাহার করে নেওয়ার সিদ্ধান্ত যে মানুষের কাছে গ্রহণযোগত্য পায়নি, প্রায় দেড় বছর পরে তা মেনে নিল সিপিএম। ৩৫-০ ফলাফলের ধাক্কা যে যায় নি, দলের নবম বর্ধমান শহর জোনাল কমিটির সম্মেলনের খসড়া রাজনৈতিক-সাংগঠনিক রিপোর্টে তা কবুল করেছেন তারা।

Advertisement

গত ২৯ জানুয়ারি বর্ধমানের টাউনহলে ওই সম্মেলনে নতুন ১৭ জনের কমিটি তৈরি হয়। তাতে বাদ পড়েছেন শহরের চার নামী সিপিএম নেতা মৃদুল সেন, দুর্গাশিব রায়, দিলীপ দুবে ও অধিক্রম সান্যাল। এই চারজনের বদলে ওই কমিটিতে দুই মহিলা-সহ চার জনকে নেওয়া হয়েছে। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন যুব নেতা অঞ্জন বিশ্বাস, প্রাক্তন যুব নেতা দিলীপ নন্দী, মহিলা সমিতির দুই নেত্রী শান্তি পাল ও সুপর্ণা বন্দ্যোপাধ্যায়। ওই চার প্রবীণ নেতার বাদ পড়া প্রসঙ্গে দলের তৃতীয় বারের জন্য নির্বাচিত জোনাল সম্পাদক তাপস সরকারের যুক্তি, “নতুনদের কমিটিতে ঠাঁই করে দেওয়ার প্রক্রিয়া নতুন কিছু নয়। নতুনদের ঠাঁই দিতেই ওই চার প্রবীণ নেতা নিজেরাই সরে দাঁড়িয়েছেন। আমার তিনটি টার্ম হলে গেলে আমাকেও সরে যেতে হবে।” দলীয় সূত্রের খবর, ওই চার নেতাকে কমিটিতে না রাখার ব্যাপারে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

দলে তরুণদের অন্তর্ভুক্তি নিয়েও অসন্তোষ প্রকাশ করা হয়েছে ওই রিপোর্টে। বলা হয়েছে, ‘৪০ বছর পর্যন্ত পার্টি সদস্যের সংখ্যা ১৩৬, শতকরা হার ১৫.৩৮। এ থেকেই তরুণ প্রজন্মের পার্টিতে অন্তর্ভুক্তি কতটা দুর্বল তা বোঝা যায়।’

Advertisement

গত পুরভোটের আগে বর্ধমান শহরে তৃণমূলের সন্ত্রাস, বুথ দখল করে ছাপ্পা, তাতে পুলিশের খোলাখুলি মদত ইত্যাদি অভিযোগ তুলে ভোটের দিন সকালে প্রার্থী প্রত্যাহার করে নিয়েছিল বামফ্রন্ট। একই দিনে গুসকরাতেও ভোট ছিল। তবে সেখানে প্রার্থী প্রত্যাহার না করে সন্ত্রাস মোকাবিলার পথ বেছেছিল সিপিএম। সেখানে ১৬টির মধ্যে পাঁচটি আসনে জয়ও পায় তারা। সিপিএমেরই একাংশের দাবি, শহরের মানুষ দলের ওই সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারেননি। কারণ সিপিএম প্রার্থী প্রত্যাহার করার পরেও বহু মানুষ দিনভর ভোট দিতে যান।

সিপিএমের ওই খসড়া রিপোর্টের পরিসংখ্যান অনুযায়ী প্রার্থী তুলে নেওয়ার পরেও বর্ধমান শহরে সিপিএম ৩০ হাজার ৬৯৫টি ভোট পেয়েছিল। এর ভেতর শহরের ৮ নম্বর ওয়ার্ডে শতকরা ৩০.৫৮, ২২ নম্বরে শতকরা ২৮.৮৯, ১৭ নম্বরে ২৫.০৭, ২৮ নম্বরে ২৮.৬৩ ও ৩০ নম্বরে শতকরা ৩০.৮৯ ভাগ ভোট মিলেছিল বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, ‘নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করে তৃণমূলের গুণ্ডা বাহিনী শুরুতেই বুথগুলি দখল করে। তাতেও বেশির ভাগ বুথে প্রায় দু’ঘণ্টা পর্যন্ত এজেন্টরা থাকেন। প্রায় ৮০জন দলীয় কর্মী আক্রান্ত হন। সন্ত্রাসের মাত্রা এমন পর্যায়ে যায় যে, সকাল ১০টায় পুর নির্বাচন থেকে বামফ্রন্ট সরে আসে এবং প্রার্থীপদ প্রত্যাহার করে নেয়। পরে মিছিল করে পুলিশ সুপারের কাছে ডেপুটেশন দেওয়া হয়। উচ্চতর নেতৃত্বের উপস্থিতিতে জোনাল কমিটি এই সিদ্ধান্ত গ্রহন করে।” এর সঙ্গেই এই রিপোর্টে মেনে নেওয়া হয়েছে, ‘ওই সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা নিয়ে রাজ্য জুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। পার্টির অভ্যন্তরে বিভিন্ন প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়। সাধারণ মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি দেখা দেয়। এটা হতেই পারে। কারণ পার্টির অভ্যান্তরে কোনও সিদ্ধান্ত গৃহীত হলে বা তার যথার্থতা থাকলেও মানুষের কাছে তখনই তা গ্রহনযোগ্যতা পেয়ে গেলএমনটা ভাবার কোনও কারণ নাই। কিন্তু পরবর্তীতে খাগড়াগড় বিষ্ফোরণকাণ্ড ও শহরের বিভিন্ন ঘটনার মধ্যে দিয়ে মানুষ বুঝতে পেরেছেন যে পুরবোর্ড দখল করার জন্য তৃণমূল ও জেলা পুলিশ প্রশাসন কি গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল।’ তবে জোনাল সম্পাদক তাপসবাবুর দাবি, “পুর নির্বাচনের দিন প্রার্থী প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়ে আমাদের জোনাল সম্মেলনে কোনও কথা হয়নি।”

হারের কারণ খুঁজতে গিয়ে দলের কিছু নেতিবাচক দিকও তুলে ধরা হয়েছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, একাংশ পার্টি সদস্য ও এজি সদস্য লড়াইয়ের ময়দানে থাকেন নি। কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বুথ ভিত্তিক নির্বাচনী কাজ পরিচালনার জন্য কর্মী বাহিনী গড়ে তোলা যায় নি। নির্বাচনের দিন কোনও বুথ ক্যাম্প করা সম্ভব হয়নি। এটা করা গেলে সাধারণ সমর্থক ভোটাররা ভরসা পেতেন। এমনকী অনেক সাধারণ মানুষ ভোট দিতে গিয়ে যখন আক্রন্ত হয়েছেন, তখন পার্টি সদস্যদের একাংশ ঝুটঝামেলা এড়িয়ে ঘরে বসে থেকেছেন বলেও রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন