পোলো মাঠের শিল্প-বাণিজ্য মেলায় জেলা পরিষদের স্টল। ছবি: শৈলেন সরকার।
চলছে শিল্প-বাণিজ্য মেলা, সেখানেও উন্নয়নের ফিরিস্তি দিয়ে নানা সরকারি দফতরের স্টল। জেলা পরিষদ থেকে এডিডিএ, সরকারি তহবিলের টাকা খরচ করে আসানসোল বণিকসভা আয়োজিত এই মেলায় স্টল দিয়েছে নানা পক্ষই। শিল্পমেলায় কেন তাঁদের স্টল, সে প্রশ্নের সদুত্তর মেলেনি কোনও দফতরের কর্তাদের কাছ থেকেই।
আসানসোলের পোলো মাঠে ২৯ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়েছে ওই মেলা। উদ্বোধন করে গিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ৯ দিনের এই মেলায় রয়েছে দু’শোর বেশি বেসরকারি স্টল। এর সঙ্গেই সরকারের নানা দফতরের প্রায় ২০টি স্টল দেওয়া হয়েছে। শিল্প বা বাণিজ্যের সঙ্গে সম্পর্ক নেই, এমন কয়েকটি স্টল দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন নানা রাজনৈতিক দলের নেতারা।
মেলার মাঠে গিয়ে দেখা গিয়েছে, আসানসোল পুরসভা, এডিডিএ, বর্ধমান জেলা পরিষদ, বীরভূম জেলা পরিষদ, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পরিষেবা দফতর ও কন্যাশ্রীর স্টল দেওয়া হয়েছে। অনেকটা এলাকা জুড়েই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে সেগুলি। স্টলের দেওয়ালে ঝোলানো হয়েছে নানা ভবিষ্যত্ কর্ম-পরিকল্পনার ফিরিস্তি ও কিছু কাজের বিবরণ। চেয়ার-টেবিল অবশ্য ফাঁকাই পড়ে। মেলার মাঠে আসা অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, নাগরিক পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত এই সব দফতরগুলি নিজেদের কর্মকাণ্ড জানাতে এখানে স্টল দিল কেন? কিন্তু স্টলে সংশ্লিষ্ট দফতরগুলির কোনও আধিকারিক বা কর্মীর দেখা না মেলায় এই প্রশ্নের জবাব পাওয়া যায়নি। এই সব স্টল থেকে শিল্প-বাণিজ্য সংক্রান্ত কী প্রচার করা হচ্ছে, জানা যায়নি তা-ও।
স্টল পিছু ভাড়া কত? মেলার আয়োজক আসানসোল বণিকসভার সভাপতি সুব্রত দত্ত বলেন, “স্টলের আকার অনুযায়ী মোটামোটি ভাড়া দাঁডিয়েছে ৫০ হাজার থেকে ১ লক্ষ টাকার মধ্যে।” তিনি জানান, সরকারি ও বেসরকারি প্রত্যেকের ক্ষেত্রেই এক ভাড়া। যা শুনে বিরোধী দলগুলির অভিযোগ, মুখ্যমন্ত্রী উদ্বোধন করবেন বলেই সরকারি তহবিলের লক্ষ-লক্ষ টাকা খরচ করে নানা দফতর এই স্টল দিয়েছে। আসানসোলের সিপিএম নেতা পার্থ মুখোপাধ্যায়ের অভিযোগ, “পুরসভা নাগরিকদের পর্যাপ্ত পানীয় জল দিতে পারছে না। এডিডিএ ধস কবলিত এলাকায় পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে পারছে না। তারাই আবার নিজেদের কর্মকাণ্ড বড় মুখ করে প্রচারের জন্য টাকা খরচ করে স্টল দিচ্ছে। হাস্যকর ব্যাপার!” বিজেপি-র আসানসোল জেলা সম্পাদক প্রশান্ত চক্রবর্তী দাবি করেন, “সস্তা রাজনীতি করতে মুখ্যমন্ত্রী নিজে মেলা-উত্সবের জন্য দান-খয়রাতি করছেন। সেই পথেই তৃণমূল পরিচালিত নানা সরকারি দফতর ও সংস্থা নাগরিক পরিষেবার টাকা নয়ছয় করছে।” কংগ্রেসের জেলা সম্পাদক চণ্ডী চট্টোপাধ্যায়ের আবার অভিযোগ, “সরকারি টাকা ঘুরপথে পাইয়ে দিয়ে শাসকদল জনপ্রিয়তা পেতে চাইছে।”
আসানসোল পুরসভার প্রশাসক বোর্ডের সদস্য তথা শহরের তৃণমূল বিধায়ক তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবশ্য ব্যাখ্যা, “নিজেদের কর্মকাণ্ড নাগরিকদের সামনে তুলে ধরার একটা মঞ্চ এই মেলা। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়েছি।” বর্ধমান জেলা পরিষদের সভাধিপতি দেবু টুডুর বক্তব্য, “মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে এই রাজ্যে যে শিল্প স্থাপনের পরিবেশ ফিরেছে, সেই বার্তাই আমরা স্টলের মাধ্যমে দিতে চেয়েছি।” এডিডিএ-র চেয়ারম্যান তথা দুর্গাপুরের তৃণমূল বিধায়ক নিখিল বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “পরে ফোন করুন।” পরে অবশ্য চেষ্টা করেও তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।