আক্রান্তদের সঙ্গে কথা সদস্যদের। নিজস্ব চিত্র।
রাতের আধাঁরে তিন গ্রামে অভিযানের নামে সন্ত্রাস চালিয়েছে পুলিশ মঙ্গলবার কালনার বৈদ্যপুর পঞ্চায়েতের আটকেটিয়া, রামনগর ও গোপালদাসপুরে ঘুরে এমনই দাবি করলেন রাজ্য মহিলা কমিশনের প্রাক্তন চেয়ারম্যান ভারতী মুত্সুদ্দির নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল। যদিও পরিদর্শক দলের ওই দাবি উড়িয়ে দিয়েছে পুলিশ।
শনিবার গভীর রাতে পুলিশ ও তৃণমূলের বাহিনী এক হয়ে তাঁদের ১৬টি বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেছিল সিপিএম। বেশ কয়েকটি বাড়ি তছনছ হয়ে গিয়েছিল বলেও তাঁদের দাবি। যদিও তৃণমূল পাল্টা জানিয়েছিল, কোনও হামলার ঘটনা ঘটেনি বরং দলের প্রতিষ্ঠা দিবসে তাঁদের কর্মী-সমর্থকদের উপর হামলা চালায় সিপিএম। ১৭ জনের নামে অভিযোগও করেন তারা। পুলিশেরও দাবি, অভিযুক্তদের ধরতেই ওই রাতে অভিযান চালানো হয়েছিল। যদিও অভিযুক্তেরা পলাতক ছিল। এই অভিযান নিয়েই প্রশ্ন তোলে সিপিএম। তাদের দাবি, পুলিশ তৃণমূলের সঙ্গেই ছিল। এমনকী তৃণমূলের লোকেরাই পুলিশকে বিভিন্ন বাড়িতে নিয়ে যায়।
মঙ্গলবার সকাল ১১টা নাগাদ ওই তিন গ্রামে হামলার পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতেই ওই দলটি কালনা পৌঁছয়। দলে ভারতীদেবী ছাড়াও নাট্য নির্দেশক চন্দন সেন, নাট্যকর্মী শ্যামল ভট্টাচার্য, সাহিত্যিক কিন্নর রায় এবং সমাজসেবী সুপ্রিয় গুপ্ত ছিলেন। গ্রামের আক্রান্ত বাড়িগুলিতে ঘুরে বেশ কিছু মহিলাদের সঙ্গে কথা বলেন তাঁরা। কয়েকটি বাড়ি ভাঙচুরের ছবিও তোলেন। দুপুরে প্রতিনিধি দলটি কালনার এসডিপিও ইন্দ্রজিত্ সরকারের কার্যালয়ে যান। সঙ্গী হন কালনার প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক অঞ্জলী মণ্ডল এবং স্থানীয় দুই মহিলা রীতা দুবে এবং সুন্দরী হাঁসদা। এসডিপিও-র কার্যালয়ে গিয়ে প্রতিনিধি দলের সদস্যেরা শনিবার রাতের ঘটনায় পুলিশের তীব্র সমলোচনা করেন। রীতেদেবীর অভিযোগ, তাঁর বাড়ির ভিতরে দুটি দরজার খিল ভেঙে পুলিশ ভেতরে ঢোকে। তারপর গালিগালাজ করে বাড়ির দোতলা থেকে টেনে তাঁকে টেনেিঁহচড়ে নামিয়ে আনে। তাঁর বড় ছেলের বইপত্র ছিঁড়ে দেওয়া হয় বলেও রীতাদেবীর দাবি। তাঁর আরও দাবি, এই পুরো সময়ে কোনও মহিলা পুলিশকর্মী সেখানে ছিলেন না। পুলিশের বিরুদ্ধে ভাঙচুরের অভিযোগ আনেন আদিবাসী গৃহবধু সুন্দরী হাঁসদাও। পরে এসডিপিও জানান, ঘটনার দিন পুলিশ কয়েকজন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করতে অভিযান চালিয়েছিল। তিনি নিজেও সেখানে ছিলেন। তবে পুলিশ কোনও বাড়িতে হামলা চালায় নি বলে তাঁর দাবি। এমনকী দুই মহিলা কনস্টেবলও তাঁদের সঙ্গে ছিলেন বলে জানান ইন্দ্রজিত্বাবু। তবে ইন্দ্রজিত্বাবুর মন্তব্যে সন্তুষ্ট হতে পারেননি পরিদর্শক দলের সদস্যরা। তাঁরা নিজেদের ক্যামেরা খুলে বাড়ি ভাঙচুরের ছবি দেখান। প্রশ্ন ওঠে, তাহলে এই পরিস্থিতি কীভাবে হল। বিকেল তিনটে নাগাদ দলটি মহকুমাশাসক সব্যসাচী ঘোষের সঙ্গে দেখা করেন। সেখানে রীতাদেবী পুলিশ ও তৃণমূলের বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ জমা দেন।
তবে পরিদর্শক দলটির সক্রিয়তা নিয়ে কটাক্ষ করেছে তৃণমূল। তৃণমূলের কালনা ২ ব্লকের সভাপতি প্রণব রায় বলেন, “ওই এলাকায় আমাদের ১০ কর্মী-সমর্থককে মেরে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। পরিদর্শক দল তাঁদের বাড়ির পাশ দিয়ে গেল অথচ খোঁজ নেয় নি।” তবে পরিদর্শক দলের সদস্য ভারতীদেবীর জবাব, “আমরা কোনও রাজনৈতিক দলের বিষয় নিয়ে আসি নি। পুলিশের অত্যাচার শুনে এসেছি। ভবিষ্যতে অন্য কোথাও এভাবে মানুষ আক্রান্ত হলে আমরা একই ভাবে সেখানে পোঁছে যাব।”