ভিড় গলির মধ্যেই চলছে গ্যাস জ্বালিয়ে রান্না।
দু’পাশে টিনের ছাউনি দেওয়া বেশ কিছু দোকানঘর। মাথায় বড় পলিথিনের শেড। এ দিক ও দিক ছড়িয়ে রয়েছে বৈদ্যুতিক তার। রাস্তা এতটাই সরু যে, চলাফেরা করাই সমস্যার। এ ভাবেই চলছে কালনার সবথেকে বড় ও পুরনো বাজার হিসেবে পরিচিত চকবাজার।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, কালনা পুরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের একটা বড় এলাকা জুড়ে এই বাজারটি তৈরি হয়েছিল প্রায় ২০০ বছর আগে। এলাকায় কেনাবেচার সুবিধার জন্য এই বাজারটি তৈরি করেছিল বর্ধমান রাজপরিবারের সদস্যরা। সেই সময় থেকে এই বাজার থেকে নিয়মিত খাজনা যেত রাজ পরিবারের কোষাগারে। প্রায় তিন দশক আগে এই বাজারটি অধিগ্রহণ করে রাজ্য সরকার। বর্তমানে রাজ্যের কৃষি বিপণন দফতরের অধীন কালনা নিয়ন্ত্রিত বাজার কমিটি এই বাজারটি দেখাশোনা করে।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদল এসেছে বাজারের ভেতরে ও বাইরে। বর্তমানে এই বাজারে একই সঙ্গে পাইকারি ও খুচরো ব্যবসা চলে। বাজার চত্বরে যেমন মুদিখানা, চিঁড়ে মুড়কি, ও চালের পাইকারি বাজার রয়েছে, তেমনই আছে খুচরো বাজার। চকবাজার কমিটি সূত্রে জানা গিয়েছে, চকবাজার চত্বরে রয়েছে প্রায় ৫০০টি স্থায়ী দোকান। এ ছাড়াও প্রতিদিন প্রায় ১০০০জন খুচরো ব্যবসায়ী তাঁদের পসরা নিয়ে এই বাজারে আসেন। বিক্রিবাটাও ভালই হয়। পাইকারি ও খুচরো ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, শুধু বর্ধমান নয়, নদিয়া, হুগলি, মুর্শিদাবাদের মানুষও এই বাজারে কেনাকাটা করতে আসেন।
কিন্তু আকারে বাড়লেও পরিকাঠামোর উন্নতি হয়নি চকবাজারে। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, বাজার চত্বরে পানীয় জল পাওয়া যায় না। কারণ পানীয় জল ধরে রাখার জন্য দু’টি ‘রিজারভার’ থাকলেও তার মধ্যে একটি খারাপ। সমস্যা মেটাতে নিয়ন্ত্রিত বাজার সমিতি দু’টি টিউবওয়েল তৈরি করলেও বছরের বেশির ভাগ সময়েই সেগুলি ভাঙা অবস্থায় পড়ে থাকে বলে অভিযোগ। শুধু তাই নয়, বাজারে নিকাশিনালার অবস্থাও খারাপ। মাছের আড়ত-সহ বাজারের বিভিন্ন জায়গায় জঞ্জাল ভরে গিয়ে উপচে পড়ছে নর্দমা। বাজারে ঢোকার মুখেই রয়েছে একটি নোংরা ফেলার ভ্যাট। কিন্তু নিয়মিত ভ্যাট পরিষ্কার না হওয়ায় ছড়ায় দুর্গন্ধ। বাজারে দু’টি শৌচাগার থাকলেও জলের অভাবে বর্তমানে সেগুলি প্রায় ব্যবহারের অযোগ্য। স্থানীয় ব্যবসায়ী দেবব্রত সাহার অভিযোগ, “বাজার পরিষ্কার করার জন্য পুরসভার সাফাই কর্মীরা থাকলেও তাঁরা অনিয়মিত।” ব্যবসায়ীদের আরও অভিযোগ, বাজার নিচু এলাকায় হওয়ায় একটু বৃষ্টিতেই বাজার চত্বরে জল জমে যায়। ফলে ক্রেতাদের দোকানে ঢোকাই সমস্যা হয়ে যায়। কালনা নিয়ন্ত্রিত বাজার সমিতি সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর খানেক আগে ক্রেতা ও বিক্রেতার চাপ কমাতে জিউধারা কমপ্লেক্সে চকবাজারের মাছের বাজারটি স্থানান্তরিত করার চেষ্টা হলেও এখনও কাজ হয়নি। মাছ ব্যবসায়ী খোকন দাস বলেন, “বর্ষায় বাজারের টিনের ছাউনি দিয়ে জল পড়ে। ফলে সমস্যা হয়।”
বাজারে জমে আবর্জনা।
সমস্যার কথা স্বীকার করে চকবাজার কমিটির সম্পাদক চাঁদু ভারতী বলেন, “সব থেকে সমস্যার হল পানীয় জল ও শৌচাগার। বাজারে যদি আগুন লাগে তাহলে সেটা নেভানোর পরিকাঠামোও নেই।” তাঁর অভিযোগ, বাজারের সমস্যাগুলি প্রশাসনের বিভিন্ন মহলে জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি। কালনা পুরসভার চেয়ারম্যান বিশ্বজিৎ কুণ্ডু বলেন, “বর্তমানে চকবাজারের নিকাশি ও আলোর পরিষেবা দেয় পুরসভা। বাকিগুলি দেখে নিয়ন্ত্রিত বাজার সমিতি। শুনেছি তারা এই বাজারের নিকাশি নালা সংস্কারের জন্য উদ্যোগী হয়েছে।” কালনার মহকুমাশাসক তথা নিয়ন্ত্রিত বাজার সমিতির চেয়ারম্যান সব্যসাচী ঘোষ বলেন, “আমি সবে মহকুমার কাজে যোগ দিয়েছি। চকবাজারের বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখব।”
—নিজস্ব চিত্র।