আবর্জনা প্রায় উপচে এসেছে রাস্তায়। কুলটিতে তোলা নিজস্ব চিত্র।
বেতন বৃদ্ধির দাবি মানেনি প্রশাসন। তাই কাজে ঢিলে দিয়েছেন পুরসভার সাফাইকর্মীর। আর তার ফল ভুগছেন কুলটির বাসিন্দারা। শহরে যত্রতত্র ছড়িয়ে আবর্জনা। দুর্গন্ধ ও মশা-মাছির উপদ্রবে ব্যতিব্যস্ত মানুষজন। কিন্তু হেলদোল পুরসভার নেই বলে অভিযোগ তাঁদের। আসানসোলের মহকুমাশাসক অমিতাভ দাসের অবশ্য আশ্বাস, সমস্যা মেটাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
বেতন বাড়ানো, নিয়মিত বেতন ও পরিচয়পত্র দেওয়ার দাবিতে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে আন্দালন করছেন কুলটি পুরসভার সাফাইকর্মীরা। বার তিনেক পুরসভার দরজায় তালা ঝুলিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিক্ষোভও দেখিয়েছেন তাঁরা। কিন্তু মহকুমাশাসক সাফ জানিয়েছেন, নিয়মিত বেতন ও পরিচয়পত্র দেওয়ার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে বেতন বাড়ানোর ব্যাপারে কোনও আশ্বাস এখনই দেওয়া সম্ভব নয়। সম্প্রতি আসানসোলে মহকুমা প্রশসানের সঙ্গে বৈঠকে তাঁদের এ কথা জানিয়েও দেওয়া হয় বলে সাফাইকর্মীরা জানান। আর তা শোনার পর থেকেই ক্ষুব্ধ তাঁরা। বিক্ষোভ-আন্দোলনের রাস্তা থেকে সরে এলেও সাফাইয়ে তাঁরা একেবারে মন দিচ্ছেন না বলে অভিযোগ পুরবাসীর।
কুলটির নানা এলাকা ঘুরলেই দেখা যায়, শহর কার্যত আবর্জনার স্তূপে ঢেকে গিয়েছে। নিয়ামতপুরে জি টি রোড লাগোয়া লছিপুরের বিস্তীর্ণ জায়গা জুড়ে ডাঁই হয়ে পড়ে রয়েছে আবর্জনা। নিকাশি ব্যবস্থার অভাবে নালার জল রাস্তার উপর দিয়ে বইছে। নিয়ামতপুরের পাঁচ নম্বর, সাত নম্বর, স্টেশন রোড, কুলটির রানিতলায় বাজার লাগোয়া বিএনআর নিউ রোড, বরাকরের জিটি রোড, নিমাকানালি, বালতোড়িয়া, ডিসেরগড়, সাঁকতোড়িয়া-সহ বহু এলাকায় একই ছবি। সম্প্রতি দু’দিনের বৃষ্টিতে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। দুর্গন্ধ ও পোকামাকড়ের উপদ্রবে মুশকিলে পড়ছেন শহরবাসী।
নির্ধারিত সময়ে ভোট না হওয়ায় গত কয়েক মাস ধরে এই পুরসভা চলছে প্রশাসক নিয়োগ করে। শহর সাফাইয়ে গাফিলতি নিয়ে নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন কুলটির প্রাক্তন উপ-পুরপ্রধান তথা তৃণমূল নেতা বাচ্চু রায়। তাঁর বক্তব্য, “গত দু’মাস ধরে এই অচলাবস্থা চলছে। প্রতি দিন সাতটি আবর্জনা তোলার গাড়ি চলে পুরসভায়। তবু এলাকায় ময়লার পাহাড় জমে গিয়েছে। প্রশাসনের কোনও হেলদোল নেই।” একই অভিযোগ পুরসভার প্রাক্তন বিরোধী নেতা সিপিএমের মিঠু সরকার। তিনি দাবি করেন, “পরিষেবা সংক্রান্ত এই সব দৈনন্দিন কাজকর্ম দেখার ব্যাপারে অভিজ্ঞ কর্তৃপক্ষ থাকা উচিত। সেটারই অভাব রয়েছে কুলটিতে।” মহকুমাশাসক অমিতাভবাবু জানান, এলাকা যাতে নিয়মিত সাফ করা হয়, সে ব্যবস্থা প্রশাসন করছে।
সাফাইকর্মীদের দাবি মেটানো হচ্ছে না কেন? মহকুমা প্রশাসনের এক আধিকারিক দাবি করেন, সমস্যাটি বেশ জটিল। পুরসভায় বর্তমানে খাতায়-কলমে ৩৭০ জন অস্থায়ী সাফাইকর্মী রয়েছেন। কিন্তু বাস্তবে কাজ করেন শ’দুয়েক কর্মী। বাকিদের অস্তিত্ব পাচ্ছে না মহকুমা প্রশাসন। ওই আধিকারিক দাবি করেন, পুরসভার কয়েক জন কাউন্সিলরের কাছ থেকে মহকুমা প্রশাসন জেনেছে, ভুয়ো সাফাইকর্মীদের নামে নিয়মিত বেতনের টাকা তুলে আত্মসাত করা হয়েছে। এই অভিযোগ খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন। এ ব্যাপারে স্থির সিদ্ধান্তে না আসা পর্যন্ত সমস্যা মেটার ব্যাপারে কোনও আশ্বাস প্রশাসনের কর্তারা দিতে পারছেন না।