উন্নয়ন নিয়ে রাজনীতি চলছেই।
সিপিএম বিধায়কের এলাকা উন্নয়ন তহবিলের টাকা তাদের এলাকায় খরচ করা হবে না বলে একপ্রকার সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছে তৃণমূলের একটি পঞ্চায়েত সমিতি। বিষয়টি নিয়ে রায়নার ওই সিপিএম বিধায়ক বাসুদেব খান রাজ্য বিধানসভার বিধায়ক এলাকা উন্নয়ন প্রকল্পের স্থায়ী কমিটির কাছে এবং বর্ধমান জেলার অতিরিক্ত জেলাশাসকের (উন্নয়ন) দফতরে অভিযোগও করেছেন। সমস্যা মেটাতে নেমে পড়েছে প্রশাসনও।
বিধায়কের অভিযোগের ভিত্তিতে বুধবার অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) প্রণব বিশ্বাস একটি বৈঠক করেন। বৈঠক থেকেই রায়না ২ বিডিওকে কোনও রকম সমস্যা ছাড়াই যেন বিধায়ক উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ শেষ করা হয় তার নির্দেশ দেওয়া হয়। বৃহস্পতিবার প্রণববাবু বলেন, “বিধায়ক এলাকা উন্নয়নের টাকা জেলাশাসকের কাছে আসে। বিধায়ক কাজের সুপারিশ করেন। কাজ করানোর দায়িত্ব আমাদের। সেখানে কোনও পঞ্চায়েত সমিতি কাজ করতে দেবে না বললে তো চলবে না!”
তবে রায়না ২ ব্লকের ওই তৃণমূল পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি আব্দুল আলিমের দাবি, “বিধায়ক যে সব কাজের সুপারিশ করেছেন, তা আমাদের এলাকায় জরুরি নয়। আরও জরুরি কাজ রয়েছে। সে জন্য আলোচনার ভিত্তিতে সুপারিশ করার কথা বলেছিলাম। বৈঠকও ডেকেছিলাম। কিন্তু উনি আসেননি।”
সিপিএম বিধায়ক বাসুদেব খানের অবশ্য দাবি, “আমার সুপারিশ করা কাজ করতে দেবে না বলে তৃণমূল পরিচালিত রায়না ২ পঞ্চায়েত সমিতি বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। উন্নয়নের ক্ষেত্রেও তৃণমূল রাজনীতি করছে। ফলে গ্রামবাসীদের দাবিদাওয়া আটকে রয়েছে।” এ বছরের মার্চের মধ্যে ওই কাজগুলি না হলে আগামী আর্থিক বছরের জন্য টাকা আটকে যাবে বলেও জানান তিনি। জানা গিয়েছে, বাসুদেববাবু রায়না ২ ব্লকের স্কুলের উন্নয়ন, শ্মশান চুল্লি তৈরি, কবরস্থানের উন্নয়ন, ঢালাই রাস্তা-সহ ৮টি প্রকল্পের জন্য চলতি আর্থিক বছরে (২০১৪-১৫) ৩১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ করেছেন। বিধায়কের অভিযোগ, “কয়েক বছর ধরে গ্রামের রাস্তা ও অন্যান্য উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। এ বার গ্রামের মানুষের দাবি মেনে সুপারিশ করা হয়েছে। তাতেই ভয় পেয়ে কাজ আটকে দিচ্ছে তৃণমূল পরিচালিত পঞ্চায়েত সমিতি।”
রায়না ২ পঞ্চায়েত সমিতির নির্বাহী আধিকারিক তথা বিডিও রবীন্দ্রনাথ বারুইও স্বীকার করে নিয়েছেন বিধায়কের সুপারিশ করা কয়েকটি প্রকল্পের কাজ আটকে রয়েছে। পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির আপত্তিতেই যে উন্নয়নমূলক কাজগুলি আটকে রয়েছে তাও মেনে নিয়েছেন তিনি। রবীন্দ্রনাথবাবু বলেন, “আমরা ওই কাজগুলি চালু করার ব্যাপারে চেষ্টা করছি।” গত ২৮ জানুয়ারি বাসুদেববাবুর অভিযোগ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয় রাজ্য বিধানসভার বিধায়ক এলাকা উন্নয়ন প্রকল্পর স্থায়ী কমিটির সভায়। বৃহস্পতিবার ওই কমিটির সদস্য, বর্ধমান জেলার বিধায়ক সাজাহান চৌধুরী বলেন, “বাসুদেববাবুর অভিযোগ লিপিবদ্ধ করা হয়েছে।” ওই কমিটির সভাপতি, মালদহের হরিপুরের বিধায়ক খগেন মুর্মু বলেন, “আমাদের দফতর থেকে পুরো বিষয়টি জেলাশাসককে জানানোর জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”
তবে তৃণমূল পরিচালিত রায়না ২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি আব্দুল আলিম ‘রাজনৈতিক কারণে’ ওই সব উন্নয়নমূলক প্রকল্পের কাজ আটকে রয়েছে বলে মানতে চাননি। তিনি বলেন, “উন্নয়নের স্বার্থে আমরা রাজনৈতিক রং দেখি আমরা চাই আলোচনা করে এলাকার উন্নয়ন করতে।” বাসুদেবাবু অবশ্য কটাক্ষ, “আমার সুপারিশ করা গ্রামের উন্নয়নের কাজ আটকে এখন আলোচনার কথা বলছেন। আগে তো এরকম কথা বলেননি তৃণমূল পরিচালিত পঞ্চায়েত সমিতি!”