আড়াআড়ি ভাবে যাওয়া দুই তার নিয়েই সমস্যা। —নিজস্ব চিত্র।
উপর দিয়ে উচ্চ পরিবাহী বিদ্যুতের তারের লাইন। তার ঠিক নীচে গৃহস্থালীতে সরবরাহের জন্য তুলনায় কম ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুতের লাইন। আর তার নীচে সার দিয়ে বাড়িঘর। শুধু তাই নয়, বিদ্যুতের লাইনের গা ঘেঁষে মাথা তুলেছে কিছু বহুতলও। দুর্গাপুরের শঙ্করপুরে এই পরিস্থিতিতেই বাস করছেন মানুষজন।
সম্প্রতি দুই বিদ্যুতের লাইনের মধ্যে ঘনঘন শটর্র্ সার্কিটের ফলে বেশ কিছু বাড়ির বৈদ্যুতিন সরঞ্জাম নষ্ট, কয়েক জন বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়ার পরে নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। অবিলম্বে এলাকায় সমীক্ষা চালিয়ে কোন কোন নির্মাণ অবৈধ, তার তালিকা তৈরি করে ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার (বিএলএলআর) দফতরকে রিপোর্ট জমা দিতে বলেছেন মহকুমাশাসক কস্তুরী সেনগুপ্ত। তিনি বলেন, “রিপোর্ট পাওয়ার পরে প্রয়োজন অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে।”
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ৯ মার্চ দুপুরে শঙ্করপুর মোড়ের বাসিন্দারা হঠাৎ আগুনের তীব্র ঝলকানি দেখতে পান। সঙ্গে আওয়াজ, ধোঁয়া। আশপাশের বাড়িতে পুড়তে থাকে একের পর এক বৈদ্যুতিন সামগ্রী। এক বধূ আহত হন। বাসিন্দারা দেখেন, উচ্চ পরিবাহী তার ঝুলে পড়েছে কম পরিবাহী ক্ষমতাসম্পন্ন তারের উপরে। ফলে শর্ট সার্কিট থেকে এমন ঘটেছে। ১৭ মার্চ ফের এমন ঘটনা ঘটে। এর পরেই ক্ষুব্ধ বাসিন্দারা পথ অবরোধ করেন। পুলিশ অবরোধ তুলতে লাঠি চালায় বলে অভিযোগ। পুলিশ যদিও তা মানেনি। তবে বিশ্ৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগে ৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশ তখন সংশ্লিষ্ট সংস্থার সঙ্গে সমস্যাটি নিয়ে কথা বলার আশ্বাস দেয়। কিন্তু ১৯ মার্চ পাশের টেটিখোলায় ফের শর্ট সার্কিটের ঘটনা ঘটে। একটি বাড়ির অ্যাসবেস্টসের চাল ফেটে যায়, বৈদ্যুতিন সরঞ্জাম পুড়ে যায়। বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয় তিন কিশোরী।
কেন ঘনঘন এমন ঘটছে? রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন কোম্পানি সূত্রে জানা গিয়েছে, শঙ্করপুর মোড়ের উপর দিয়ে তাদের একটি ১ লক্ষ ৩২ হাজার ভোল্টের লাইন গিয়েছে। তার অনেক নীচ দিয়ে আড়াআড়ি ভাবে গিয়েছে দুর্গাপুর প্রজেক্টস লিমিটেডের (ডিপিএল) গৃহস্থালীর বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য ১১ হাজার ভোল্টের লাইন। দু’টি লাইনের মাঝে যথেষ্ট ব্যবধান। উপর-নীচে আড়াআড়ি ভাবে বহু জায়গাতেই লাইন গিয়েছে। কিন্তু শঙ্করপুর এলাকায় কোনও ভাবে তারের টান কমবেশি হয়ে যাওয়ায় নীচের ডিপিএলের তারের সঙ্গে সংযোগ হয়ে শর্ট সার্কিট হয়ে যাচ্ছে। পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে বলে জানান সংস্থার এক আধিকারিক।
শঙ্করপুরে বারবার এমন ঘটায় উদ্বিগ্ন মহকুমা প্রশাসন। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, মহকুমাশাসকের পৌরহিত্যে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে নিয়ে ইতিমধ্যে একটি বৈঠক হয়েছে। সেখানে মহকুমাশাসক ছাড়া ছিলেন ডিপিএল এবং রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার আধিকারিক, পুলিশের উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা, বিএলএলআর দফতরের আধিকারিক ও ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার বাসিন্দাদের তরফে দুই প্রতিনিধি। শর্ট সার্কিটের ঘটনা বন্ধ করতে দুই বিদ্যুৎ সংস্থাকে উদ্যোগী হতে বলেন মহকুমাশাসক। পুলিশের তরফে এলাকায় মাইকে করে মেরামতির জন্য বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধের জন্য সবার কাছে সহযোগিতা চাওয়া হচ্ছে। মহকুমাশাসক জানান, আপাতত বিদ্যুৎ সংযোগ ছিন্ন করে মেরামতির কাজ হবে। পরে দুই লাইন মাটির নীচ দিয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা যায় কি না, ভেবে দেখতে বলা হয়েছে দুই সংস্থাকে। যাঁরা বিদ্যুতের তারের লাইনের নীচে বাড়ি তৈরি করেছেন তাঁরা সবাই ওই সব জমির প্রকৃত মালিক কি না, তা সমীক্ষার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বিএলএলআর আধিকারিককে।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, অনিয়ম ধরা পড়লে উচ্ছেদ অভিযান চালানো যাবে না। তবে বিকল্প কী করা যায়, ভাবা হবে। গত কয়েক বছরে ওই এলাকায় বিদ্যুতের লাইন থেকে সামান্য দূরত্বে বেশ কিছু বহুতল গড়ে উঠেছে। অভিযোগ, সেগুলির একাংশ নিয়ম ভেঙে গড়া হয়েছে। মহকুমাশাসক বলেন, “বিএলএলআর দফতরের রিপোর্ট পেলেই সব পরিষ্কার হয়ে যাবে। পরে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”