বাঁশের সাঁকোর ভরসায় দিন কাটছে চার গ্রামের

এক দিকে তিনটি গ্রাম, অন্য দিকে একটি। মাঝখান দিয়ে ভরা বর্ষায় হু-হু করে বইছে বেহুলা নদী। দু’পাড়ের মধ্যে যোগাযোগের মাধ্যম হল একটি নড়বড়ে বাঁশের সেতু। যেটা প্রতি বর্ষাতেই ভেঙে যায়। তখন এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে যাতায়াত করতে ভরসা হল ঘুরপথ। এই অবস্থাতেই বছরের পর বছর ধরে দিন কাটাচ্ছেন কালনা ২ ব্লকের কল্যাণপুর পঞ্চায়েতের বাসিন্দারা।

Advertisement

কেদারনাথ ভট্টাচার্য

কালনা শেষ আপডেট: ৩০ জুলাই ২০১৪ ০১:১৭
Share:

হেঁটে বা সাইকেল কাঁধে এভাবেই চলে পারাপার।— নিজস্ব চিত্র।

এক দিকে তিনটি গ্রাম, অন্য দিকে একটি। মাঝখান দিয়ে ভরা বর্ষায় হু-হু করে বইছে বেহুলা নদী। দু’পাড়ের মধ্যে যোগাযোগের মাধ্যম হল একটি নড়বড়ে বাঁশের সেতু। যেটা প্রতি বর্ষাতেই ভেঙে যায়। তখন এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে যাতায়াত করতে ভরসা হল ঘুরপথ। এই অবস্থাতেই বছরের পর বছর ধরে দিন কাটাচ্ছেন কালনা ২ ব্লকের কল্যাণপুর পঞ্চায়েতের বাসিন্দারা। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, সেতুটি পাকা করার জন্য বার বার দাবি জানানো হলেও কোনও লাভ হয়নি।

Advertisement

কল্যাণপুর পঞ্চায়েতের বেহুলা নদীর এক পাড়ে রয়েছে কেলনই, মালিকেলনই ও একচাকা গ্রাম। অন্য পাড়ে রয়েছে সর্বমঙ্গলা গ্রাম। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, সর্বমঙ্গলা গ্রামের বেশির ভাগ চাষিদের চাষের জমি রয়েছে মালিকেলনই গ্রামের মধ্যে। ফলে প্রায় সারা বছরই চাষ করার সময়ে সর্বমঙ্গলা গ্রামের চাষিদের সমস্যায় পড়তে হয়। আবার মালিকেলনই, কেলনই গ্রামের বাসিন্দাদের খেতমজুরের কাজ করার জন্য সর্বমঙ্গলা গ্রামে যেতে হয়। এ ছাড়াও স্কুল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, বাজার-সহ বিভিন্ন প্রয়োজনে বেহুলা নদীর এ পাড়ের বাসিন্দাদের অন্য পাড়ে যাতায়াত করতেই হয়। কিন্তু পারাপারের জন্য পাকা সেতু না থাকার জন্য ফলে সমস্যায় পড়েন গ্রামবাসীরা। বাঁশের সেতু দুর্বল হয়ে গেলে কিংবা ভেঙে গেলে প্রায় ২ কিমি ঘুরে যাতায়াত করতে হয় এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে। নষ্ট হয় অনেকটা সময়।

এলাকায় গিয়ে দেখা গিয়েছে, বাঁশের সেতুটি কোনও রকমে দাঁড় করানো আছে। সেতুর দু’দিকে কোনও বেড়া নেই। তার মধ্যেই অনেকে সাইকেল মাথায় নিয়ে সেতুু পার হচ্ছেন। এখনও অক্ষত থাকলেও নদীতে জল আরও বাড়লে সেতুর ভবিষ্যৎ কী হবে সে নিয়ে সন্দেহে রয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁদের অভিযোগ, নদীতে ভাসমান পানার চাপ বাড়লেই নষ্ট হয়ে যায় সেতুর বাঁশ। ফলে সেতু পারাপারের সময় সামান্য অন্যমনস্ক হলেই নদীতে পড়ে যাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। স্থানীয় চাষি বাসু ক্ষেত্রপালের অভিযোগ, “গ্রামের বেশির ভাগ মানুষের রুটিরুজি হল চাষ। কিন্তু যাতায়াত করাটাই তো সমস্যার। তার প্রভাব পড়ে চাষের জমিতে।” তাঁর দাবি, সেতুটি পাকা হলে শুধু যাতায়াতেই যে সুবিধা হবে তাই নয়, উন্নতি হবে এলাকার অর্থনীতির। স্থানীয় বাসিন্দা অমৃত মণ্ডলের দাবি, প্রতি বছরই ভোটের সময় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা গ্রামে এসে পাকা সেতু করার প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু তাতে অবশ্য কোনও কাজ হয় না।

Advertisement

স্থানীয় বাসিন্দা তথা কল্যাণপুর পঞ্চায়েতের উন্নয়ন কমিটির সদস্য পিন্টু খামারু বলেন, যাতায়াতের এই সমস্যার বিষয়টি প্রশাসনের নানা স্তরে জানানো হয়েছে। কিন্তু কাজ হয়নি। পিন্টুবাবুর দাবি, “প্রতি বার বর্ষার সময় পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে প্রায় ২০ হাজার টাকা খরচ করে সেতুটিকে সারানো হয়। বছরের অন্যান্য সময় গ্রামবাসীরা নিজেদের উদ্যোগেই সেতুটির সংস্কার করে নেয়।”

কালনার বিধায়ক বিশ্বজিত কুণ্ডু বলেন, “সেতুটিকে পাকা করার জন্য প্রচুর অর্থের প্রয়োজন। শুধুমাত্র বিধায়ক তহবিলের টাকায় এই সেতু করা সম্ভব নয়। এ ব্যাপারে সেচ দফতরে লিখিত ভাবে জানানো উচিত।” জেলার সেচ দফতরের এক কর্তা বলেন, বিষয়টি লিখিত ভাবে জানালে তারা সমস্যাটি সমাধানের চেষ্টা করবেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন