পরিষ্কার হয় না দুর্গাপুর ব্যারাজ। ছবি: বিশ্বনাথ মশান।
পলি জমে কমে যাচ্ছে গভীরতা। ফলে, কমছে জলধারণ ক্ষমতা। কিন্তু দুর্গাপুরে ডিভিসি ব্যারাজের সংস্কার হচ্ছে না। জল বাড়লেই তাই আশঙ্কায় ভুগতে শুরু করেন নিম্ন দামোদরের বিস্তীর্ণ এলাকার বাসিন্দারা। কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন, সংস্কারের জন্য অর্থ বরাদ্দ করেও কাজের কাজ কিছু হয়নি বলে অভিযোগ বিজেপি-র।
ডিভিসি সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৯৪৩ সালে দামোদরের বন্যায় বহু প্রাণহানি হয়। নষ্ট হয় প্রচুর চাষজমি। তার পরে চিন্তাভাবনা শুরু হয়, কী ভাবে দামোদরের বন্যা নিয়ন্ত্রণ করে সেই জলকে কাজে লাগানো যায়। ডিভিসি ব্যারাজ গড়ে তোলা হয় ১৯৪৮ সালে। ১৯৫৫ সালে একমাত্র ব্যারাজটি গড়ে তোলা হয় দুর্গাপুরে। প্রায় সাড়ে ১৯ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে এই ব্যারাজের ‘ক্যাচমেন্ট’ এলাকা। ৩৪টি গেট নিয়ে তৈরি এই ব্যারাজ লম্বায় ৬৯২ মিটার। ব্যারাজটি তৈরি হওয়ায় নিম্ন দামোদরে বন্যার আশঙ্কা অনেকটা কমে যায়। এর পাশাপাশি খরিফ চাষে প্রায় ৮ লক্ষ একর, রবি চাষে প্রায় ৪৫ হাজার একর এবং বোরোয় প্রায় ১ লক্ষ ৭২ হাজার একর জমিতে সেচের ব্যবস্থা করা হয়। ডিভিসি ব্যারাজ গড়ে ওঠার ফলে লাভ হয় দুর্গাপুর শহরেরও। ব্যারাজ থেকে জল তুলে তা পরিশোধন করে গৃহস্থালী ও বিভিন্ন কারখানায় সরবরাহ করা হয়।
কিন্তু, এখন ব্যারাজের জলধারণ ক্ষমতা কমে যাওয়ায় সমস্যা তৈরি হচ্ছে। ডিভিসি সূত্রে জানা গিয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না হওয়ায় ব্যারাজের উপরিভাগে পলি ও বালি জমেছে। জলধারণ ক্ষমতা ৬ মিলিয়ন কিউবিক মিটার থেকে কমে দাঁড়িয়েছে প্রায় সাড়ে তিন মিলিয়ন কিউবিক মিটারে। অবিলম্বে ব্যারাজ সংস্কারের দাবি দুর্গাপুরবাসী বহু দিন ধরেই করে আসছেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি বলে অভিযোগ।
একই অভিযোগ তুলেছে বিজেপি-ও। তাদেরও দাবি, দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ার ফলে ৩৫ ফুট গভীর দামোদরে পলি জমে জলধারণ ক্ষমতা কমে যাচ্ছে। তাই একটু বেশি জল জমলেই তা ছেড়ে দিতে হচ্ছে। ফলে, নীচের অংশে থাকা দুর্গাপুরের নানা গ্রাম থেকে কাঁকসা, বুদবুদের বিভিন্ন এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়ছে। ক্ষতি হচ্ছে ফসল থেকে বাড়িসব কিছুরই।
বিজেপি-র রাজ্য কমিটির সদস্য নরেশ কোনার অভিযোগ করেন, আগে বহু বার সংসদীয় কমিটি দামোদর পরিদর্শন করেছে। এক বার ‘গঙ্গা অ্যাকশন প্ল্যান’-এর মধ্যে দামোদরকে ধরা হয়েছিল। পলি সংস্কারের জন্য ৪০০ কোটি টাকা ব্যয়বরাদ্দও ধরা হয়েছিল। কিন্তু দামোদরের পাড়ে একটি বৈদ্যুতিক চুল্লি ছাড়া আর কোনও কাজ হয়নি বলে তাঁর দাবি। তিনি আরও অভিযোগ করেন, ২০০৮ সালে দামোদর থেকে পলি তোলার জন্য একটি পরিকল্পনা তৈরি করেছিল ডিভিসি। এই পলি ও বালি রাখার জায়গার জন্য ডিভিসি আসানসোল-দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদের (এডিডিএ) কাছে আবেদন করে। কিন্তু সেই পরিমাণ জমি এডিডিএ দিতে পারেনি। যদিও এডিডিএ-র চেয়ারম্যান তথা তৃণমূল বিধায়ক নিখিল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আমি চেয়ারম্যান হওয়ার পর থেকে এ ব্যাপারে কোনও প্রস্তাব পাইনি। তবে ডিভিসি আবেদন জানালে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করব।” নরেশবাবু অভিযোগ করেন, দামোদরের সংস্কারের বিষয়ে রাজ্য সরকার কোনও সদর্থক ভূমিকা নিচ্ছে না। তিনি বলেন, “আমরা দামোদর সংস্কারের জন্য গণস্বাক্ষর অভিযান শুরু করেছি। দাবিপত্র মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হবে।”
ডিভিসি-র দুর্গাপুর মহকুমা কার্যালয়ের তরফে অবশ্য সংস্কারের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হচ্ছে বলে জানানো হয়েছে। দফতরের এক আধিকারিক বলেন, “পলি ও বালি তোলার একটি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে সমীক্ষা হয়ে গিয়েছে।”