বসছে প্রশাসক, ভোট না হওয়ায় ক্ষুব্ধ বিরোধীরা

মহকুমার বাকি তিন পুরসভাকে জুড়ে দেওয়া হবে আসানসোলের সঙ্গে। রাজ্য সরকারের এই ঘোষণার পরে নির্ধারিত সময়ে পুরভোট হচ্ছে না আসানসোল ও কুলটিতে। অথচ, এই দুই পুরসভার বর্তমান বোর্ডের মেয়াদ ফুরোচ্ছে আজ, বুধবার। বৃহস্পতিবার থেকে দুই পুরসভাতেই এক জন করে প্রশাসক নিয়োগ করা হবে। কবে ভোট হবে, ঠিক নেই। তত দিন এক জন প্রশাসকের পক্ষে নাগরিক পরিষেবা-সহ যাবতীয় কাজকর্মের তদারক করে ওঠা কতটা সম্ভবপর হবে, সে নিয়েই এখন সংশয়ে পুরবাসীর একাংশ ও বিরোধী দলগুলি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

আসানসোল শেষ আপডেট: ১৬ জুলাই ২০১৪ ০০:৪৩
Share:

মহকুমার বাকি তিন পুরসভাকে জুড়ে দেওয়া হবে আসানসোলের সঙ্গে। রাজ্য সরকারের এই ঘোষণার পরে নির্ধারিত সময়ে পুরভোট হচ্ছে না আসানসোল ও কুলটিতে। অথচ, এই দুই পুরসভার বর্তমান বোর্ডের মেয়াদ ফুরোচ্ছে আজ, বুধবার। বৃহস্পতিবার থেকে দুই পুরসভাতেই এক জন করে প্রশাসক নিয়োগ করা হবে। কবে ভোট হবে, ঠিক নেই। তত দিন এক জন প্রশাসকের পক্ষে নাগরিক পরিষেবা-সহ যাবতীয় কাজকর্মের তদারক করে ওঠা কতটা সম্ভবপর হবে, সে নিয়েই এখন সংশয়ে পুরবাসীর একাংশ ও বিরোধী দলগুলি।

Advertisement

রানিগঞ্জ, জামুড়িয়া ও কুলটি পুরসভাকে আসানসোল পুরসভার সঙ্গে যুক্ত করা হবেমাস দুয়েক আগে ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাই বর্তমান বোর্ডের মেয়াদ ফুরোলেও আপাতত নির্বাচন হচ্ছে না। আসানসোল ও কুলটি পুরসভা সূত্রে জানানো হয়েছে, মুখ্যমন্ত্রী এই বিষয়টি গুরুত্ব দিয়েই দেখছেন। গত ৯ জুলাই বর্ধমানে জেলা প্রশসনের সঙ্গে বৈঠকেও এ নিয়ে আলোচনা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। জেলা প্রশাসনের এক কর্তা জানান, মুখ্যমন্ত্রী ফের জানিয়েছেন, বড় আকারের আসানসোল পুরসভা গঠন হবে। এর জন্য প্রথমিক কিছু কাজ এগিয়ে রাখার নির্দেশও দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। আসানসোলের মহকুমাশাসক অমিতাভ দাস বলেন, “জেলাশাসকের নির্দেশে কুলটি পুরসভার বেশ কিছু তথ্য আমরা যথাস্থানে পাঠিয়ে দিয়েছি।” জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, পুরসভায় কত জন স্থায়ী কর্মী, কত সাধারণ কর্মী, স্থায়ী বা সাধারণ কর্মী, নিয়োগের আগে সংশ্লিষ্ট দফতরের অনুমতি নেওয়া হয়েছে কি না, কত জন তালিকাভুক্ত ঠিকাদার আছেন, পুর এলাকার আয়তন ও জনসংখ্যা কত, কৃষি ও শিল্পের জমির পরিমাণ কত, শহর ও গ্রামাঞ্চলের সংখ্যা কত ইত্যাদি তথ্য জানানো হয়েছে।

বোর্ডের মেয়াদ ফুরনোয় বৃহস্পতিবার থেকে এই দুই পুরসভায় জন প্রতিনিধি থাকবেন না। ফলে, পুর পরিষেবার কাজকর্ম কতটা ভাল ভাবে হবে, সে নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন শহরবাসীর অনেকে। তাঁদের যুক্তি, প্রতি ওয়ার্ডে এক জন করে কাউন্সিলর, একাধিক বোরো চেয়ারম্যান, মেয়র পারিষদ, ডেপুটি মেয়র, মেয়র, চেয়ারম্যান থাকার পরেও নানা সময়ে উপযুক্ত পরিষেবা না পাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। জল, নিকাশি, রাস্তা, আলো-সহ নানা পরিষেবায় ঘাটতির অভিযোগে গত পাঁচ বছরে পুরসভায় বেশ কিছু ক্ষোভ-বিক্ষোভ হয়েছে। এখন এক জন প্রশাসকের পক্ষে সেই কাজ কতটা সামাল দেওয়া সম্ভব হবে, সে নিয়েই সংশয় পুরবাসীর।

Advertisement

নির্বাচন না করিয়ে রাজ্য সরকারের এই প্রশাসক নিয়োগের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছে পুরসভার বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি। আসানসোল পুরসভার বিরোধী দলনেতা তথা প্রাক্তন মেয়র সিপিএমর তাপস রায়ের দাবি, “প্রশাসক বসানোর সিদ্ধান্ত অত্যন্ত অগণতান্ত্রিক পদক্ষেপ। এর ফলে নাগরিক পরিষেবা ব্যাহত হবে।” তাঁর আরও দাবি, জনপ্রতিনিধিদের মানুষের দৈনন্দিন প্রয়োজন হয়। পরিষেবার ব্যাপারে যোগাযোগ ছাড়াও শংসাপত্র নেওয়া, নানা ভাতার জন্য তদ্বির—বহু কাজেই নাগরিকেরা কাউন্সিলরের দ্বারস্থ হন। কিন্তু বৃহস্পতিবার থেকে আর সে ভাবে কাজ হবে না। বিজেপি-র আসানসোল জেলা সম্পাদক প্রশান্ত চক্রবর্তীর অভিযোগ, “লোকসভা ভোটে আসনসোলে হেরে ভয় পেয়েছে তৃণমূল। ওরা জানে, সময়ে ভোট হলে হারত। তাই ভোট পিছোনোর কৌশল নিয়েছে। আমরা ইতিমধ্যে এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছি।” কংগ্রেসের জেলা সম্পাদক আকাশ মুখোপাধ্যায় বলেন, “ক্ষুদ্র পরিষরে কাজ করলে অনেক ভাল পরিষেবা দেওয়া যায়। কিন্তু, সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাতে নাগরিকদের দুর্ভোগ বাড়বে।” সরাসরি বিরোধিতা না করে এই সিদ্ধান্তের ভাল-মন্দ দিক সময়ের সঙ্গেই বোঝা যাবে বলে দাবি করেছে তৃণমূল। দলের নেতা তথা আসানসোল পুরসভার চেয়ারম্যান জিতেন্দ্র তিওয়ারির দাবি, “প্রশাসক বসানোর অভিজ্ঞতা শহরবাসীর কাছে একেবারে নতুন। তাই ধৈর্য ধরে দেখতে হবে, ঠিক কী হচ্ছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন