বহু দিন পরে বন্ধুদের পুজোর গল্প বলবে সোহম

এক চিলতে ঘরে ঠাসাঠাসি করে বসে নারকেল নাড়ু গড়ছেন জনা আটেক গিন্নি। হাত তো চলছেই, সঙ্গে চলছে জোর আলোচনাচার দিন কী হবে, কখন কী করবেন, কী সাজবেন সব। আর ঘরের বাইরে ব্যস্ত পায়ে পুজোর সাজ-সরঞ্জামের আয়োজনে ঘুরছেন কর্তারা। বড়দের গালগল্পের মাঝে টুকরো-টাকরা মন্তব্য নিয়ে ঢুকে পড়ছে খুদেরাও। এককথায়, ১৫ বছর পরে দুর্গার আবাহনে শোরগোল পড়ে গিয়েছে কাটোয়া সার্কাস ময়দানের সরকারি আবাসনে।

Advertisement

সৌমেন দত্ত

কাটোয়া শেষ আপডেট: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০২:৪১
Share:

নাড়ু গড়তে ব্যস্ত মহিলারা।—নিজস্ব চিত্র।

এক চিলতে ঘরে ঠাসাঠাসি করে বসে নারকেল নাড়ু গড়ছেন জনা আটেক গিন্নি। হাত তো চলছেই, সঙ্গে চলছে জোর আলোচনাচার দিন কী হবে, কখন কী করবেন, কী সাজবেন সব। আর ঘরের বাইরে ব্যস্ত পায়ে পুজোর সাজ-সরঞ্জামের আয়োজনে ঘুরছেন কর্তারা। বড়দের গালগল্পের মাঝে টুকরো-টাকরা মন্তব্য নিয়ে ঢুকে পড়ছে খুদেরাও। এককথায়, ১৫ বছর পরে দুর্গার আবাহনে শোরগোল পড়ে গিয়েছে কাটোয়া সার্কাস ময়দানের সরকারি আবাসনে।

Advertisement

আবাসনের এক খুদে সুপ্রভার কথায়, “পুজো মানে কি শুধু থিম আর আলোর বাহার, পুজো তো সবাই মিলে হৈ চৈ। একসঙ্গে পাত পেড়ে খাওয়া।” বাকিদের হাসিমুখ দেখে বোঝা গেল শুধু সুপ্রভা নয়, সবারই মনের কথা ওটা। আর তাতেই নাওয়া-খাওয়া ভুলে পুজোর আচার-উপকরণ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন আবাসনের মহিলারা। পুরুষেরাও অফিসের ফাঁকে কী ভাবে আবাসন এলাকা সাজানো হবে, কার চাঁদা বাকি সেই ভাবনায় ব্যস্ত। কিন্তু এত বছর পরে পুজোর উদ্যোগ কেন? আবাসন কমিটির সম্পাদক গদাধর মণ্ডল বলেন, “সপ্তাহ দুয়েক আগে আবাসন কমিটির বৈঠকে মহকুমাশাসকের দফতরের কর্মী স্বপন পাল প্রস্তাব দেন দুর্গাপুজো করার। বাকিরাও সঙ্গেসঙ্গেই সায় দেয়। ব্যস, রাত থেকেই আবাসনের তিরিশ ঘরে গিয়ে পুজোর প্রস্তাব দেন কমিটির সদস্যেরা। সবার মত নিয়ে শুরু হয়ে যায় প্রস্তুতি।” আর স্বপনবাবু বলেন, “আমি এই আবাসনের বহু দিনের বাসিন্দা। সেই ১৯৮৯-৯০ সালে পরপর তিন বার পুজো হয়েছিল। বাড়ির গিন্নিরাও চাঁদা তুলেছিলেন। তারপর থেকে মূলত উদ্যোগের অভাবেই পুজো বন্ধ হয়ে যায়।” আবাসনের পুজোয় মেতে বাড়ি যাওয়ার পরিকল্পনাও ভেস্তে দিয়েছেন অনেকে। এখানকার কমিটির সভাপতি স্বপনকুমার দের বাড়ি জলপাইগুড়ি। পুজোর সময় সপরিবারে বাড়ি যাবেন বলে টিকিট কেটে ফেলেছিলেন তিনি। এখন টিকিট বাতিল করে পালবাড়ি গিয়ে মূর্তি গড়ার কাজ দেখছেন। এখানকার বাসিন্দা বাসুদেব সেন বলেন, “পুজোয় বেশিরভাগ পরিবারই চলে যেত। আমরা কয়েক ঘর আবাসনে থাকতাম। মনটা খাঁ খাঁ করত। বাড়ির ছোটরা মুখ গোমড়া করে করে বসে থাকত। তবে এ বারটা আশা করি অন্যরকম কাটবে।” কলকাতার বাসিন্দা জয়ন্তিকা দাস, চন্দ্রা চক্রবর্তীরাও আবাসনের পুজো নিয়েই ব্যস্ত। নাড়ু পাকাতে পাকাতে তাঁরা বলেন, “উপোস করেও ঠিকমত অঞ্জলি দিতে পারতাম না। অন্য পুজোয় গিয়ে কী রকম একটা লাগত! মণ্ডপে বসলে টিটকিরি শুনতে হত। তাই সবসময় চাইতাম আবাসনে পুজো হোক। আমাদের আবদার মেনে পুজোর তিনদিন ফ্লাটগুলিতে অরন্ধন চলবে। কমিটির তরফে নানা পদের রান্না করে এক সঙ্গে পংক্তি ভোজের ব্যবস্থাও করা হয়েছে।” বাসিন্দারাই মেনুও জানালেনসপ্তমীর দুপুরে মাছ, অষ্টমীতে লুচি-ছোলার ডাল, নবমী-দশমীতেও মাছ-মাংসের এলাহি আয়োজন। এর সঙ্গে নাচ-গান-আবৃত্তিতে মণ্ডপ জমিয়ে রাখবেন তাঁরা নিজেরাই। থাকবে বাউল গানেরও ব্যবস্থা। উদ্যোক্তা স্বপন পাল তো এখন থেকেই আগামী বছরের পুজোর কথা ভাবতে বসে গিয়েছেন। স্বপনবাবু বলেন, “এ বার কোনও রকমে শুরু হল। পুজোর পর থেকেই আগামী বছরের জন্য আবাসিকদের কাছ থেকে প্রতি মাসে চাঁদা তুলব। তিল তিল করে জমানো টাকায় তিলোত্তমার আরাধনা হবে।” সব শুনে সপ্তম শ্রেণির সোহম বলে উঠল, “এতদিন পুজোর ছুটির পরে শুধু বন্ধুদের গল্পই শুনতাম, এ বার আমিও গল্প বলব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন