ভাগীরথীতে চর, সমস্যা নৌকা পারাপারে

ভাগীরথীর দু’পাড় থেকে মাটি কাটা, নদী থেকে বালি তোলায় নাব্যতা কমে যাওয়ার অভিযোগ উঠছিলই। তার মধ্যে নদীর কিছু জায়গায় চর জেগে ওঠায় জাহাজ, নৌকা চলাচলেও মুশকিল দেখা দিয়েছে। সমস্যায় পড়েছেন নদী বেয়ে নিত্য কাজে এক জেলা থেকে আরেক জেলায় যাতায়াতকারী হাজারো মানুষ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কালনা শেষ আপডেট: ১৭ অক্টোবর ২০১৪ ০২:১৪
Share:

লাল পতাকা আটকে চিহ্নিত করা হয়েছে চর।—নিজস্ব চিত্র।

ভাগীরথীর দু’পাড় থেকে মাটি কাটা, নদী থেকে বালি তোলায় নাব্যতা কমে যাওয়ার অভিযোগ উঠছিলই। তার মধ্যে নদীর কিছু জায়গায় চর জেগে ওঠায় জাহাজ, নৌকা চলাচলেও মুশকিল দেখা দিয়েছে। সমস্যায় পড়েছেন নদী বেয়ে নিত্য কাজে এক জেলা থেকে আরেক জেলায় যাতায়াতকারী হাজারো মানুষ।

Advertisement

নৌকার মাঝিদেরও দাবি, কালনার বেশ কিছু ঘাট থেকে নদিয়ার দিকে যাতে মুশকিলে পড়ছেন তাঁরা। দাঁড় বেয়ে, লাঠি দিয়ে ঠেলে কোনও রকমে নৌকা চালাতে হচ্ছে। বিপজ্জনক কয়েকটি জায়গায় নদীতে লাল পতাকা পোঁতা হয়েছে বলেও তাঁদের দাবি।

কালনার ফেরিঘাট পেরিয়ে জেলার বহু মানুষই প্রতিদিন চাকরি সূত্রে বা ব্যবসার কাজে নদিয়া যাতায়াত করেন। আবার নদিয়ার নৃসিংহপুর ঘাট পেরিয়েও স্কুল, কলেজ, হাসপাতালের প্রয়োজনে কালনায় আসেন অনেকে। আবার ভারি যানবাহন, ব্যবসার মালপত্র আনা নেওয়া মিলিয়ে প্রতিদিন হাজার দশেক মানুষের জলপথে যাতায়াত লেগে থাকে। কালনা ফেরিঘাট থেকে নদিয়া জেলার দিকে খানিকটা এগোলেই চোখে পড়ে নদীতে বেশ কিছু লাল পতাকা পোঁতা। সেই পতাকার ধার দিয়ে নৌকা বা ভুটভুটি চালাচ্ছেন মাঝিরা। তবে তার মধ্যেও ভিন এলাকার মাছধরা নৌকা বা যাত্রীবাহী নৌকা প্রায়ই চরে আটকে যাওয়ার ঘটনা ঘটছে বলে স্থানীয়দের দাবি। কোনও রকমে লাঠি ও দাঁড় দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিচ্ছেন মাঝিরা। ওই মাঝিদের কথায়, “চর এখনও পুরোপুরি জেগে ওঠেনি। তবে নৌকা চালাতে খুব সমস্যা হচ্ছে।” আবার নৃসিংহপুর ঘাটের কাছাকাছিও এলাকাতেও জলে বালির আস্তরণ দেখা যাচ্ছে। মাঝিদের দাবি, মাসখানেক ধরেই ভাগীরথীতে চর জেগে ওঠার প্রবণতা বাড়ছে। ফেরিঘাট ছাড়াও শহরের মহিষমর্দিনী তলার ঘাট ও হাটকালনা পঞ্চায়েতের নতুনচর এলাকাতেও বড় চর মাথা তুলছে বলে জানা গিয়েছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, নদীতে নৌকা চলাচলের পাশাপাশি বেশ কিছু জাহাজও চলাচল করে। বহু জাহাজই খিদিরপুর ডক থেকে কালনা হয়ে ফরাক্কা যায়। চর দেখা দেওয়ায় সমস্যা হয়েছে সেই সব জাহাজ যাতায়াতেও।

Advertisement

দুশ্চিন্তায় পড়েছেন খেয়াঘাটের ইজারাদারেরাও। তাদের তরফে মান্তা ঘোষ জানান, ঘাট ইজারা নেওয়ার জন্য বছরে ভাল অঙ্কের টাকা দিতে হয় পুরসভাকে। যাত্রীদের পরিষেবা দিয়েই ওই টাকা তোলা হয়। কিন্তু এখন ভাগীরথীর নানা জায়গায় চর জেগে ওঠায় ঘুরপথে চলাচল করছে যাত্রীবাহী নৌকা। ফলে নৌকার মোটর চালাতে বাড়তি তেল পুড়ছে। খরচও বেশি হচ্ছে। তাঁর দাবি, পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে হলে দ্রুত বালি তুলে ফেলতে হবে। তবে এর মধ্যেই কয়েকজন বেআইনি ভাবে বালি তুলে পাচার করার কাজও শুরু করেছে বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি। ভোর হতে না হতেই যন্ত্রের মাধ্যমে দেদার বালি তুলে ট্রাক্টরে নিয়ে পালয়ে যাচ্ছে তারা। পরে ওই বালিবোঝাই ট্রাক্টর কৃষ্ণনগর, রানাঘাট, হবিবপুর, কালনা-সহ নানা জায়গায় চলে যাচ্ছে বলেও জানা গিয়েছে। জমি ভরাট করা-সহ নানা কাজে ব্যবহারও করা হচ্ছে সেই বালি। চর জাগার সঙ্গে ভাগীরথীর দু’পাড়ে দেদার মাটি কাটা চলছে বলেও অভিযোগ জানিয়েছেন এলাকার বাসিন্দারা। লাগাতার মাটি কাটার ফলে দেখা যাচ্ছে ভাঙন। ভাগীরথীতে নিত্য নৌকা চালান কার্তিক বর্মন, অনাথ মাইতিরা। তাঁরা বলেন, “চর থাকায় একাধিক জায়গায় নৌকা আটকে যাচ্ছে। দাঁড় অথবা মোটা লাঠি দিয়ে আটকে যাওয়া নৌকা এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।” তাঁদের দাবি, এমন চলতে থাকলে ভবিষ্যতে জলপথে যাতায়াতই মুশকিল হয়ে পড়বে।

চরের সমস্যার কথা স্বীকার করে নিয়েছে কালনা পুরসভাও। পুরপ্রধান তথা কালনার বিধায়ক বিশ্বজিৎ কুণ্ডু বলেন, “পুরসভার তরফে প্রথমে মহিষমদির্নী ঘাট এলাকার চর কাটার চেষ্টা করা হচ্ছে। পরে অন্যগুলির কাজও করা হবে।” কালনার মহকুমাশাসক সব্যসাচী ঘোষ জানান, বিষয়টি তাঁর জানা নেই। তবে খোঁজ খবর নিয়ে প্রয়োজনে ব্যবস্থা নেবে মহকুমা প্রশাসন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন