চার দিকে যা হিংসা-হানাহানির খবর মিলছে, তাতে ভোট দিতে যেতে আর ভরসা পাচ্ছেন না। ছেলেকে বলছিলেন বৃদ্ধ বাবা। বৃদ্ধের ক্ষোভ, “নিরাপত্তা বলে যেন কিছুই নেই!” অভয় দিল ছেলে, “কী বলছ বাবা! এ বার বুথে বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকবে। একেবারে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা। নিশ্চিন্তে ভোট দেওয়ার ব্যাপারে কোনও চিন্তা নেই।”
কারও বাড়িতে নয়, এই বাবা-ছেলের কথোপকথন শোনা গেল রূপনারায়ণপুর বইমেলা প্রাঙ্গণে। নাটকের মঞ্চে। বেশি সংখ্যায় ভোটারদের বুথে আনতে এ বার নানা কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে। তারই অঙ্গ হিসেবে এই নাটকের মাধ্যমে প্রচারের পরিকল্পনা।
স্থানীয় ইউথ ক্লাবের উদ্যোগে ৫ এপ্রিল থেকে বইমেলা শুরু হয়েছে রূপনারায়ণপুরে। সেখানেই এমন সচেতনতামূলক নাটকের আয়োজন করেছে নির্বাচন কমিশন ও আসানসোল মহকুমা প্রশাসন। শনিবার বইমেলার মাঠে একটি নাট্যদল তা মঞ্চস্থ করল। তাতে বুথে নিরাপত্তা, বয়স্কদের বুথে যাওয়ার ব্যবস্থা থেকে ‘নোটা’, সব কিছু নিয়েই দর্শকদের সচেতন করার ব্যবস্থা ছিল। একটি দৃশ্যে যেমন বৃদ্ধ বাবা ছেলেকে বলছেন, “বয়স হচ্ছে, ঠিক মতো হাঁটতে পারি না। অত দূর হেঁটে যাওয়া, তার পরে সিড়ি ভেঙে বুথে ঢোকা। এতো ঝক্কি-ঝামেলা কি এই বয়সে সম্ভব?” এ বারও ছেলে মুশকিল আসানের উপায় দিলেন, “অত চিন্তা কর না বাবা। বয়স্কদের বুথে যাওয়ার জন্য গাড়ির ব্যবস্থা করছে কমিশন। তা ছাড়া ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে হুইল চেয়ার থাকবে। নিরাপত্তারক্ষীরাই তোমাকে দরকার হলে হুইল চেয়ারে করে বুথে নিয়ে যাবে।”
অন্য একটি দৃশ্যে আবার বৃদ্ধ বলছেন, “না রে খোকা, এ বার আমার কেন্দ্রে ঠিক কাউকেই পছন্দ হচ্ছে না। কী হবে খামোকা বুথে গিয়ে। কাউকেই তো ভোট দেওয়ার ইচ্ছা নেই!” ছেলে কিন্তু বাবাকে বুথে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে নাছোড়। সে বলে, “বাবা, তুমি দেখছি কোনও খবরই রাখ না। জান না। এ বার নির্বাচন কমিশন ‘না ভোট’-এর ব্যবস্থা করেছে। তোমার যদি কোনও প্রার্থীই পছন্দ না হয় তবে ‘না ভোট’ বোতাম টিপে অপছন্দের কথা জানাতে পার।”
নাটক মঞ্চস্থ হওয়ার সময়ে হাজির ছিলেন সালানপুরের যুগ্ম বিডিও রত্নদীপ পাল। আসানসোলের মহকুমাশাসক অমিতাভ দাস জানান, নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে বেশি সংখ্যক ভোটার স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে যাতে বুথে আসেন, তার প্রক্রিয়া হিসেবে এই উদ্যোগ হয়েছে। তাঁর মতে, সাধারণ মানুষের চোখের সামনে ঘটনাপ্রবাহের দৃশ্য তুলে ধরলে তা অনেক বেশি আকর্ষক ও সহজবোধ্য হয়। তিনি বলেন, “বইমেলার মাঠে অনেক ধরনের মানুষ আসেন। অনেক ভিড়ও হয়। তাই এই মঞ্চটিকে বেছে নেওয়া হয়েছে।” তিনি জানান, এলাকার জনবহুল এলাকাতেও এ ভাবে প্রচার করা হবে।