এই রাখিই কিনছেন তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকেরা। —নিজস্ব চিত্র।
সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিতে এ বার রাখির ফ্যাশানেও আধুনিকতার ছোঁয়া আনলেন কালনার শিল্পীরা। তাঁদের কথায়, ব্রেসলেটের ধাঁচে তৈরি এই রাখির চাহিদা সবচেয়ে বেশি। এ ছাড়া বাজারে ছেয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি দেওয়া রাখিতেও।
রাখি প্রস্তুতকারকরা জানান, অল্প জায়গার মধ্যে সূক্ষ্ম নকশা করা হয়েছে ব্রেসলেট ধাঁচের রাখিতে। রয়েছে রঙিন চিনে পাথর, পুঁতি, চুমকি ও রঙিন কাগজের কাজ। ডজন প্রতি ২৪ থেকে ৯৬ টাকা পর্যন্ত দরে বিকোচ্ছে এই রাখি। সারা বাংলা রাখি ইউনিয়নের সদস্য পার্থপ্রতিম দেবনাথের দাবি, ‘‘ এ বার ব্রেসলেট রাখিই ক্রেতাদের প্রথম পছন্দ।’’ ব্রেসলেট রাখি বেশ টেকসই বলেও মত রাখি ব্যবসায়ীদের। সপ্তাহ খানেকের বেশি সময় হাতে রাখা যাবে। রোদ, জলও সইতেও এ রাখির জুড়ি মেলা ভার বলে দাবি পার্থপ্রতিমবাবুর।
হঠাৎ করে এমন রাখির পরিকল্পনা নেওয়া হল কেন? রাখি প্রস্তুতকারকরা জানান, এক সময় রঙিন কাগজের উপর স্পঞ্জ, আঠা ও চুমকি বসানো বড় রাখির কদর বেশি ছিল ক্রেতাদের কাছে। নাগরিক রুচির সঙ্গে তাল মেলাতেই ব্রেসলেট রাখি তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়।
কালনা ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকা প্রায় চার দশক ধরে রাখি শিল্পে ক্রেতাদের নজর কেড়ে আসছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, শহরের মধ্যে দু’টি বড় ও বেশ কয়েকটি ছোট রাখি তৈরির কোম্পানি রয়েছে। কারখানায় গিয়ে জানা গেল, বছরে মূলত একদিনের জন্য রাখির চাহিদা থাকে। কিন্তু তার জন্য বছরভর কাজ চলে। কালনার রাখি পাড়ি দেয় দিল্লি, অন্ধ্রপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ, বিহার, ওড়িশা-সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। উৎসবের মাস তিনেক আগে থেকেই কলকাতা, দার্জিলিং, মালদহ, খড়্গপুরের বিভিন্ন বাজারেও কালনার রাখি পৌঁছে যায়।
রাখি কী ভাবে তৈরি হয়? জানা গেল, রাখির কারখানাগুলি অধিকাংশই শহরে রয়েছে। কিন্তু তাদের বিভিন্ন এজেন্ট কারখানা থেকে ভেলভেট, চুমকি, আঠা, কাগজ, পুঁতি, সুতো, পাথর গ্রামে গিয়ে অর্থনৈতিক ভাবে পিছিয়ে পড়ে মহিলাদের হাতে দেন। সঙ্গে দেওয়া হয় নকশাও। হাজার প্রতি রাখিতে মেলে মজুরি। রাখি প্রস্তুকারকরা জানান, ভিন রাজ্যের ক্রেতাদের আগে থেকেই নকশা দেখানো হয়। অনেকে কারখানা থেকেও রাখি কেনেন।
তবে এ বার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবিওয়ালা রাখি কিনতে উৎসাহী তৃণমূল সদস্য, কর্মীদের লাইন চোখে পড়ার মতো। বছর খানেক ধরেই কালনায় ঢোকার মুখে রাখি উৎসব পালন করেন তাঁরা। পথচলতি মানুষকেও রাখি পরিয়ে দেওয়ার রেওয়াজ রয়েছে শাসক দলের। কালনার হাটকালনা অঞ্চলের রাখি উৎসব কমিটির তরফে বাপ্পা মজুমদার বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর ছবিওয়ালা রাখির চাহিদা এতটাই বেশি যে যোগান নিয়ে সমস্যা হচ্ছে।’’ সব মিলিয়ে রাখি উৎসবকে মমতাময় করে তুলতে কোনও খামতি রাখতে চাইছেন না তৃণমূল নেতা, কর্মীরা। নদিয়ার একাংশেও মুখ্যমন্ত্রীর ছবি দেওয়া রাখির চাহিদা রয়েছে। রাখি নিয়ে উৎসাহী মন্ত্রী স্বপন দেবনাথও। তিনি বলেন, ‘‘বিদেশেও বাজার তৈরি করতে কালনার রাখিকে বিশ্ব বাংলা হাটে রাখার কথা ভাবা হয়েছে। ’’